কলকাতা, 21 এপ্রিল: সোমবার এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ লোকসভা ভোটচলাকালীন এই রায় অস্বস্তি বাড়াতে পারে শাসকদলের ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক মন্ত্রী ও নেতা এই মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলবন্দি ৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভোটের ময়দানে নিঃসন্দেহে তা থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা করবে গেরুয়া শিবির ৷ উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে তৃণমূল কংগ্রেস কী পদক্ষেপ করে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে ৷
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে 2016 সালে রাজ্যে সরকারি স্কুলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্ত করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ৷ এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ৷ তিনি ছাড়াও জেলবন্দি শাসকদলের নানা হেভিওয়েট ব্যক্তিত্ব ৷ নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদে নিয়োগের পাশাপাশি স্টেট লেভেল সিলেকশন টেস্ট 2016 (এসএলএসটি)-এর মাধ্যমে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি-এর নিয়োগেও দুর্নীতি হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই মামলায় অনেক অযোগ্য শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ রাজ্য সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ গত 9 নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কলকাতা হাইকোর্টে গঠিত হয় বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি শাব্বার রাশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। সেখানে এসএসসি মামলার শুনানি শুরু হয় গত ডিসেম্বর মাস থেকে । ছয় মাসের মধ্যে মামলার প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত । মামলাকারী, তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ-সহ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানিয়েছিলেন, রায়দানের পর সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকবে ।
মামলাকারীদের পক্ষ থেকে আদালতে তথ্য দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল তৈরির একাধিক নথি জমা দেওয়া হয় । নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গোটা সিস্টেমটাই দুর্নীতিতে ভরা বলে দাবি করেন মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য । তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সুপার নিউমুরারি পোস্ট (অতিরিক্ত) পদ তৈরি করে বেআইনিভাবে চাকরিপ্রাপ্তদের স্বার্থ রক্ষা করতে চেয়েছে রাজ্য ৷ প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে সেই বিশেষ বেঞ্চে মামলাগুলির শুনানি হয় ৷ তা শেষ হয়েছে গত 20 মার্চ ৷ তারপর রায়দান স্থগিত রেখেছিল আদালত ৷ শুক্রবার ঘোষণা করা হয় যে, সোমবার এই মামলার রায়দান করবে আদালত ৷ সোমবার সকাল 10.30টায় 24 হাজারেরও বেশি নিয়োগ নিয়ে প্রায় 350টি মামলার রায় ঘোষণা করবেন বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও মহম্মদ শাব্বির রশিদির ডিভিশন বেঞ্চ ৷
নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঠিক মূল্যায়ন করা বা পুনর্মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিতে পারে আদালত । নইলে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি রয়েছে তাকে মান্যতা দিয়ে মামলার পরবর্তীকালে যে আবেদনগুলি জমা পড়েছে তা বাতিল করা হতে পারে ৷ আবার সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুনভাবে নিয়োগের নির্দেশও দেওয়া হতে পারে । স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফেও সেই প্রস্তাব আদালতে দেওয়া হয়েছিল ।
দীর্ঘ শুনানির পর সোমবার হতে চলেছে রায়দান ৷ তাও এমন একটা সময়ে যখন দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে ৷ গত শুক্রবারই ছিল লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ ৷ রাজ্যের উত্তরের তিন জেলা কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে ৷ এখনও বাকি 6 দফা ৷ আগামী 26 এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ দার্জিলিং, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটে ৷ ফলে এই সময়টায় এসএসসি দুর্নীতির রায় ঘোষণা হওয়ায় তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ সব দলের জন্য ৷ এই রায়দানকে হাতিয়ার করেই ভোটের আসরে শাসকদলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছে বিরোধীরা ৷ শাসকদলও নিঃসন্দেহে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পথ ভেবে রেখেছে ৷ ভোট রাজনীতিতে এই রায় মানুষের উপর আদেও প্রভাব ফেলে কি না, তা বোঝা যাবে 4 জুন ৷
আরও পড়ুন: