জলপাইগুড়ি, 25 জুন: বিধ্বংসী বন্যায় পলির স্তর জমা হয়ে তিস্তার নদীবক্ষ উঁচু হয়ে গিয়েছে । সেই কারণে অবিলম্বে ড্রেজিং করার উদ্যোগ নিল সেচ দফতর । আর এজন্য খরচ হচ্ছে প্রায় 500 কোটি টাকা । পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের অন্যান্য বিপজ্জনক নদীগুলিতেও ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেচ দফতর ।
সেচ দফতরের উত্তর-পূর্বের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, "সিকিমের বিধ্বংসী বন্যার ফলে তিস্তা নদীর বেড উঁচু হয়ে গিয়েছে । প্রায় দেড় মিটার তিস্তার রিভারবেড উঁচু হয়ে গিয়েছে । আমাদের কাছে এটা খুবই চিন্তার বিষয় । খুব তাড়াতাড়ি তিস্তা নদীর ড্রেজিং করতে হবে ।"
গত বছর চার অক্টোবর সিকিমে হড়পা বানের ফলে তিস্তার নদীবক্ষ ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গিয়েছে । প্রায় দেড় মিটার উঁচু হয়ে গিয়েছে নদীর খাত ৷ যা নিয়ে উদ্বিগ্ন সেচ দফতর । তিস্তার অনেক বাঁধ নিচু হয়ে গিয়েছে । হড়পা বানের টানে জলের স্রোত সিকিম থেকে বালি, পাথর, কাদা বয়ে এনেছে তিস্তার বুকে ৷ যার ফলে তিস্তার নদীবক্ষ উঁচু হয়ে গিয়েছে । অবিলম্বে সেখানে ড্রেজিং করা না-হলে তিস্তার গতিপথ পালটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ এছাড়াও সিকিমে ফের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে গত বছরের মতো বিধ্বংসী বন্যা হওয়ারও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ৷
তবে শুধু তিস্তা নয়, উত্তরবঙ্গের অনেক নদী আছে যেগুলির নদীবক্ষ উঁচু হয়ে গিয়েছে । সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তা নদী ছাড়াও আলিপুরদুয়ারের জয়ন্তী, বাসরা, পানা, তোর্ষা, রায়ডাক নদীতেও ড্রেজিং করার উদ্যোগ নিয়েছে সেচ দফতর । কৃষ্ণেন্দু ভৌমিকের কথায়, "আমরা তিস্তা নদী-সহ শিলিগুড়ির পাশে রোহিণী, বাসরা, রায়ডাক, পানা, জয়ন্তী, তোর্ষা নদীকে চিহ্নিত করেছি । যে সব নদীর ড্রেজিং করা খুবই দরকার । ডিপিআর করা হয়েছে । আমরা বিস্তারিত তথ্য দফতরের কাছে তুলে ধরব । বর্ষাকালে এটা করা সম্ভব নয় । দফতরের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে ।"
এবিষয়ে তিনি আরও জানান, "আমরা চিহ্নিত করেছি, যেখানে জল আসত না এখন জল চলে আসছে । রিভারবেড থেকে গ্রামের উচ্চতা কমে গিয়েছে । বিপজ্জনক অবস্থায় আছে কয়েকটি জায়গা । যেমন তিস্তা নদীর পাশে লালটং বস্তি, দক্ষিণ চ্যাংমারি, বাকালি এলাকা থেকে জল নামছেই না । পুকুরের মতো হয়ে গিয়েছে ৷ আমাদের ভাবনাচিন্তা আছে । যে সব জায়গায় স্কিম ছিল সব করা হচ্ছে । ড্রেজিংটা খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে । আজ চাইলে আজই হবে না । তিস্তা নদীর ড্রেজিংয়ের জন্য 500-600 টাকা খরচ হবে ৷ ইতিমধ্যেই আমরা তিস্তা নদীতে সার্ভে করছি । বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনাও করছি । তিস্তার অনেক বাঁধ নিচু হয়ে গিয়েছে ৷ সেগুলি নিয়েও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হচ্ছে ।"
সেচ দফতরের আধিকারিক জানিয়েছেন, গত বছর সিকিমের বন্যার পর 106 কোটি টাকার কাজ চলছে । তবে তিস্তা নদী নিয়ে উদ্বেগে আছে দফতর । তাঁর মতে, তিস্তা নদীর বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে । বন্যার পর তিস্তা নদীর গতি প্রকৃতি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে । কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক জানান, "তিস্তা নদী নিয়ে রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিপোর্ট চলে এসেছে । আমরা রিপোর্ট পর্যালোচনা করছি । তারপরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করতে হবে । কিন্তু এটা দীর্ঘমেয়াদি কাজ । কারণ কোথায় কতটা ড্রেজিং করতে হবে, কীভাবে করতে হবে, সেবিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত নিতে হবে । নাহলে হিতে বিপরীত হবে ।"