ETV Bharat / state

বিষক্রিয়ায় মৃত্যু ঠেকাতে উদ্যোগ, রাজ্যে প্রথম পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার 2 মেডিক্যাল কলেজে - POISON INFORMATION CENTRE

সাপের কামড় ও বিষক্রিয়া থেকে মৃত্যু রোধে গবেষণা ৷ সচেতনতার কাজও করবে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার ৷

POISON INFORMATION CENTER
রাজ্যের প্রথম পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার কলকাতা ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ৷ (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 29, 2025, 5:27 PM IST

Updated : Jan 29, 2025, 5:58 PM IST

দার্জিলিং, 29 জানুয়ারি: বিভিন্ন বিষক্রিয়ার চিকিৎসা পরিষেবা আরও উন্নত করার সুযোগ পেল কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ এ নিয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ৷ যেখানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের প্রথম দু’টি পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে দক্ষিণের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং উত্তরের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে ৷

গত বছর ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রক দেশের 50টি মেডিক্যাল কলেজে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে ৷ সেই তালিকায় এরাজ্যের কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম রয়েছে ৷

Poison Information Center
স্বাস্থ্য ভবনের তরফে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরি নিয়ে জারি করা নির্দেশিকা ৷ (ইটিভি ভারত)

এ নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, সাপ বা অন্য যে কোনও বিষধর জীবজন্তুর কামড় থেকে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় 90 শতাংশকে দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসায় মৃত্যু হয় ৷ এর পিছনে ঝাড়ফুঁকের মতো অন্ধবিশ্বাস মূলত দায়ী ৷ সেই কারণে রাজ্যের এই দুই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তৈরি হওয়া পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার কাজ করবে ৷

চলতি মাসের 24 জানুয়ারি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ৷ সেখানে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে প্রক্রিয়া অনুযায়ী, দুই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার গড়ার কথা জানানো হয়েছে ৷ পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরি হওয়ার পর সেখান থেকে মানুষকে সচেতন করা এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে ৷ সেই সঙ্গে টেলি মেডিসিনের ব্যবস্থাও থাকবে সেন্টারে ৷

Poison Information Center
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগ ৷ (ইটিভি ভারত)

এর পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের বিষ ও তার প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করা হবে ৷ অর্থাৎ, বিভিন্ন বিষের রকমফের বুঝে সেইমতো ওষুধ আবিষ্কার করবেন পয়জন ইনফরমেশন সেন্টারের গবেষকরা ৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে সর্বাধিক প্রচারের ব্যবস্থাও থাকবে ৷ সব মিলিয়ে বিষক্রিয়ায় মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷

কিন্তু, পরিকাঠামোর অভাবে কোথাও বিষের প্রকারভেদ করা, প্রাথমিকভাবে রোগী এলে বিষ চিহ্নিত করার সুযোগ ছিল না ৷ এমনকি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ফরেন্সিক বিভাগে 2015 সাল থেকে বিষ চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হলেও পরিকাঠামোর অভাবে, তা বেশিদিন চলতে পারেনি ৷

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান রাজীব প্রসাদ বলেছেন, "আমরা বিষক্রিয়ায় মৃত্যু আটকাতে অনেক আগেই কাজ শুরু করেছিলাম ৷ কিন্তু, পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা ছিল ৷ এবার এই অনুমোদন আসায় আধুনিক ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করে, আরও অধ্যাপক চিকিৎসক দেওয়া হবে ৷ অনেক বড় এলাকা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে ৷"

হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "পিডিয়াট্রিক, মেডিসিন, নেফ্রোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও চিকিৎসকদের দিয়ে একটি এক্সপার্ট কমিটি তৈরি করা হবে ৷ তাঁরাই মূলত এই ইনফরমেশন সেন্টারে কাজ করবেন ৷"

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গেই প্রতি মাসে 250-300 বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে ৷ এর মধ্যে 30-40 শতাংশ সাপের কামড়ের ঘটনা ৷ মোট বিষক্রিয়ার 70 শতাংশের বেশি হয় গ্রামাঞ্চলে ৷ এর বাইরেও এমন প্রচুর ঘটনা ঘটে যেখানে রাসায়নিক খেয়ে প্রাণহানি বা সেই চেষ্টা হয় ৷ যেগুলি প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসা হয় না ৷

বিষক্রিয়ার ঘটনায় আক্রান্তকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রয়োজন ৷ কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অনেকটাই দেরি হয়ে যায় ৷ সব জায়গায় দ্রুত বিষ চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা না-থাকায়, একাধিক রেফারের ঘটনা ঘটে ৷ ফলে সঠিক চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই রোগী মারা যায় ৷ মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে টক্সিকোলজির পাঠ দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, তা খুব একটা কার্যকর হয় না ৷ যাতে এই ধরনের ঘটনায় রাশ টানা যায়, তার জন্য এই ইনফরমেশন সেন্টার তৈরি করা হবে ৷

দার্জিলিং, 29 জানুয়ারি: বিভিন্ন বিষক্রিয়ার চিকিৎসা পরিষেবা আরও উন্নত করার সুযোগ পেল কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ এ নিয়ে সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ৷ যেখানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের প্রথম দু’টি পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরির ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে দক্ষিণের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং উত্তরের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজকে ৷

গত বছর ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রক দেশের 50টি মেডিক্যাল কলেজে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে ৷ সেই তালিকায় এরাজ্যের কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম রয়েছে ৷

Poison Information Center
স্বাস্থ্য ভবনের তরফে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরি নিয়ে জারি করা নির্দেশিকা ৷ (ইটিভি ভারত)

এ নিয়ে স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, সাপ বা অন্য যে কোনও বিষধর জীবজন্তুর কামড় থেকে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় 90 শতাংশকে দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসায় মৃত্যু হয় ৷ এর পিছনে ঝাড়ফুঁকের মতো অন্ধবিশ্বাস মূলত দায়ী ৷ সেই কারণে রাজ্যের এই দুই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তৈরি হওয়া পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার কাজ করবে ৷

চলতি মাসের 24 জানুয়ারি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ৷ সেখানে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে প্রক্রিয়া অনুযায়ী, দুই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার গড়ার কথা জানানো হয়েছে ৷ পয়জন ইনফরমেশন সেন্টার তৈরি হওয়ার পর সেখান থেকে মানুষকে সচেতন করা এবং বিভিন্ন হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে ৷ সেই সঙ্গে টেলি মেডিসিনের ব্যবস্থাও থাকবে সেন্টারে ৷

Poison Information Center
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগ ৷ (ইটিভি ভারত)

এর পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের বিষ ও তার প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করা হবে ৷ অর্থাৎ, বিভিন্ন বিষের রকমফের বুঝে সেইমতো ওষুধ আবিষ্কার করবেন পয়জন ইনফরমেশন সেন্টারের গবেষকরা ৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্প অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে সর্বাধিক প্রচারের ব্যবস্থাও থাকবে ৷ সব মিলিয়ে বিষক্রিয়ায় মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ হতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ৷

কিন্তু, পরিকাঠামোর অভাবে কোথাও বিষের প্রকারভেদ করা, প্রাথমিকভাবে রোগী এলে বিষ চিহ্নিত করার সুযোগ ছিল না ৷ এমনকি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ফরেন্সিক বিভাগে 2015 সাল থেকে বিষ চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হলেও পরিকাঠামোর অভাবে, তা বেশিদিন চলতে পারেনি ৷

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান রাজীব প্রসাদ বলেছেন, "আমরা বিষক্রিয়ায় মৃত্যু আটকাতে অনেক আগেই কাজ শুরু করেছিলাম ৷ কিন্তু, পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা ছিল ৷ এবার এই অনুমোদন আসায় আধুনিক ল্যাবরেটরি থেকে শুরু করে, আরও অধ্যাপক চিকিৎসক দেওয়া হবে ৷ অনেক বড় এলাকা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে ৷"

হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "পিডিয়াট্রিক, মেডিসিন, নেফ্রোলজি, কমিউনিটি মেডিসিন-সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ও চিকিৎসকদের দিয়ে একটি এক্সপার্ট কমিটি তৈরি করা হবে ৷ তাঁরাই মূলত এই ইনফরমেশন সেন্টারে কাজ করবেন ৷"

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গেই প্রতি মাসে 250-300 বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটে ৷ এর মধ্যে 30-40 শতাংশ সাপের কামড়ের ঘটনা ৷ মোট বিষক্রিয়ার 70 শতাংশের বেশি হয় গ্রামাঞ্চলে ৷ এর বাইরেও এমন প্রচুর ঘটনা ঘটে যেখানে রাসায়নিক খেয়ে প্রাণহানি বা সেই চেষ্টা হয় ৷ যেগুলি প্রশাসনের নজরে নিয়ে আসা হয় না ৷

বিষক্রিয়ার ঘটনায় আক্রান্তকে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসা প্রয়োজন ৷ কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অনেকটাই দেরি হয়ে যায় ৷ সব জায়গায় দ্রুত বিষ চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা না-থাকায়, একাধিক রেফারের ঘটনা ঘটে ৷ ফলে সঠিক চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই রোগী মারা যায় ৷ মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে টক্সিকোলজির পাঠ দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, তা খুব একটা কার্যকর হয় না ৷ যাতে এই ধরনের ঘটনায় রাশ টানা যায়, তার জন্য এই ইনফরমেশন সেন্টার তৈরি করা হবে ৷

Last Updated : Jan 29, 2025, 5:58 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.