গঙ্গারামপুর, 26 ফেব্রুয়ারি: উনিশের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছিল পদ্ম শিবির ৷ এবার মান রাখার পালা ৷ সম্ভবত সেকারণেই ভোটের আগে আরও একবার পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তৈরি হচ্ছে বিজেপিতে ৷ এই নিয়ে রবিবার গঙ্গারামপুরের বিজেপি বিধায়ক সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়িতে বিশেষ বৈঠকও হয়েছে ৷ তাতে অংশ নিয়েছিলেন কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ও গাজোলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন ৷ ছিলেন উত্তর দিনাজপুরের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশও ৷ বৈঠকে সত্যেনবাবু উল্লেখ করেন, এই দাবিতে তৃণমূলের একাধিক বিধায়কেরও সমর্থন রয়েছে ৷
জানা গিয়েছে, রবিবারের বৈঠকে সন্দেশখালি প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে ৷ কিন্তু বৈঠকের বেশিরভাগ অংশজুড়েই ছিল পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি সম্পর্কিত নানা বিষয় ৷ বৈঠকে কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেন, "শুধু বর্তমান সময়েই নয়, স্বাধীনতার পর থেকেই উত্তরের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী যেমন, রাজবংশী, আদিবাসী, রাভা, মেচ, টোটো, গোর্খারা অবহেলিত, বঞ্চিত ৷ রাজ্যের ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, উত্তরবঙ্গ তাদের কাছে শুধুমাত্র রাজস্ব সংগ্রহের জায়গা ৷ খানিকটা জমিদারির মতো ৷ বঞ্চনার শিকার হতে হতে উত্তরবঙ্গের মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে ৷ তারা এখন আলাদা রাজ্যের দাবি তুলছে ৷ মানুষের এই দাবিতে তাঁরও সমর্থন রয়েছে ৷ সরকার এখন না মানলেও অদূর ভবিষ্যতে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য হবেই ৷"
যদিও ক্যামেরার সামনে মন্তব্য করতে গিয়ে যথেষ্ট সাবধানী হলেন সত্যেন্দ্রনাথ ৷ তিনি বলেন, "সন্দেশখালিতে পিছিয়ে পড়া তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মানুষের উপর বহিরাগতদের চরম অত্যাচার হয়েছে ৷ বৈঠকে তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে ৷ সন্দেশখালির অত্যাচারিত মানুষের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমরা আগামীতে উত্তরবঙ্গজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন করব ৷ বৈঠকে চার জেলার প্রতিনিধি রয়েছেন ৷ আমরা চাই, যাঁরা এখানকার ভূমিপুত্র, এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, যাঁদের এখান জন্ম, এখানেই কর্ম, সেই মানুষগুলো উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের স্বার্থে একত্রিত হতে চায় ৷ আমাদের একত্রিত হতে হবে ৷ আমরা তারই শপথ নিলাম ৷ এখানে তিনজন বিধায়ক রয়েছি ৷ আগামীতে আমরা উত্তরবঙ্গকে সুন্দরভাবে সাজাতে চাই ৷ প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গকে আলাদা করে দেওয়া হোক ৷ আমরা দেশের সঙ্গে থেকেই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করতে চাই ৷ এখানে শুধু বিজেপির লোকজন নেই ৷ বিভিন্ন দলের লোক রয়েছে ৷ কারণ, দার্জিলিং থেকে বৈষ্ণবনগর পর্যন্ত মানুষকে বাঁচাতে হবে ৷"
যদিও এই বিষয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "বিষয়টি নিয়ে অনেক আগেই দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷ তিন বিধায়কের বৈঠকের খবর আমার জানা নেই ৷ তবে পশ্চিমবঙ্গ যেভাবে তৈরি হয়েছিল, সেভাবেই থাকা উচিত ৷"
রাজনৈতিক মহল বলছে, লোকসভা ভোটের মুখে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের সেন্টিমেন্ট উত্তরের নির্বাচনে প্রভাব ফেলার সমূহ সম্ভাবনা ৷ কারণ, এর আগে দেখে গিয়েছে, উত্তরের অনেক বিদ্বজ্জনও এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন ৷ বিশেষত এখানে সেভাবে ভারী শিল্প স্থাপন কিংবা চাকরির বাজার তৈরি না হওয়ায় কামতাপুর পিপলস পার্টির মতো ছোট সংগঠনগুলি এখনও এই দাবি জানিয়ে আসছে ৷ কিন্তু এই দাবি ভোট বাজারে উত্তরের আটটি আসনে প্রভাব ফেললেও দক্ষিণবঙ্গে উলটো ফল হতে পারে ৷ ফলে এই ইস্যু নিয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে ৷
আরও পড়ুন :
- উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য করার দাবিতে এবার 'ইন্ডিয়া'র দ্বারে বিমল গুরুংরা
- গোর্খাল্যান্ড ছেড়ে পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে সরব বিমল গুরুং
- উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবিতে একত্রিত আঞ্চলিক দলগুলি, আয়োজিত হল যৌথমঞ্চের প্রথম সম্মেলন