কলকাতা, 4 ডিসেম্বর: দিল্লির দূষণ ভয়াবহতা দেখে সতর্ক হতে চাইছে কলকাতা ও হাওড়া ৷ এই নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে প্রশাসন ৷ সেখানেই কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ চেয়েছিলেন ৷ সেই মতোই বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক অধ্যাপক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় কলকাতার দূষণের উৎস ও তার প্রতিকারের জন্য ওয়ার্ড ভিত্তিক পরমার্শ তুলে দিয়েছেন কেএমসি-কে ৷
সেই পরামর্শে কী আছে ?
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, মূলত কলকাতায় কীভাবে বায়ুদূষণ কমানো যায়, সেই পরিকল্পনাই উল্লেখ করেছেন অধ্যাপক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ৷ শীত এলেই ভাসমান ধূলিকণা ও বিভিন্ন গ্যাস বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে ৷ যার প্রভাব সরাসরি জীবজগতের উপর পড়ে ৷ মূলত পিএম 10, পিএম 2.5 মাত্রার কণাগুলি বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে চিন্তার কারণ ৷
এই দূষণ সংক্রান্ত বিষয়ে সম্প্রতি বোস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর গবেষক দল কলকাতা শহরের দূষণের কারণ নিয়ে সমীক্ষা ও গবেষণা চালিয়েছে ৷ সেই গবেষণার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাতাসে ভাসমান পিএম 10 মাত্রার বায়বীয় পদার্থ কলকাতায় বায়ুদূষণের জন্য মূলত দায়ী ৷
সেখানে বলা হয়েছে, কঠিন বর্জ্য বা আবর্জনা, শুকনো ডাল-পাতা পোড়ানো ও নির্মাণ কাজ বাতাসে পিএম 10 মাত্রার কণার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ৷ এছাড়াও গবেষণায় উঠে এসেছে যানবাহন, কলকারখানা, জ্বালানির ধোঁয়া শীতকালে বাতাসে ধূলিকণার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ৷ ফলে বাতাসে ধূলিকণা কমাতে এই বিষয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ৷
শীতকালে বায়ুদূষণ ঠেকাতে সুপারিশ
বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ কমাতে হবে ৷ এর জন্য জল ছিটাতে হবে ৷ বিশেষত, রাস্তায় নিয়মিত দু’বার করে জল দেওয়া দরকার ৷ বেলা বাড়তে থাকলে ধুলোবালির পরিমাণও বেড়ে যায় ৷ তাই ভিড় বাড়ার আগে রাস্তা ভিজে থাকলে গাড়ি চললেও ধুলো অনেকটা কম উড়বে ৷
একইভাবে সন্ধেবেলায় রাস্তায় জল দেওয়া যেতে পারে ৷ এর জন্য সকালে 7-9 টা ও বিকেলে 4-6 টার মধ্যে শহরের রাস্তায় জল ছিটানো দরকার ৷ তবে, এ ক্ষেত্রে মিস্ট ক্যানন সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে হবে ৷ বর্তমানে যেমন খুশি মিস্ট ক্যাননের ব্যবহার, শুধু খরচ বাড়ানো ছাড়া কিছুই নয় ৷ মিস্ট ক্যানন ব্যবহার করা হোক নির্মাণ কাজ হচ্ছে বা নির্মাণ কাজ ভাঙা হচ্ছে এমন জায়গায় ৷ আর প্রচুর ধুলোবালি ওড়ে এমন এলাকা ও রাস্তায় মিস্ট ক্যানন ব্যবহার করা যেতে পারে ৷
জঞ্জাল বা কাঠ-পাতা পোড়ানো হচ্ছে, এমন এলাকায় মিস্ট ক্যানন ব্যবহার করা উচিত নয় ৷ কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, এক্ষেত্রে জলকণার সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কঠিন বায়বীয় বর্জ্য বাড়ার সম্ভাবনা থাকে ৷ নির্মাণ কাজের জায়গাগুলিতে বেশি নজর দিতে হবে ৷ নির্মাণ কাজের জায়গাগুলি যাতে পুরোপুরি ঢেকে রাখা থাকে ৷ বড় ধরনের নির্মাণ কাজ চলছে, এমন জায়গায় মানুষজনের যাতায়াত বেশি থাকলে, সতর্ক হতে হবে ৷ প্রয়োজনে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দু’মাস বড় নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে হবে ৷
যন্ত্রের মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার কাজ শীতে বন্ধ রাখতে হবে ৷ এর ফলে ধুলোবালি বেশি ছড়ায় ৷ শহরের মধ্যে ও জনবহুল এলাকায় জঞ্জাল ও কাঠপাতা পোড়ানো বন্ধ করতে হবে ৷ প্রয়োজনে পুলিশি সহায়তা ও ড্রোনে নজরদারি করতে হবে ৷ সচেতনতামূলক প্রচার দরকার ৷ না-শুনলে জরিমানা বা আইনি পদক্ষেপ করতে হবে ৷
কলকাতা পুরনিগমের ওয়ার্ড ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ও পদক্ষেপ
রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্যাটেলাইট ডাটার সাহায্যে ধুলো ও ধোঁয়ার হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ খুব ধুলো হয় এমন রাস্তা, নির্মাণ কাজ চলছে বা ভাঙা হচ্ছে এমন 61টি ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে ৷ সেই ওয়ার্ডগুলিতে জরুরি পদক্ষেপ করা প্রয়োজন ৷ এই ওয়ার্ডগুলিতে দিনে দু’বার জল ছিটাতে হবে ৷ নির্মাণ কাজ কমাতে হবে এই ওয়ার্ডগুলিতে ৷ এই অঞ্চলগুলিতে সন্ধে বা রাতে মিস্ট ক্যানন ব্যবহার করা যেতে পারে ৷
কলকাতা পুরনিগমের 45টি ওয়ার্ডে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো হয় ৷ এই ওয়ার্ডগুলিতে ব্যবস্থা নেওয়া ক্ষেত্রে ড্রোনে নজরদারির মাধ্যমে স্পট সনাক্তকরণ, ম্যানুয়াল নজরদারি, পুরনিগমকে জানানো ও জঞ্জাল সংগ্রহে নজরদারি দরকার ৷ বস্তি এলাকায় বিশেষ নজরদারি ও সচেতনতা প্রচার করতে হবে ৷