বহরমপুর, আরামবাগ ও বালুরঘাট 12 অগস্ট: রাজ্যের তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে সোমবার ৷ সেগুলির মধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ সেখানে চিকিৎসার গাফিলতিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ৷ আরেকটি ঘটনা ঘটেছে হুগলির আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ ওই ঘটনায় এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে ৷ তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ সেখানে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হওয়ায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ৷
মুর্শিদাবাদে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু: মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার সুজাপুরের বাসিন্দা পিয়ারুল শেখকে (35) সোমবার বেলডাঙা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রেফার করা হয় মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পিয়ারুল শেখের পরিবার তাঁকে বুকের ব্যাথা নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন । পরিবারের অভিযোগ, টিকিট করে ওপিডি বিভাগে আনার হলেও চার ঘণ্টা সেখানে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখা হয় পিয়ারুলকে । কোনও চিকিৎসক সেখানে ছিলেন না ।
মৃতের আত্মীয় বিউটি বিবি বলেন, ‘‘চিকিৎসা হলে রোগীকে বাঁচানো যেত । এই দায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ।’’ ঘটনাস্থলে আসেন বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্র । তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অবিলম্বে এই অচলাবস্থা কাটানো উচিত ।’’
মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের সুপার অনাদি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি ছিল না । চিকিৎসা শুরুর পরেই মৃত্যু হয়েছে । অভিযোগ ভিত্তিহীন । পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে ।’’
আরজি করের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে কর্মবিরতি শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসক-সহ হাউস সার্জেন্ট, পিজিটি পড়ুয়ারা । চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে । ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা । এ দিন সকাল সাড়ে বারোটার পর থেকে ওপিডি বিভাগ শুরু হয়েছে । সিনিয়র চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল করে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে ।
আরামবাগে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু: আরামবাগের সালেপুরের বাসিন্দা 36 বছরের পুতুল দাস রবিবার ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন হুগলির আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । অভিযোগ, সঠিক সময়ে চিকিত্সা না পাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয় । এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিবারের সদস্যরা । অন্যান্য অনেক রোগীর পরিজনও সেই বিক্ষোভে যোগ দেন ৷ ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় আরামবাগ থানার পুলিশ ।
মৃত পুতুল দাসের শাশুড়ি মিনতি দাসের দাবি, বারবার নার্সদের ডাকা হলেও তাঁরা কোনোরকম তোয়াক্কা করেননি । উপরন্তু তাঁরা রোগীদের পরিষেবার বিষয়ে উদাসীন বলেও দাবি তাঁদের । অধিকাংশ সময় ফোন ব্যস্ত থাকেন বলেও দাবি বেশ কিছু রোগীর পরিবারের । এমনকী, খারাপ ব্যবহারও করেন ৷
এই বিষয়ে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা পড়েছে । বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’’ এই ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা ।
বালুরঘাটে চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যু: শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার উপলক্ষে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পতিরাম ধামে ভোরবেলায় শিবের মাথায় জল ঢালতে যাচ্ছিল দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘটের রঘুনাথপুর এলাকার এক পরিবার । দয়াল শর্মা নামে এক ব্যক্তি জানান, স্থানীয় মাঝিয়ানের কাছে টোটোর ধাক্কায় ওই পরিবারের সদস্যরা আহত হন ৷ গুরুতর আহত অবস্থায় বছর নয়েকের শিবম শর্মাকে নিয়ে আসা হয় বালুরঘাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ৷ অভিযোগ, ঘণ্টা দুয়েক ধরে সেখানে বিনা চিকিৎসায় পড়েছিল ললিত মোহন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র শিবম ।
এর পর ক্ষোভ ছড়ায় রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে৷ হাসপাতালে ভাঙচুর হয় ৷ ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ৷ মৃতের দিদি রিংকি শর্মা বলেন, ‘‘ডাক্তারকে অনেকবার ফোন করা হয়েছে ৷ কিন্তু আসেননি । দু’ঘণ্টা পর যখন ডাক্তার আসেন, তখন ভাই মারা গিয়েছে । সেই সময় অভিযোগ খাতায় ডাক্তারের দোষ লিখতে গেলে হাসপাতালের দেওয়া প্রেসক্রিপশনগুলো ডাক্তার জোর করে কেড়ে নেয় ৷ এমনকী পুলিশও আমাকে লিখতে দেয়নি ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ চিকিৎসার গাফিলতেই ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে । আমরা ওই ডাক্তারের শাস্তি চাই ।’’ যদিও হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন । তিনি জানান, ভাঙচুর করা হয়নি ৷ তবে ডাক্তার না আসায় একটি টেবিল উলটে দেওয়া হয়েছিল ।