কলকাতা, 2 ডিসেম্বর: বাংলাদেশ থেকে বেআইনিভাবে ভারত তথা এ রাজ্যে ঢোকা সেলিম মাতব্বর কি কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ? তাঁর কার কার সঙ্গে কথা হতো ? তদন্তে নেমে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা ।
তবে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সেলিমের গ্রেফতারির পর থেকেই তাঁর ব্যবহৃত মোবাইলটি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ । সূত্রের খবর, তাঁকে সেই ফোনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলেও এই বিষয়ে তিনি তদন্তকারীদের কোনও প্রকারের সাহায্য করছেন না । ফলে এক্ষেত্রে তাঁর ব্যবহৃত ফোন এবং অন্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস গোয়েন্দাদের হাতে আসা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে ।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের এসটিএফের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইটিভি ভারতকে বলেন, "এক ব্যক্তি গত দু'বছর ধরে অন্য দেশ থেকে ভারতে এসে হোটেল পরিবর্তন করে করে থাকত । সে এই দেশে এসে নকল একাধিক পরিচয়পত্র বানিয়ে নিল । আর তার নেপথ্যে কোনও রহস্য নেই, এমনটা হতে পারে না ।"
এখানে যে সকল প্রশ্নগুলি গোয়েন্দাদের ভাবাচ্ছে তা হল, কেন ওই ব্যক্তি এ দেশে এলেন ? কী প্রয়োজনে তিনি নকল পরিচয়পত্র বানালেন ? তাঁর পূর্ব পরিচিত কোনও ব্যক্তি এই ঘটনায় যুক্ত আছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন । জেরায় একেবারেই মুখ খুলছে না সেলিম । এমনটাই অভিযোগ কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দাদের ।
এই ঘটনার তদন্তকারীদের মত, সেলিমের ব্যবহৃত মোবাইলটি উদ্ধার করা অত্যন্ত জরুরি । কারণ তিনি ভারতে এসে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন? তাঁর কার কার সঙ্গে কথা হতো? তিনি এই দেশ তথা কলকাতার কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা চিত্র অন্যত্র পাচার করেছে কি না, সেই বিষয়টিও জানা প্রয়োজন ।
প্রশ্ন হল, সেলিম মাতব্বর গত দু'বছর ধরে একাধিক হোটেল পরিবর্তন করে থাকতেন, তাঁর টাকার উৎস কী ? সেটা কি কোনও জঙ্গি সংগঠনের দ্বারা ফান্ডিং হতো ? সেটিও দেখার বিষয় বলে জানা গিয়েছে ।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় এসে জাল পাসপোর্ট বানিয়ে হোটেলে থাকার অভিযোগে গত শুক্রবার এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পার্কস্ট্রিট থানার পুলিশ । সেই ধৃতের নামই সেলিম মাতব্বর । তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এবার এসটিএফের গোয়েন্দারা সেলিমকে জেরা করছেন বলে জানা গিয়েছে ।
অভিযোগ, গত 2023 সালে নদিয়া জেলার সীমান্ত থেকে বেআইনিভাবে পার হয়ে সেলিম মাতব্বর বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসেন । পরে উত্তর 24 পরগনা জেলার এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি নকল দু’টি আধার কার্ড বানান । পাশাপাশি একটি পাসপোর্টও বানান বলে অভিযোগ । সেই পাসপোর্টটি নকল । সংশ্লিষ্ট পাসপোর্টে নাম রয়েছে রবি শর্মার । ঠিকানা লেখা রাজস্থান । ওই রবি শর্মা আদতে সেলিম মাতব্বর ৷
এই বাংলাদেশি ব্যক্তি বাংলাদেশের বিএনপি দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে । তবে পুলিশকে জেরায় তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয় এবং তিনি দল ছেড়ে দেন । পরে দেশ ছেড়ে চোরা পথে তিনি ভারতে ঢুকে কলকাতায় চলে আসেন ।
অন্যদিকে অশান্ত বাংলাদেশ ৷ ওপার বাংলার পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছে লালবাজার । ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর জন্য একাধিক জঙ্গি সংগঠনগুলি একত্রিত হয়েছে বলে খবর পেয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ । এই অবস্থায় নগরপাল মনোজকুমার ভার্মা কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছেন, চোরাপথে বেআইনি কার্যকলাপের উপর যেন তারা নজর রাখে ।
লালবাজারের তরফে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গভীর রাতে পার্কস্ট্রিটের ওই হোটেলে তল্লাশি অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশ । পরে সেলিম মাতব্বরকে আটক করে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার তাঁকে গ্রেফতার করা হয় । তাঁর কাছ থেকে একাধিক নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে । এই ব্যক্তির সঙ্গে কোনও আন্তর্জাতিক অপরাধ বা অপরাধী দলের যোগ রয়েছে কি না, সেই বিষয়টিও ভালোভাবে খতিয়ে দেখছেন এসটিএফের গোয়েন্দারা ।