সোদপুর/কলকাতা, 13 ডিসেম্বর: 90 দিনেও সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিতে না-পারায়, শুক্রবার চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন আরজি কর মেডিক্যালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল । এটাই মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না আরজি করের নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার । চরম হতাশা প্রকাশ পেয়েছে নির্যাতিতার মায়ের কথায় । যদিও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছেন, তদন্ত রাজ্য সরকারের হাতে থাকলে এতদিনে ফাঁসি হয়ে যেত অভিযুক্তদের ৷
এদিন সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পাওয়ার পর এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরনিগমের মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে ৷ তখনই তিনি দাবি করেন, "সিবিআই আবার কী করবে ? এই কেস রাজ্যকে দিলে এতদিনে ফাঁসি হয়ে যেত । আমার মনে হয়, সিট-কে দিলে অনেক তাড়াতাড়ি কাজটা হত । জয়নগরে 68 দিনে, ফরাক্কায় দুই মাসে সাজা পেল । হাইকোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল । সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রেখেছে । তাই তারাই বুঝবে, আমি আর কী বলব ।"
ফিরহাদের মতে, অপরাজিতা বিল সই হলে রাজ্যে এমন ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজের সাহস পাবে না অপরাধীরা । তাঁর কথায়, "মা বোনের উপর অত্যাচার অন্যায় করার সাহস পেত না । আমি এখনও আশাবাদী, রাষ্ট্রপতি নিজে মহিলা, হয়তো অপরাজিতা বিলটা সই করে দেবেন ।"
এদিন আরজি করের চিকিৎসক ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের মামলায় সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল জামিন পেয়ে যাওয়ায়, চূড়ান্ত হতাশ নির্যাতিতার পরিবার ৷ মৃত ছাত্রীর মা এদিন বলেন, "ওঁদের (সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডল) দু'জনের জামিনে আমরা চরম হতাশ । এরপর আর কী বলার থাকতে পারে, আপনারই বলুন ! 90 দিনেও সিবিআই চার্জশিট জমা দিতে পারল না ।"
এরপরই সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্যাতিতা ছাত্রীর মা বলেন, "সিবিআই সঠিকভাবে কাজ করেনি বলেই তো ওঁদের জামিন হয়ে গিয়েছে ।আমি তো সিবিআইয়ের অফিসার নই । তাহলে তো আমিই কাজটা করে দিতে পারতাম ।"
সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, এখন কী মনে হচ্ছে রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখলেই ভালো হত ? এই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিতার মা বলেন, "রাজ্য সরকারের উপর আস্থা রাখলে ভালো হবে কেন ?" বাকি উত্তর দেওয়ার আগেই পরিবারের একজন তাঁকে টেনে ঘরের ভিতরে নিয়ে চলে যান । অর্থাৎ রাজ্য সরকার হোক কিংবা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, কারও উপরই আর আস্থা রাখতে পারছে না আরজি করে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার পরিবার ।
এর আগেও, আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন সিবিআইয়ের আইনজীবীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিল নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার । সেসময় নির্যাতিতার বাবা বলেছিলেন, "সিবিআই মিথ্যা কথা বলছে । এভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে যে মিথ্যা কথা বলা যায়, তা দেখেই আশ্চর্য হচ্ছি । মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টে মনিটরিং হচ্ছে । সিবিআইয়ের আইনজীবী কোর্টে দাঁড়িয়ে বলছে, সিবিআই নাকি সবসময় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে । কিন্তু আমরা তদন্তের ব্যাপারে কিছুই জানি না ।"
এদিকে, আরজি কর মামলায় তিন মাস পর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হওয়ায়, বিচার ব্যবস্থা নিয়েও তোপ দেগেছিলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা ।তবে, নির্যাতিতার পরিবার সুবিচার পেতে বরাবর আন্দোলনকেই হাতিয়ার করেছেন । তাঁরা মনে করেন, সঠিকভাবে আন্দোলন করতে পারলে বিচার মিলবেই একদিন ! সেই আশাতে এখনও পথ চেয়ে বসে আছেন আরজি করে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মা ।