রায়গঞ্জ, 27 অগস্ট: সোশাল মিডিয়ায় তিনি ঘোষণা করেছিলেন, আরজি কর ইস্যুতে সুবিচার না-পাওয়া গেলে ইস্তফা দেবেন ৷ ওপেন প্ল্যাটফর্মে তাঁর এই ঘোষণা শোরগোল ফেলে দেয় উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৷ আবেগের বশে এই ঘোষণা যে খুব ভালো কাজ হয়নি, তা সম্ভবত বুঝতে পারলেন তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ৷ পরদিনই তিনি এই ইস্যুতে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকলেন ৷ সেখানে নিজের ঘোষণা থেকে 180 ডিগ্রি ঘুরে গেলেন তিনি ৷ তাঁর ঘোষণা নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা হলেও, সদুত্তর দিলেন না রায়গঞ্জের বিধায়ক ৷
আরজি করের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ ৷ মৃত নির্যাতিতার মর্মান্তিক পরিণতি ঘিরে তোলপাড় রাজ্য ৷ এই পরিস্থিতিতে দু’দিন আগে বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী নিজের ফেসবুকের পাতায় একটি পোস্ট করেন ৷ সেই পোস্টে তিনি জানান, "আরজি কর ইস্যুতে যদি জাস্টিস না হয়, সবার আগে দায়িত্ব নিয়ে বললাম, আমি ইস্তফা দেব ৷ প্লিজ বাংলাকে অশান্ত করবেন না ৷ বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএমের উস্কানিতে পা দেবেন না ৷ জয় বাংলা ৷ সেভ বাংলা ৷ সেভ আওয়ার ফ্যামিলি ৷" তাঁর এই পোস্ট ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় উত্তর দিনাজপুর জুড়ে ৷ জেলার রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়, আদপে কৃষ্ণ কল্যাণী ঠিক কী বলতে চাইলেন, তা নিয়ে ৷
বিতর্কের মধ্যে এনিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন কৃষ্ণ ৷ সেখানে একাধিকবার তাঁর ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন করার পরেও, তিনি তা এড়িয়ে গিয়েছেন ৷ আরজি করের ঘটনায় সুবিচার যে হবেই, তা তিনি জানলেন কী করে ? এবার মুখ খোলেন ঘাসফুলের বিধায়ক ৷ তিনি বলেন, "আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তা সত্যিই নিন্দনীয় ৷ আমি ধিক্কার জানাই ৷ পীড়িত পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল ৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন ৷ দোষীদের ফাঁসির দাবি করেছিলেন ৷"
তিনি বলেন, "ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই ৷ তারা যেন দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের ফাঁসিতে ঝোলায়, সেটাই চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ আজ পশ্চিমবঙ্গের কিছু রাম-বামের দল মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে, এই নির্মম কাণ্ডের রাজনীতিকরণ করছে ৷ এটা সঠিক নয় ৷ আইনের উপর আমাদের সবার আস্থা রাখা উচিত ৷ আমরা সবাই দোষীদের ফাঁসি চাই ৷ কিন্তু, আজ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেভাবে রাজ্য উত্তপ্ত হচ্ছে, তা ঠিক নয় ৷ আমরা জাস্টিস চাই ৷ কিন্তু, রাজনীতি চাই না ৷ তাই মানুষকে বলব, আপনারা পথে নেমে প্রতিবাদ জানাতেই পারেন ৷ কিন্তু, কোনও রাজনৈতিক দল বা পতাকার নীচে থাকবেন না ৷ এই ঘটনাকে যেন রাজনৈতিক আকার না-দেওয়া হয় ৷"
অবস্থান বদল করলেও মঙ্গলবার নিজের ঘনিষ্ঠ মহলে কৃষ্ণ কল্যাণী জানিয়েছেন, ছাব্বিশের আগে যদি আরজি কর-কাণ্ডের সঠিক বিচার না হয়, তবে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন ৷ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তো দূরের কথা, তিনি রাজনীতি থেকেই সরে যাবেন ৷ তাঁর এহেন ঘোষণা এখন জেলার বিরোধী শিবিরে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয় ৷
কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তর বক্তব্য, "আরজি করের এই অবস্থা নতুন নয় ৷ রাজ্যে তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দুর্নীতির আঁতুরঘর হয়ে উঠেছে আরজি কর ৷ বিধায়কের এসব অজানা থাকার কথাও নয় ৷ কারণ, সেই সময় তিনি বিধানসভার পিএসি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ৷ যদি সাহস থাকে, তিনি নিজের দলকে এনিয়ে প্রশ্ন করুন ৷" অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য শংকর চক্রবর্তী বলছেন, "মানুষ যে আর এই সরকারকে চাইছে না, তা বিধায়ক বুঝে গিয়েছেন ৷ তাই তিনি ইস্তফা দেওয়ার কথা বলছেন ৷"