কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি: 'খালিস্তানি' স্লোগান ইস্যুতে এবার বিবৃতি জারি করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ সন্দেশখালিতে পাগড়িধারী অফিসারকে 'খালিস্তানি' কটাক্ষের ঘটনায় ময়দানে নামলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শিখ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর খালিস্তানি ইস্যুতে তাঁর প্রতিক্রিয়ায়ও দিয়েছেন রাজ্যপাল ৷ রাজ্য়পাল আনন্দ বোস বিবৃতিতে লিখেছেন, "আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা, আমাদের পাঞ্জাবি ভাইদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে ৷ আমি আশ্বস্ত করতে চাই আমাদের পাঞ্জাবি ভাইদের, বাংলা আপনাদের পাশে আছে ৷"
গত মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে বিজেপি প্রতিনিধি দলের তরফে কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের উদ্দেশে খালিস্তানি স্লোগান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷ যা নিয়ে রাজনৈতিক কোন্দলের পাশাপাশি শিখ ধর্মাবলম্বিদের তরফেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয় ৷ আইপিএস আধিকারীককে কেন খালিস্তানি হিসাবে দেগে দেওয়া হল তা নিয়েও রীতিমতো পথে নামেন শিখ ধর্মের মানুষরা ৷ এদিন শিখ প্রতিনিধিদের তরফে একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে ৷ এরপর শিখ প্রতিনিধিদের তরফে সাংবাদিকদের বলা হয়, "ওনাকে (রাজ্যপাল) আমরা আমাদের কষ্টের কথা জানালাম।" গুরমিত সিং বলেন, "পাগড়ির অপমান আমরা বরদাস্ত করব না। যারা অভিযুক্ত তাদের সাজা হোক।"
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন রাজ্যপাল বলেন, "দেশে শিখদের ভূমিকা অতুলনীয়। যে আপনাদের অপমান করেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে ৷" একই সঙ্গে, বিষয়টি নিয়ে আজই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে চিঠি লিখবেন বলেও জানিয়েছেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। পাঞ্জাবিদের ক্ষোভ নিরসনে গুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। কবিগুরুর গান আওড়ে, দেশের স্বাধীনতা লড়াইয়ে ভগৎ সিংয়ের ভূমিকাকেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
মৌখিক বৈঠকের পাশাপাশি লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন রাজ্যপাল। আনন্দ বোস শিখ প্রতিনিধিদের বলেন, "কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিতে, জাতির প্রতি তাঁর অভিবাদন পাঞ্জাব, সিন্ধু, গুজরাট, মারাঠা...' দিয়ে শুরু হয়। সেখানে আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যা আমাদের পাঞ্জাবি ভাইদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে। বীর পাঞ্জাবিদের কাছে ভারত অনেক ঋণী। আমাদের পাঞ্জাবি জওয়ানরা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় শক্তিশালী দেয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের পাঞ্জাবি কিষাণরা জাতিকে খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য নিশ্চিত করতে এগিয়ে আছে।"
একই সঙ্গে, তিনি বলেন, "ভারতের সাংস্কৃতিক নীতিতে পাঞ্জাবের মৌলিক অবদান বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। অদম্য জাতীয়তাবাদী স্পৃহা, আপসহীন বীরত্ব, দেশপ্রেম সবই লোকায়ত বিষয়। পাঞ্জাবিদের পাগড়ি একটি অনন্য প্রতীক এবং এটির পবিত্রতা বজায় রাখতে হবে। গুরু নানকদেবকে ভারতীয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক নীতির সবচেয়ে মূল্যবান প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। আমি আমাদের পাঞ্জাবি ভাইদের আশ্বস্ত করতে চাই যে বাংলা আপনাদের পাশে, ভারত আপনাদের পাশে, সমাজ আপনাদের পাশে, আমাদের সংস্কৃতি আপনাদের পাশে। পাঞ্জাবি সম্প্রদায়ের জন্য বাংলার চিরন্তন প্রশংসার প্রতীক হিসেবে রাজভবন তার এলাকার মধ্যে একটি পাঞ্জাবি বাগ তৈরি করবে। কিংবদন্তি স্বাধীনতা সংগ্রামী ভগৎ সিং-এর প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হবে রাজভবন কলকাতায়। আগামী 23 তারিখে তাঁর মৃত্যু দিবসে ওই প্রতিকৃতি উন্মোচন করা হবে।"
আরও পড়ুন
বিবেকানন্দের বাণী আওড়ে সন্দেশখালিতে শান্তি ফেরানোর আর্জি রাজ্যপালের
চোপড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে রাজ্যপাল, বিএসএফের সঙ্গে বৈঠকে সিভি আনন্দ বোস
পুলিশকে 'খালিস্তানি' মন্তব্যের প্রতিবাদ ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে, কাকে 'বাংলার কলঙ্ক' বললেন মমতা?