কাকদ্বীপ, 26 অগস্ট: নিম্নচাপ এবং পূর্ণিমার ভরা কোটালের সঙ্গে দোসর হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া । এর জেরে উপকূলবর্তী এলাকার মাটির নদী বাঁধের বেহাল অবস্থা । কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা, সাগর, পাথর প্রতিমা, মৌসুনি দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকার নদী বাঁধে ইতিমধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে । নামখানা ব্লকের নারায়ণগঞ্জ ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের গোবর্ধনপুর এলাকায় নদী বাঁধে ভয়াবহ ধস নেমেছে । ইতিমধ্যেই নদীর নোনা জল ঢুকতে শুরু করেছে গ্রামে । তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা ৷
স্থানীয় বাসিন্দা গণেশ দাসের কথায়, "নিম্নচাপ এবং কোটালের জোড়া ফালায় এলাকায় ইতিমধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করেছে নদীর নোনা জল ৷ বাড়ির সামনে নোনা জল চলে এসেছে । প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে ৷ তার জেরে মাটির নদী বাঁধেরও অবস্থা খারাপ । বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও রকম সুরাহা মেলেনি ৷ আমরা এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই ।"
বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত ৷ আর তার জেরে নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে । ইতিমধ্যে ডায়মন্ড হারবারের রামকৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কৃষ্ণরামপুর এলাকায় হুগলি নদীতে ভয়াবহ নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে । নদী ভাঙনের জেরে এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখছেন এলাকাবাসীরা । আতঙ্কে বাঁধের উপর ভিড় জমিয়েছেন বাসিন্দারা ।
ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ 24 পরগনার বেশকিছু নদী বাঁধে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ শুরু করা হয়েছে । জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচ দফতরের আধিকারিকদের সতর্ক করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূল তীরবর্তী এলাকায় সাধারণ মানুষদের জন্য মাইকিং করা হচ্ছে । সোমবার এবং মঙ্গলবারও এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দক্ষিণবঙ্গে জারি থাকবে বলে জানিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর । এরপর থেকেই আতঙ্ক আরও গ্রাস করতে শুরু করেছে উপকূল তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের ।
হুগলি নদীর জোয়ারের জল কৃষ্ণরামপুর এলাকায় প্রবেশ করেছে ৷ এর ফলে বেশ কয়েক কিলোমিটার মাটির রাস্তা ধসে খালে তলিয়ে গিয়েছে ৷ যার জেরে হাঁড়া গ্রামের সঙ্গে কৃষ্ণরামপুর গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । এ বিষয়ে কৃষ্ণরামপুর গ্রামের সদস্য বাপন হালদার বলেন, "গত চার বছর ধরে হুগলি নদীতে এই অংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিচ্ছে । বারবার বিভিন্ন দফতরের কাছে আমরা এই নদী বাঁধ সংস্কারের কথা বললেও কোনও রকম কাজ হয়নি । বর্ষা এলে যৎসামান্যভাবে এই বাঁধ মেরামতি করা হয় ৷ কিন্তু প্রবল বৃষ্টি এবং হুগলি নদীর জোয়ারের জলে এই বাঁধ প্রতিবছর বর্ষার সময় ভেঙে যায় এবং গ্রাম ভেসে যায় ।"
তাঁর সংযোজন, "এবারেও একই সমস্যা সম্মুখীন হতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের ৷ এবারও আমরা জানিয়েছি ৷ কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের এই কষ্টের কথায় কর্ণপাত করতে রাজি নয় । বেশ কয়েকদিন ধরে যদি এইরকম বৃষ্টি এবং পূর্ণিমার ভরা কোটাল চলতে থাকে, তাহলে গ্রাম তলিয়ে যাবে হুগলি নদীতে । স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধই একমাত্র সমাধান সূত্র ।"