হাঁসখালি, 17 জুন: রয়েছে পাখা, আলো থেকে রেডিও ওয়েব ফ্রিকুয়েন্সি পাঠানোর ব্যবস্থা ৷ অত্যধিক গরম থেকে রেহাই ও সুরক্ষা দিতে কৃষকদের জন্য স্মার্ট টুপি তৈরি করে তাঁক লাগালেন নদিয়ার হাঁসখালি থানার বগুলার স্কুল শিক্ষক ৷ আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই টুপি, যা বানাতে শুভময় বিশ্বাসের সময় লেগেছে একমাস ৷
এ বিষয়ে টুপি আবিষ্কারক স্কুল শিক্ষক বলেন, "বিভিন্ন সময় দেখি বিভিন্ন মানুষের জন্য নানা রকম জিনিসপত্র তৈরি হয় । যেমন, অত্যাধিক গরমের থেকে বাঁচতে বাড়িতে এসি লাগানো হয় কিংবা কুলার মেশিন বসানো হয় । কিন্তু যাঁরা রোদে জলে ভিজে অন্নের জোগান দেন অর্থাৎ চাষিদের জন্য কোনও কিছুই তৈরি হয় না । তাঁরা মূলত ফাঁকা মাঠে খোলা আকাশের নীচে রোজ কাজকর্ম করেন । সেই কারণেই তাঁদের এই জীবিকায় যদি কিছুটা সুবিধা হয়, তাই একটি টুপির আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছি আমি ।"
কী কী উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে এই টুপিতে ?
এই টুপিতে পাঁচটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে ৷ প্রথমত, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্তি দিতে রয়েছে কুলিং পাখা, তা থেকে ঠান্ডা বাতাস বেরবে ৷ অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাওয়ার মতো রয়েছে আলোর ব্যবস্থা । বিনোদনের কথা মাথায় রেখে টুপিতে গান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে মাইক্রোচিপও । পাশাপাশি, এক মিটারের মধ্যে যদি কোনও পোকামাকড় চলে আসে টুপিতে থাকা আল্ট্রাসনিক তরঙ্গের মাধ্যমে কৃষকের কাছে ঘেষতে পারবে না সেগুলি । সঙ্গে টুপিতে ব্যবহার করা হয়েছে রেডিও ওয়েব ফ্রিকুয়েন্সি ৷ যার মাধ্যমে দুই থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে থেকেও বাড়ির সঙ্গে কথা বলতে পারবেন কৃষকেরা ৷
শুভময় বিশ্বাস জানান, মূলত বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই টুপি । তার উপর একটি সোলার সিলভার বসানো হয়েছে । যেটাতে বিদ্যুৎ তৈরি হবে । এই টুপির পিছনে এবং সামনের দিকে একটি করে পাখা লাগানো হয়েছে । সেই দুটি পাখা চাষিদের গরম থেকে কিছুটা হলেও রেহাই দেবে । চাষিদের জন্য আবহাওয়ার খবর জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ । তারা আলাদা ভাবে টেলিভিশনের মাধ্যমে খবর দেখার সময় পান না । সেই কারণে এই টুপিতে একটি মিউজিক সিস্টেম করা হয়েছে । যেখানে প্রতিটা রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আবহাওয়ার খবর দেবে এবং তা সরাসরি চাষিরা শুনতে পারবেন ।
অন্যদিকে বিভিন্ন চাষিদের বাড়ি থেকে তাঁর জমির দূরত্ব বেশ কয়েক কিলোমিটার দূর হয়ে থাকে । অধিকাংশ চাষিদের কাছে মোবাইল না থাকার কারণে তিনি যদি জমিতে চাষ করতে যান এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, এই টুপির মাধ্যমে তাঁর শরীর খারাপের সংকেত বাড়িতে পৌঁছে যাবে । পাশাপাশি শুভময় চাইছেন, পশ্চিমবঙ্গের বিজ্ঞান মঞ্চ তাঁর এই কাজকে স্বীকৃতি দিক ৷ এই টুপিটা যাতে প্রতিটি বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তার ব্যবস্থা করুক বিজ্ঞান মঞ্চ । তবে এখনও পর্যন্ত বাজারে আসেনি এই টুপি ৷ শুধুমাত্র পরীক্ষামূলকভাবে বানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারি মাধ্যম দিয়ে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা রয়েছে স্কুল শিক্ষকের ।