সোদপুর, 5 ডিসেম্বর: চার মাস অতিক্রান্ত ! এখনও মেলেনি সুবিচার । সেই আবহেই এবার আরজি কর-কাণ্ডে ন্যায় বিচার পেতে সিবিআইয়ের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার । প্রয়োজনে সুবিচার পেতে দিল্লি গিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা রয়েছে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মায়ের । সেখানে গিয়ে তাঁদের মনের কথাও জানাতে চান তাঁরা ।
নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারের দাবি, ‘‘আন্দোলনের তীব্রতা বাড়লে চাপে পড়ে একদিন তাঁরাও সাক্ষাৎ করতে বাধ্য হবেন নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মায়ের সঙ্গে ।’’ তাই, পথে নেমে আন্দোলনের মাধ্যমে সিবিআইয়ের উপর চাপ বাড়াতে চান আরজি করে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার বাবা-মা । পাশাপাশি তাঁরা একটি ফেসবুক পেজও খুলেছেন ৷ সেখানে তাঁরা মেয়ের বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন ৷
আরজি করে নিহত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে 119 দিন । সুবিচার পেতে একসময় গর্জে উঠেছিল গোটা বাংলা । অবস্থানে বসেছিলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মাও । এতকিছুর পরেও এখনও অধরা সুবিচার । বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের সামনে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, "119 দিন হয়ে গেল । এখনও আমরা মেয়ের মৃত্যুর সুবিচার পায়নি । তদন্ত সঠিকভাবে চলছে না । বিচার পাওয়া তো দূরস্ত ! এই পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের গায়ে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে । অনেকেই এনিয়ে অনেক কথা বলছেন । কিন্তু, আমরা স্পষ্ট করতে চাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে শুধুমাত্র বিচার দাবিতেই লড়ে যাচ্ছি ।"
সংবিধান দিবসে বিধানসভায় গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন আরজি করে নির্যাতিতার বাবা-মা । তার ব্যাখা দিতে গিয়ে নির্যাতিতার বাবা এদিন বলেন, "শুধুমাত্র বিচার পাওয়ার আশাতেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম । কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয় । ওঁরা সেসময় আশ্বাস দিয়েছিলেন, আমাদের লড়াইয়ের পাশে থাকবেন তাঁরা । কিন্তু, এরপরও আমরা দেখলাম থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত অভীক দে এবং বিরূপাক্ষ বিশ্বাসকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার ।"
প্রসঙ্গত, এই দু'জনকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে আনার চেষ্টার বিরুদ্ধে আগামিকাল অর্থাৎ শুক্রবার পথে নামতে চলেছে জুনিয়র ডাক্তাররা । এই নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানের ডাকও দিয়েছেন তাঁরা । সেই কর্মসূচিতে থাকার কথা এদিন ঘোষণা করেন নির্যাতিতার বাবা-মা ।
এই প্রসঙ্গে নির্যাতিতার মা বলেন, "ঘটনার দিন এঁদের সকলকেই ক্রাইমসিনে দেখা গিয়েছে । সেটা সকলেরই জানা । তারপরও কীভাবে এঁদের রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চালানো হয় ? এটাই আমরা ভেবে পাচ্ছি না । তাই, আমি আহ্বান করব, থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত এঁদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে সকলেই যেন ছাত্রদের আগামিকালের কর্মসূচিতে পা মেলান । প্রয়োজনে নিজের অঞ্চলে আন্দোলনে নেমে এর বিরুদ্ধে গর্জে করুন ।"
আরজি কর-কাণ্ডে এদিন আবারও মেয়ের মৃত্যুর দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপিয়েছেন নির্যাতিতা ছাত্রীর মা । তাঁর কথায়, "রাজ্য সরকারের অধীনস্থ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে । তাই, তার দায় এড়াতে পারে না রাজ্য সরকার । যতই সিবিআই তদন্ত করুক ।" তবে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে মোটেই খুশি নন আরজি করে নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবার । তদন্ত দ্রুত গতিতে করা হোক, সেটাই চাইছেন তাঁরা ।
এদিকে, আরজি কর-কাণ্ডে মাস দু'য়েক আগে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে নিজেদের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেছিলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা-মা । সেই চিঠির জবাব না মেলায় এদিন আক্ষেপ ঝরে পড়েছে তাঁদের ।