কলকাতা, 9 ফেব্রুয়ারি: এলাকার বাচ্চাদের পড়াশোনার দিকে উৎসাহ দেওয়া তো দূরের কথা, বরং ছোটদের নিজের অফিসে নিয়ে গিয়ে নাকি কুশিক্ষা দিতেন শেখ শাহজাহান ৷ স্থানীয়দের অভিযোগ, তলে তলে 'চিল্লর পার্টি' বানিয়ে তাদের মগজ ধোলাই করে, নিজের অপরাধের কাজে ব্যবহার করতেন সন্দেশখালির নিখোঁজ 'বাঘ' । এ বিষয়ে রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) আকাশ মাঘারিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "গ্রামের মহিলাদের অভিযোগ আমরা শুনছি । সেই মতো সত্যতা পেলে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"
অভিযোগ, নিয়মিত এলাকার বাচ্চাদের সকাল-সন্ধ্যায় নিজের অফিস ও তার সংলগ্ন ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখতেন শেখ শাহাজাহান । সেখানেই ওই সব শিশুদের পাঠ দেওয়া হত, কেন পড়াশোনা করা উচিত নয় । কেন হাতে টাকা থাকে না ? কেন তাঁদের বাবা মায়েরা এত গরিব ? তাহলে কী করলে হাতে সব সময় থাকবে টাকা ? অভিযোগ, কখনও নিজেই পাঠ দিতেন গুরু শেখ শাহাজাহান ৷ আবার কখনও এই কাজের দায়িত্ব গিয়ে পড়ত তাঁর দলের সদস্যদের উপর ৷ শিশুদের বোঝানো হত যে, "সবসময় দাদার (শাহাজাহান) কাজ করতে হবে । দাদার পাশে দাঁড়াতে হবে । তাহলে দাদা তোদের দেখবে । আর তা না হলে, এই মুলুকে টেকা দায় হবে ।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট গ্রামের এক মহিলার অভিযোগ, তাঁদের হুমকির গলায় শাসানি দেওয়া হত যে, সকাল-সন্ধ্যায় যেন ছেলেকে দাদার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । অভিযোগ, শাহাজাহানের কাছে যেতে না দিয়ে যদি ছেলেদের বাড়িতে পড়তে বসতে বলা হত, সে ক্ষেত্রে কপালে জুটত মারধর অথবা একাধিক অত্যাচার । ছোট থেকেই এলাকার বাচ্চা ছেলেদের নিয়ে অন্য এলাকায় গন্ডগোলের থেকে শুরু করে যদি কোনও আন্দোলনের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হত, তখনও মিছিলের সামনের সারিতে রাখা হত এলাকার ওই 'চিল্লার পার্টি'র সদস্যদের । গ্রামের মহিলাদের অভিযোগ, অনেক সময় তাঁদের ছোট ছোট ছেলেদের হাতে টাকার নোট ধরিয়ে দিত শেখ শাহাজাহানের দলবল ।
শেখ শাহাজাহানের একাধিক দলীয় প্রচার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের পতাকা এলাকায় এলাকায় লাগানোর কাজে সামনের সারিতে থাকত এই সব শিশুরা । এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারত না । গেলেও সপ্তাহে দু থেকে তিন দিন । সকাল-সন্ধ্যা যখন তাদের পড়াশোনার কথা, সেই সময় তাদের অপরাধের কাজকর্ম শেখানোর কাজ চলত শেখ শাহাজাহানের বাড়ি ও অফিস ঘরে ।
গত 5 জানুয়ারি সকালে ইডির তদন্তকারীরা উত্তর 24 পরগনা জেলার ন্যাজাট থানার অন্তর্ভুক্ত সন্দেশখালি এলাকায় শেখ শাহাজাহানের বাড়িতে রেশন কাণ্ডে তল্লাশি চালাতে গিয়ে একদল মানুষের হাতে আক্রান্ত হন । কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি ছিল, শুধু তাঁদের নিগ্রহ করাই নয়, বরং তাঁদের একাধিক আইনি নথিপত্র নিয়েও পালিয়েছিল অভিযুক্তরা । তারপর কেটে গিয়েছে বহুদিন । এখনও পুলিশ কিংবা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা, কেউই ধরতে পারেনি সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহাজাহানকে ।
আরও পড়ুন: