কালনা, 18 জুলাই: আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)-এর অধীনে থাকা রাজবাড়ি ক্যাম্পাসে হাজার জনের রান্না হয় কীভাবে ! পুরসভার চেয়ারম্যানের দাদাগিরি নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন ৷ ভালো চোখে দেখছে না তৃণমূল কংগ্রেসও ৷
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার অধীনে থাকা রাজবাড়ি ক্যাম্পাসে কীভাবে 1 হাজার 300 জনের জন্য রান্না হল, কীভাবেই বা ছোট হাতি গাড়ি করে প্রচুর বাঁশ ভিতরে নিয়ে যাওয়া হল ? কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত কেন এই কাজে মদত দিলেন, তা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরেই উঠছে প্রশ্ন ৷ এএসআই-এর অধীনে থাকা পূর্ব বর্ধমানের কালনার রাজবাড়ি ক্যাম্পাসে কীভাবে 1200-1300 দর্শনার্থীদের জন্য ডাল, ভাত, তরকারি, পনির ইত্যাদি রান্না করার জন্য এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার, গ্যাস ওভেন ইত্যাদি জিনিস নিয়ে যাওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
মন্দিরের প্রাঙ্গণ ও প্রবেশদ্বারে বাইক বা ই-রিকসা ঢুকতে দেওয়া হয় না ৷ অথচ কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান জোর করে নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা মেরে টোটোতে চাপিয়ে জলের বেশ কিছু জার ভিতরে নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে বাধা দেওয়ার কারণেই তৃণমূল নেতা তথা কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত একজন নিরাপত্তারক্ষীকে গালিগালাজ করে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ভিতরে জলের গাড়ি নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কালনা সাব সার্কেলের পক্ষ থেকে সুপারিনটেন্ডেন্ট আর্কিওলজিস্টের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷
ইতিমধ্যে কালনার পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তৃণমূলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বিজেপিও সরব হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। প্রশ্ন উঠছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে কেন এখনও পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ? আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কালনা সার্কেলের তরফে জানা গিয়েছে, ওই রাজবাড়ি চত্বরে প্রবেশ করার জন্য বেশ কিছু নিয়মকানুন আছে। সেই নিয়ম মেনে ভিতরে কোনও কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার 1959 সালের আইন অনুযায়ী তা দণ্ডনীয় অপরাধও।
কালনার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, "একজন জনপ্রতিনিধির এই ধরনের আচরণ করা উচিত নয়। তাঁদের অনেক সংযতভাবে থাকা উচিত। সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছেই তো মানুষ আসে। ভিডিয়ো থেকে যেটা দেখলাম সেটা খারাপ হয়েছে। আমাদের দল এই ধরনের আচরণকে সমর্থন করে না। বিষয়টি দলের উপরে জানানো হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে এমনিতেই বলা আছে যারা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে তাদের স্থান দলে হবে না। দল এই ধরনের আচরণ কে সমর্থন করছে না।"
বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সহসভাপতি সুভাষ পাল বলেন, "রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস আজ নিজেদের মতো করে সংবিধান তৈরি করে চালাতে চায়। এদের কাছে জনপ্রতিনিধি নামেই জনপ্রতিনিধি। এদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। মানুষ এদের কাছে ভালো কিছু আশা করে না। এদের কাজকর্ম নিয়ে নিন্দে করার ভাষা নেই।"
প্রসঙ্গত, কালনা রাজবাড়ি চত্বরে একটা টোটোয় চাপিয়ে জল নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। ওই টোটোতে চাপিয়ে রাজবাড়ী চত্বরে জলের ক্যান নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই সময় সেখানে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি রাজবাড়ির ভিতরে জলের ক্যান নিয়ে যেতে বাধা দেয়। পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত তখন তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে ৷