দার্জিলিং, 2 জুলাই: অনেক হল টানাপোড়েন! অবশেষে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ 10 নম্বর জাতীয় সড়ক দেখাশোনার দায়িত্ব এবার রাজ্য সরকারের হাত থেকে চলে যেতে বসেছে। এবার থেকে সেই দায়িত্ব পালন করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এমনটাই দাবি করলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা। খুব সম্প্রতি ওই একই দাবি জানিয়েছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাং।
দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করির সঙ্গে দেখা করে বাংলার অধীনে থাকা 10 নম্বর জাতীয় সড়ক দেখাশোনা, মেরামত ও সংস্কারের দায়িত্ব যাতে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দেওয়া হয় সেই দাবি জানিয়েছিলেন সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। এবার একইভাবে ওই দাবি তুললেন সাংসদ রাজু বিস্তা। শুধু তাই নয়, 10 নম্বর জাতীয় সড়কের ঠিকঠাক দেখাশোনা করছে না বাংলার সরকার এবং ওই সড়কের মেরামত ও সংস্কার নিয়ে উদাসীন এবং তাদের গাফিলতিরও অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানান সাংসদ।
সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর পর রাজু বিস্তার থেকে 10 নম্বর জাতীয় সড়কের হালহকিকত জানতেই তৎক্ষণাৎ রাজ্যের পূর্ত দফতরের থেকে সড়ক দেখাশোনার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী নীতিন গড়করি বলে জানিয়েছেন সাংসদ রাজু বিস্তা। উল্লেখ্য, বাংলার দার্জিলিং জেলার করোনেশন সেতু বা বাঘপুল থেকে সিকিমের গ্যাংটক পর্যন্ত মূল 10 নম্বর জাতীয় সড়ক। মোট প্রায় 104 কিলোমিটার ওই জাতীয় সড়কের মধ্যে 87 কিলোমিটার রয়েছে সিকিমের অধীনে।
বাকি 57 কিলোমিটার বাংলার অধীনে। 1968 সাল থেকে ওই জাতীয় সড়ক মেরামত ও সংস্কারের কাজ করতো সিপি ডাব্লুডি। 1980 সালে তা দেখাশোনা শুরু করে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন। কিন্তু প্রায় দশ বছর দেখাশোনার পর তা রাজ্যের পূর্ত দফতরের কাছে হস্তান্তর করে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। মেরামত ও সংস্কারের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিলেও প্রকল্পর কাজ করত বাংলার পূর্ত দফতর। 2016 সাল থেকে পূর্ত দফতরকে বিআরও বাংলার অধীনে থাকা 57 কিলোমিটার জাতীয় সড়ক মেরামত ও সংস্কারের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু সিকিম অংশে দেখরেখের দায়িত্ব নিজেদের হাতেই রাখে বিআরও।
সাংসদ রাজু বিস্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "10 নম্বর জাতীয় সড়ক খালি সিকিম ও বাংলার লাইফলাইন নয়। তার সঙ্গে জড়িত রয়েছে দেশের নিরাপত্তা। এছাড়া গোটা উত্তরবঙ্গের পর্যটন, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ওই সড়কের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু শুধু মাত্র বাংলার সরকারের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণে সড়কের দশা বেহাল। সময়মতো মেরামত ও সংস্কার না-হওয়ার কারণে এখন ওই সড়ককে তিস্তা গ্রাস করছে। আর এখন ওই পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের হাতের বাইরে।
যেকারণে আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়করিকে আবেদন করি যাতে গ্রিফ, এনএইচআইডিসিএল বা এনএইচআইয়ের মতো সংস্থা ওই সড়কের দায়িত্ব নেয়। পুরো বিষয়টি শুনে মন্ত্রী তৎক্ষণাৎ 10 নম্বর জাতীয় সড়কের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মন্ত্রকের আধিকারিকদের শুরু করার নির্দেশ দেন।"
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টির কারণে 10 নম্বর জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গায় ধসের ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েক জায়গায় ফাটলের পাশাপাশি একাধিক জায়গায় সড়ককে গ্রাস করেছে তিস্তা। যে কারণে গত চারদিন ধরে সমস্তরকম যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। এমতাবস্থায় বিকল্প পথ দিয়ে চলছে যাতায়াত। কিন্তু তাতে বিপাকে পর্যটক থেকে সাধারণ মানুষ।