শিলিগুড়ি, 11 ফেব্রুয়ারি: করোনার পরবর্তী সময়ে একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে ভুটানের পর্যটন শিল্প। করোনা পরবর্তী সময়ে শৈলশহর দার্জিলিং, কালিম্পং তথা উত্তরবঙ্গে ও সিকিমের পাশাপাশি নেপালের পর্যটন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলেও এখনও পর্যন্ত খরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি ভুটান । বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি ভারতীয় পর্যটকদেরও ভুটানে আনাগোনা তলানিতে ঠেকেছে । তার উপর ভারত-বাদে বিদেশি পর্যটকের উপর 100 ডলার পর্যটন কর বসিয়েছে ভুটান সরকার । এতে আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে ভুটানের পর্যটন শিল্পে ।
এমত অবস্থায় ভারতীয় পর্যটকরা যাতে ফের ভুটানমুখী হয় সেই উদ্যোগ নিল দু’দেশের পর্যটনমহল । সেই লক্ষ্যে সোম ও মঙ্গলবার শিলিগুড়িতে দু’দেশের পর্যটন মন্ত্রকের সহযোগিতায় এক ইন্দো-ভুটান ফ্রেন্ডশিপ মিটের আয়োজন হয় । সেই বৈঠকেই পর্যটক বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন ধর্ম, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, ব্যবসা ও শিল্পক্ষেত্রে ভারতীয় ও ভুটানের নাগরিকরা যাতে ফের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে সীমান্ত পারাপার শুরু করেন, সেই বিষয়টি তুলে ধরা হয় । আগামিতে বাংলা, নেপাল ও ভুটানকে যাতে একটি ট্যুরিজম সার্কিটের আওতায় আনা যায় সেই বিষয়েও এদিন আলোচনা হয় ।
এদিন শিলিগুড়িতে ওই ফ্রেন্ডশিপ মিটে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের সম্পাদক রাজ বসু, ভুটান ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি গ্যাসো সোনাম তোগবে, সেক্রেটারি জেনারেল দাসো থিনলে দরজি, ইন্দো-ভুটান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিবেক বেইদ-সহ অন্যান্যরা ।
![Special Meeting to revive Tourism in Bhutan](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/11-02-2025/wb-slg-03-exclusive-bhutan-tourism-7209673_11022025153916_1102f_1739268556_851.jpg)
উত্তরে প্রতি বছর প্রায় 7 থেকে 7.5 লক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে । করোনার আগে তারমধ্যে 20-30 হাজার পর্যটক নেপালে ও 30-35 হাজার পর্যটকরা ভুটানে যেত । কিন্তু করোনার পর সংখ্যাটা একদম কমে 5-10 হাজারে নেমে এসেছে । ফের কীভাবে পর্যটকদের আবার ভুটানমুখী করা যায়, তা নিয়ে এদিন আলোচনা শুরু হয় ।
এদিনের এই বৈঠকে মূলত জানানো হয় যে, প্রত্যেক ভুটানের নাগরিকের কাছে ভারত একটি আধ্যাত্মিক জায়গা । দু’দেশের পর্যটন সংস্থাকেই ভারত ও ভুটানের বৌদ্ধ ধর্মস্থানগুলিকে তুলে ধরতে হবে । পাশাপাশি দু'দেশেরই লোকসংস্কৃতি পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে আগামিতে প্রচারের আওতায় আনা হবে । পর্যটনকে আরও উন্নত করতে দু'দেশের সমাজের বিভিন্ন স্তরের যেমন ব্যবসায়ী, পড়ুয়া, সঙ্গীতশিল্পী, চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে । এছাড়াও দু'দেশের পুরনো পর্যটনকেন্দ্র, ধর্মীয় পীঠস্থানগুলির খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হবে ৷
এই বিষয়ে রাজ বসু বলেন, ‘‘ভুটানে এমনিতে করোনার পর পর্যটকের সংখ্যা অনেকটা কমেছে । তবে পর্যটন ছাড়াও আগে ভুটান থেকে বহু ছাত্রছাত্রী দার্জিলিংয়ে পড়াশুনোর জন্য আসত । ভারত থেকেও অনেকে ভুটানে যেতেন । সেটাও অনেক কমে গিয়েছে । পর্যটনের পাশাপাশি আগের মতো যাতে দু'দেশের মধ্যে আবার সেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেদিকেও আমরা কাজ করব ।’’ বিফার সেক্রেটারি জেনারেল দাসো থিনলে দরজি বলেন, ‘‘করোনার পরে পর্যটক অনেক কমেছে । তবে আমরা আবার ভারতীয় নাগরিক ও ভারতীয় পর্যটকরা যাতে ভুটানমুখী হয় সেই লক্ষ্যেই কাজ করব । আগামী শিবরাত্রীতেও আমাদের তরফে দর্শনার্থীদের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না-হয় তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা রাখা হবে ।’’