কলকাতা, 21 জুন: এই মুহূর্তে জাতীয় ক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় অবশ্যই নিট এবং নেট পরীক্ষা । প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং তাকে কেন্দ্র করে নানা অভিযোগকে নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। এরই মাঝে একটা অন্য আশঙ্কার দিক তুলে ধরেছেন কেরলের সিপিএম সাংসদ জন ব্রিটাস। বৃহস্পতিবার তিনি সোশাল মিডিয়ায় নিট এবং নেটের কতগুলি প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে ধরে যথেষ্ট আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ৷ নিট এবং নেটের মতো যুক্তিগ্রাহ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে যেভাবে হনুমান তথা পৌরাণিক বিষয়গুলি প্রশ্নপত্রে জায়গা করে নিচ্ছে তাতে গৈরিকীকরণের ছায়া দেখছেন এই সিপিএম সাংসদ । তবে একা তিনি নন, এক্ষেত্রে আশঙ্কার কালো মেঘ দেখছেন এই রাজ্যের শিক্ষাবিদ থেকে বাম এবং তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ বিশেষ করে এই যুক্তিগ্রাহ্যক্ষেত্রে ধর্মের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারাও।
প্রসঙ্গত, সিপিএম সাংসদ জন ব্রিটাস টুইটে লেখেন, "যখন নিট ও নেট নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, দেখুন কীভাবে গৈরিকীকরণ করা হচ্ছে ।" তিনি আরও লিখছেন, "নেটের ক্ষেত্রে যারা থিয়েটার নিয়ে পড়াশোনা করছেন তাঁদের জন্য প্রশ্ন এসেছে অযোধ্যায় প্রাণপ্রতিষ্ঠার তারিখ। কীভাবে হনুমানকে রামায়ণে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কীভাবে মহাভারতে তিনি বেঁচে থাকলেন। এসবের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা কিভাবে তৈরি করতে চাইছি ।"
একই আশঙ্কার কথা শোনাচ্ছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জওহর সরকার। তিনি বলেন, "হিন্দুত্ববাদীরা যা শুরু করেছে তাতে তারা তাদের অজ্ঞতার সীমা দেখাতে পারছে না। তারা যে ধর্ম-কর্মের বাইরে কিছুই বোঝে না ৷ তারই পরিচয় তারা দিচ্ছে। নিট ডাক্তারদের জন্য, আর নেট প্রফেসরদের জন্য, যারা পড়াবেন ভবিষ্যতে। সেখানে বিজ্ঞানভিত্তিক বা যুক্তিতর্কভিত্তিক জ্ঞানের যাচাই করা উচিত। সেখানে তারা হিন্দু ধর্ম কতটা জানে সেটা যাচাই করার চেষ্টা হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণভাবে নিন্দনীয়। এই প্রথা চলতে পারে না।" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "ওরা দেখেছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করে উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন জায়গায় ওরা জিততে পারেনি। তারপরেও ওদের কিন্তু শিক্ষা হচ্ছে না। আজ ওরা গোটা বিশ্বকে ওদের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে চাইছে।"
একা জওহর সরকার নয়, একই বিষয় নিয়ে সমালোচনার সুর সোনা গিয়েছে সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্যের গলাতেও। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, জন ব্রিটাস কী লিখেছেন তিনি দেখেননি। তবে এই কথা যদি সত্যি হয় তাহলে তা যথেষ্ট আশঙ্কার কারণ বই কি ! বিকাশ ভট্টাচার্যের কথায়, "যদি সত্যিই এমনটা হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষার মধ্যে অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারকে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এরা চাইছেন এমন একটি প্রজন্ম যে প্রজন্ম স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারবে না, যুক্তিসঙ্গত জীবন যাপন করতে পারবেন না। অন্ধবিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে নেতাদের কথায় আত্মাহুতি দিতে পারবে। তিনি আরও বলেন একেবারে ফ্যাসিবাদী কায়দায় এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিপদই হল এটা।"
শুধু রাজনৈতিক নেতা নয়, এই ধরনের প্রয়াসের তীব্র নিন্দা করছেন বিশিষ্ট পুরাণবিদ তথা শিক্ষাবিদ নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী । তাঁর কথায়, "নেট বা নিটের ক্ষেত্রে এই ধরনের পৌরাণিক প্রশ্নের প্রয়োজনীয়তা কী ! সবটাই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। রাজা যত বলে তার চেয়ে শতগুণ বলেন পারিষদেরা। যেমন রাজা তার প্রচারও সেরকমই হয়েছে।" তিনি এমনটাও বলছেন, "এসব নিয়ে এত বেশি আলোচনার প্রয়োজন নেই। বরং তাতে ওদের অনেক বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে মনে করছেন তিনি।" একইভাবে, নেটের প্রশ্নে এভাবে পৌরাণিক বিষয়ের সংযুক্তির কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, "এর মাধ্যমে ধর্মীয় কুসংস্কারকেই প্রমোট করা হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল হবে ।’’ তার কথায় এমনটা না হওয়াই ভালো ছিল ।