ETV Bharat / state

'আরজি কর-কাণ্ডে অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছে পুলিশ-সিবিআই', মুখোমুখি নির্যাতিতার আইনজীবী - RG KAR VICTIM LAWYER

আরজি করের ঘটনায় অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছে পুলিশ ও সিবিআই ৷ ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক দাবি নির্যাতিতার আইনজীবীর ৷

ETV BHARAT
ইটিভি ভারতের মুখোমুখি আরজি করের নির্যাতিতার আইনজীবী (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 16, 2025, 8:09 PM IST

Updated : Jan 16, 2025, 8:54 PM IST

মালদা, 16 জানুয়ারি: 9 অগস্ট, 2024 ৷ সকাল সাড়ে ন’টা ৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক ডাক্তারি ছাত্রীর মৃতদেহ ৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা রাজ্যে ৷ প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে রাজ্য থেকে দেশে, দেশ থেকে বিদেশেও ৷ একের পর এক রাত দখলের কর্মসূচিতে অংশ নেয় সাত থেকে সত্তর ৷ ওঠে নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি ৷ আগামী 18 জানুয়ারি কলকাতার শিয়ালদা আদালতে সেই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা ৷ তার ঠিক প্রাক্কালে নির্যাতিতা আইনজীবীর মুখোমুখি ইটিভি ভারত ৷ এই মামলা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি ৷

এর আগে, আরজি করের নির্যাতিতার পক্ষে আদালতে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বৃন্দা গ্রোভারের মতো দুঁদে আইনজীবীদের ৷ কিন্তু কোনও অজানা কারণে তাঁরা এই মামলার দায়িত্ব ছেড়েছেন ৷ সেই দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মালদার প্রখ্যাত বর্ষিয়ান আইনজীবী তড়িৎকুমার ওঝা ৷

'আরজি কর-কাণ্ডে অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছে পুলিশ-সিবিআই', মুখোমুখি নির্যাতিতার আইনজীবী (ইটিভি ভারত)

তিনি জানালেন, "অভয়ার মা-বাবা কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর পেয়েছিলেন জানি না ৷ তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ সামাজিক কারণে আমি এই মামলার দায়িত্ব নিতে রাজি হই ৷ এতে আমার যতই ক্ষতি হোক, আমি মামলা লড়ব ৷ এক্ষেত্রে আমরা ডিফ্যাক্টো কমপ্লেনেন্ট ৷ ফলে আমাদের মামলা পরিচালনা করার অধিকার নেই ৷ আমরা শুধুমাত্র লিখিত বক্তব্য আদালতকে জানাতে পারি ৷ গত 4 জানুয়ারি আমি শিয়ালদা কোর্টে নিজের বক্তব্য জানিয়ে এসেছি ৷"

আইনজীবী জানান, "৪ জানুয়ারি আমরা আদালতে 55 পাতার লিখিত যুক্তি (আরগুমেন্ট) পেশ করেছি ৷ সিবিআইয়ের আইনজীবী সেই যুক্তি পেশ করতে আপত্তি করেছিলেন ৷ কিন্তু আমার যুক্তিতে বিচারক সন্তুষ্ট হন ৷ আমার লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন ৷ এই মামলার খুঁটিনাটি পড়ে দেখেছি, এই ঘটনার মূল আসামীদের রক্ষা করার জন্য সিবিআই তদন্ত করেছে ৷ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে ৷ সে দোষী না নির্দোষ, তা অবশ্য আমার জানা নেই ৷ তবে সঞ্জয় যদি অপরাধী হয় তবে তার সঙ্গে আরও লোকজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৷"

তড়িৎকুমারের সংযোজন, "ঘটনার দিন সেখানে চারজন চিকিৎসক ছিলেন ৷ তাঁরা জোমাটো অ্যাপে খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন ৷ অর্ধেক খাবারের অর্ডার দেয় তিলোত্তমা, বাকি অর্ধেক অর্ক সেন নামে একজন ৷ যদি সেটাই হয়, তবে তিলোত্তমা আর অর্ক সেনের মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখা প্রয়োজন ৷ ওই অ্যাপেই তাঁরা খাবারের বিল মিটিয়েছেন ৷ রাজ্য পুলিশ কিংবা সিবিআই এদিকে দেখেইনি ৷ ঘটনাস্থল থেকে খাবারের কোনও কন্টেনার পাওয়া যায়নি ৷ ঘটনাস্থলে যাওয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্ট সেটাই বলছে ৷ যদি সেখানে খাবার না খাওয়া হয়ে থাকে, তবে সেখানে কোনও ঘটনাই ঘটেনি ৷ বাইরে খুন ও ধর্ষণ করে দেহ সেখানে রাখা হয়েছিল ৷ কাউকে রক্ষা করতেই রাজ্য পুলিশ কিংবা সিবিআই এই বিষয়টি চেপে গিয়েছে ৷"

পুলিশ সন্দীপ ঘোষকে বাঁচাতে চাইছে বলে অভিযোগ আইনজীবীর ৷ তাঁর কথায়, "এখানে আরজি কর মেডিক্যালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং চারজন ট্রেনিকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে ৷ হয়তো তিলোত্তমা বড়সড় কোনও চুরির ঘটনা জানতে পেরেছিলেন ৷ সেকারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এই অর্ক সেন নাকি উত্তরবঙ্গের এক প্রভাবশালীর ছেলে ৷ তার বাবা নাকি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ৷ ঘটনার পরই সে নাকি ভারত ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছে ৷"

তড়িৎকুমার আরও বলেন, “আমরা আদালতকে জানিয়েছি, এই মামলায় এতদিন যা তদন্ত হয়েছে তা শুধু লোক দেখানো ৷ যে যে জায়গায় তদন্ত করা উচিত ছিল, এমন 35টি পয়েন্ট আমরা বিচারকের কাছে লিখিতভাবে উল্লেখ করেছি ৷ রাজ্য সরকার কিংবা সিবিআই সেই তদন্ত করেনি ৷ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 193/9 ধারা অনুযায়ী আদালত ইচ্ছে করলে আবারও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে ৷ আমরাও এদিকেই জোর দিচ্ছি ৷ আমরা চাই, এই মামলার পুনরায় তদন্ত হোক ৷"

আইনজীবীর আবেদন, "2004 সালে বেস্ট বেকারি মামলায় দাঙ্গার কারণে সব আসামি খালাস হয়ে যায় ৷ সেই সময় জাহিরা খাতুন নামে একজন সুপ্রিম কোর্টে যান ৷ সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয় ৷ একসঙ্গে মামলার শুনানি গুজরাত থেকে মুম্বইয়ে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ আমিও নিজের লিখিত জবানবন্দিতে শিয়ালদা আদালতের বিচারকের কাছে এই মামলার ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশিকা পালন করার আবেদন জানিয়েছি ৷ আগে এই মামলার পুনরায় তদন্ত হোক ৷ সেই তদন্ত মনঃপুত না হলে আমরা আবারও তদন্ত চাইব ৷ তারপরেও সিবিআই-এর তরফে সঠিক তদন্ত না করা হলে আমরা নিজেরাই তদন্ত করার অনুমতি চাইব ৷ বিএনএস অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিবার ইচ্ছে করলে নিজেদের উকিল নিয়োগ করতে পারে ৷ সেই উকিল তদন্তে সহযোগিতা করতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে আমি নিজে তিলোত্তমার হয়ে প্রসিকিউশন করতে পারি ৷"

মালদা, 16 জানুয়ারি: 9 অগস্ট, 2024 ৷ সকাল সাড়ে ন’টা ৷ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় এক ডাক্তারি ছাত্রীর মৃতদেহ ৷ সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে তোলপাড় পড়ে যায় গোটা রাজ্যে ৷ প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে রাজ্য থেকে দেশে, দেশ থেকে বিদেশেও ৷ একের পর এক রাত দখলের কর্মসূচিতে অংশ নেয় সাত থেকে সত্তর ৷ ওঠে নির্যাতিতার সুবিচারের দাবি ৷ আগামী 18 জানুয়ারি কলকাতার শিয়ালদা আদালতে সেই মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা ৷ তার ঠিক প্রাক্কালে নির্যাতিতা আইনজীবীর মুখোমুখি ইটিভি ভারত ৷ এই মামলা সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তিনি ৷

এর আগে, আরজি করের নির্যাতিতার পক্ষে আদালতে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে বৃন্দা গ্রোভারের মতো দুঁদে আইনজীবীদের ৷ কিন্তু কোনও অজানা কারণে তাঁরা এই মামলার দায়িত্ব ছেড়েছেন ৷ সেই দায়িত্বই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন মালদার প্রখ্যাত বর্ষিয়ান আইনজীবী তড়িৎকুমার ওঝা ৷

'আরজি কর-কাণ্ডে অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছে পুলিশ-সিবিআই', মুখোমুখি নির্যাতিতার আইনজীবী (ইটিভি ভারত)

তিনি জানালেন, "অভয়ার মা-বাবা কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর পেয়েছিলেন জানি না ৷ তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ সামাজিক কারণে আমি এই মামলার দায়িত্ব নিতে রাজি হই ৷ এতে আমার যতই ক্ষতি হোক, আমি মামলা লড়ব ৷ এক্ষেত্রে আমরা ডিফ্যাক্টো কমপ্লেনেন্ট ৷ ফলে আমাদের মামলা পরিচালনা করার অধিকার নেই ৷ আমরা শুধুমাত্র লিখিত বক্তব্য আদালতকে জানাতে পারি ৷ গত 4 জানুয়ারি আমি শিয়ালদা কোর্টে নিজের বক্তব্য জানিয়ে এসেছি ৷"

আইনজীবী জানান, "৪ জানুয়ারি আমরা আদালতে 55 পাতার লিখিত যুক্তি (আরগুমেন্ট) পেশ করেছি ৷ সিবিআইয়ের আইনজীবী সেই যুক্তি পেশ করতে আপত্তি করেছিলেন ৷ কিন্তু আমার যুক্তিতে বিচারক সন্তুষ্ট হন ৷ আমার লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেন ৷ এই মামলার খুঁটিনাটি পড়ে দেখেছি, এই ঘটনার মূল আসামীদের রক্ষা করার জন্য সিবিআই তদন্ত করেছে ৷ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছে ৷ সে দোষী না নির্দোষ, তা অবশ্য আমার জানা নেই ৷ তবে সঞ্জয় যদি অপরাধী হয় তবে তার সঙ্গে আরও লোকজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৷"

তড়িৎকুমারের সংযোজন, "ঘটনার দিন সেখানে চারজন চিকিৎসক ছিলেন ৷ তাঁরা জোমাটো অ্যাপে খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন ৷ অর্ধেক খাবারের অর্ডার দেয় তিলোত্তমা, বাকি অর্ধেক অর্ক সেন নামে একজন ৷ যদি সেটাই হয়, তবে তিলোত্তমা আর অর্ক সেনের মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখা প্রয়োজন ৷ ওই অ্যাপেই তাঁরা খাবারের বিল মিটিয়েছেন ৷ রাজ্য পুলিশ কিংবা সিবিআই এদিকে দেখেইনি ৷ ঘটনাস্থল থেকে খাবারের কোনও কন্টেনার পাওয়া যায়নি ৷ ঘটনাস্থলে যাওয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্ট সেটাই বলছে ৷ যদি সেখানে খাবার না খাওয়া হয়ে থাকে, তবে সেখানে কোনও ঘটনাই ঘটেনি ৷ বাইরে খুন ও ধর্ষণ করে দেহ সেখানে রাখা হয়েছিল ৷ কাউকে রক্ষা করতেই রাজ্য পুলিশ কিংবা সিবিআই এই বিষয়টি চেপে গিয়েছে ৷"

পুলিশ সন্দীপ ঘোষকে বাঁচাতে চাইছে বলে অভিযোগ আইনজীবীর ৷ তাঁর কথায়, "এখানে আরজি কর মেডিক্যালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং চারজন ট্রেনিকে বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে ৷ হয়তো তিলোত্তমা বড়সড় কোনও চুরির ঘটনা জানতে পেরেছিলেন ৷ সেকারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এই অর্ক সেন নাকি উত্তরবঙ্গের এক প্রভাবশালীর ছেলে ৷ তার বাবা নাকি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ৷ ঘটনার পরই সে নাকি ভারত ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েছে ৷"

তড়িৎকুমার আরও বলেন, “আমরা আদালতকে জানিয়েছি, এই মামলায় এতদিন যা তদন্ত হয়েছে তা শুধু লোক দেখানো ৷ যে যে জায়গায় তদন্ত করা উচিত ছিল, এমন 35টি পয়েন্ট আমরা বিচারকের কাছে লিখিতভাবে উল্লেখ করেছি ৷ রাজ্য সরকার কিংবা সিবিআই সেই তদন্ত করেনি ৷ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার 193/9 ধারা অনুযায়ী আদালত ইচ্ছে করলে আবারও তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে ৷ আমরাও এদিকেই জোর দিচ্ছি ৷ আমরা চাই, এই মামলার পুনরায় তদন্ত হোক ৷"

আইনজীবীর আবেদন, "2004 সালে বেস্ট বেকারি মামলায় দাঙ্গার কারণে সব আসামি খালাস হয়ে যায় ৷ সেই সময় জাহিরা খাতুন নামে একজন সুপ্রিম কোর্টে যান ৷ সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলার পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয় ৷ একসঙ্গে মামলার শুনানি গুজরাত থেকে মুম্বইয়ে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ আমিও নিজের লিখিত জবানবন্দিতে শিয়ালদা আদালতের বিচারকের কাছে এই মামলার ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশিকা পালন করার আবেদন জানিয়েছি ৷ আগে এই মামলার পুনরায় তদন্ত হোক ৷ সেই তদন্ত মনঃপুত না হলে আমরা আবারও তদন্ত চাইব ৷ তারপরেও সিবিআই-এর তরফে সঠিক তদন্ত না করা হলে আমরা নিজেরাই তদন্ত করার অনুমতি চাইব ৷ বিএনএস অ্যাক্ট অনুযায়ী পরিবার ইচ্ছে করলে নিজেদের উকিল নিয়োগ করতে পারে ৷ সেই উকিল তদন্তে সহযোগিতা করতে পারেন ৷ সেক্ষেত্রে আমি নিজে তিলোত্তমার হয়ে প্রসিকিউশন করতে পারি ৷"

Last Updated : Jan 16, 2025, 8:54 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.