গঙ্গারামপুর, 27 জুন: দিনটা ছিল 4 জুন ৷ মোবাইল কেনার জন্য মায়ের কাছে 25 হাজার টাকা চেয়েছিল দীপঙ্কর ৷ মা গোলাপী দেবী 10 হাজার টাকা দিতে পারবেন বলে ছেলেকে জানিয়েছিলেন ৷ কিন্তু তাতে মন গলেনি একাদশের পড়ুয়ার ৷ আর্থিক অবস্থার কথা বিন্দুমাত্র ভাবেনি নাবালক দীপঙ্কর ৷ রাগে-অভিমানে মায়ের এই কথার পরই দোকান থেকে বিষ কিনে এনে খেয়ে নেয় সে ৷ তারপর বিষ খাওয়ার কথা পরিবারকে জানায় ৷ তড়িঘড়ি গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে দীপঙ্করকে ভর্তি করা হয় ৷ অবস্থার অবনতি হওয়ায় 6 জুন দীপঙ্করকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ৷ সেখানে 22 দিন লড়াইয়ের পর বুধবার মৃত্যু হয় তার ৷ খবর পেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা-মা ও পরিবার ৷
বছর সতেরোর কিশোর দীপঙ্কর তরফদারের বাড়ি গঙ্গারামপুর ব্লকের নন্দনপুর এলাকায় ৷ স্থানীয় ঠ্যাঙাপাড়া হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত ৷ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন আগে বাবা-মার কাছে দামি মোবাইলের বায়না করেছিল দীপঙ্কর ৷ আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে ছেলেকে তুলনায় কম দামের মোবাইল দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তাঁরা ৷ তবে তা দীপঙ্করের মনঃপূত হয়নি ৷ তাই 4 জুন ঠ্যাঙাপাড়া এলাকার একটি সারের দোকান থেকে বিষ কিনে খায় সে ৷ বাড়ি ফিরে তা জানায়ও দীপঙ্কর ৷ এরপর দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও 22 দিনের মাথায় মৃত্যু হয় দীপঙ্করের ৷
ফোনে প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়া! অভিমানে আত্মঘাতী নাবালিকা পড়ুয়া
এই বিষয়ে মৃত কিশোরের মা গোলাপি তরফদার বলেন, "মোবাইল কেনার জন্য 25 হাজার টাকা চেয়েছিল ৷ আমি বলেছিলাম দশ হাজার টাকা দিতে পারব । সেই কারণে ঠ্যাঙাপাড়া থেকে বিষ কিনে এনে খেয়ে নেয় ৷ বাড়িতে ঢোকার পরে আমাদেরকে জানায় সে কথা । আমরা সঙ্গে সঙ্গে গঙ্গারামপুর হাসপাতালে নিয়ে যাই ৷ এরপরে মালদা রেফার করলে সেখানে মারা যায় ।"
দামি মোবাইল কিনতে না পারায় পড়ুয়ার আত্মহত্যা নিয়ে গঙ্গারামপুর মহকুমার পুলিশ আধিকারিক দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "গঙ্গারামপুর থানার নন্দনপুর এলাকার এক ছাত্র মোবাইল কেনার জন্য তার মায়ের কাছে মোবাইল চেয়েছিল ৷ কিন্তু তার মা মোবাইল দিতে না পারায় বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত ৷ কারণ এই যুবসমাজ মোবাইলের প্রতি কী প্রচণ্ড আসক্ত ৷ গঙ্গারামপুর মহকুমা এলাকাজুড়ে ছাত্ররা যেন মোবাইলে প্রতি আসক্ত কম হয়, সেই জন্য বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে গিয়ে সচেতনতার বার্তা দেব আমরা ।"
এই ঘটনায় প্রতিবেশী সুনীল সরকার বলেন, "দরিদ্র পরিবারের ছেলে এমন ঘটনা করবে ভাবা যায়নি । সামান্য মোবাইলের জন্য বিষ খেয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় আমরা খুবই চিন্তিত । ভবিষ্যতে এরকম কাজ যেন কেউ না করে ।"
আত্মহত্যা কোনও সমাধান নয়
(যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনও বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যে কোনও সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে। টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল 8টা থেকে রাত 10টার মধ্যে ৷)