দিনহাটা, 1 জুলাই: খাদ্যরসিক মানুষের রসনাতৃপ্তির জন্য এক টুকরো আলু, এক পিস মাংস ও সাদা-হলুদ ভাতেই যেন পাতে নেমে আসে স্বর্গ ৷ তবে এহেন খাবার যেভাবে তৈরি হচ্ছে তা দেখে চক্ষু চড়কগাছ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রশাসনের ৷ পাশে রয়েছে সেপটিক ট্যাঙ্ক ৷ টিন দিয়ে ঘেরা ৷ সেখানেই বসে দিব্য চলছে পিঁয়াজ কাটা থেকে শুরু করে মশলা তৈরি ৷ এখানেই শেষ নয় ৷ বিরিয়ানিতে ব্যবহার করা হচ্ছে দীর্ঘদিনের বাসি-পচা মাংস ৷ সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর মশলা ৷ কোচবিহারের 'আরসালান' নামক একটি দোকানে এমন বিরিয়ানি বিক্রি দেখে মাথা ঘুরল স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের ৷
যদিও এই আরসালান দোকানের সঙ্গে কলকাতার জনপ্রিয় বিরিয়ানি রেস্তোরাঁর কোনও সম্পর্ক নেই আছে কি না, তা স্পষ্ট নয় ৷ তাছাড়া শুধু আরসালান নয়, বিভিন্ন সময়ে একাধিক বড় সংস্থার সঙ্গে নামের মিল রেখে বিরিয়ানি-সহ বিভিন্ন খাবারের দোকান খোলা হয় ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, মূল সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দোকানের কোনও যোগ নেই ৷ এখানেও তেমন কিছু হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি ৷
সোমবার দুপুরে একাধিক অভিযোগ পেয়েই দিনহাটা শহরের বিভিন্ন বিরিয়ানির দোকানে অভিযান চালালেন স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভার প্রতিনিধিরা। দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরিশঙ্কর মাহেশ্বরী এবং দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডা: রনজিত মণ্ডলের নেতৃত্বে চলে এই অভিযান ৷
গৌরীশঙ্কর মাহেশ্বরী বলেন, "বেশকিছুদিন ধরেই আমাদের কাছে বিরিয়ানির দোকান ও কারখানা নিয়ে অভিযোগ আসছিল। এদিন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি ও কাউন্সিলদের নিয়ে অভিযান চালানো হয়। বেশ কিছু দোকান থেকে ক্ষতিকর খাবারের মশলা এবং পচা মাংস উদ্ধার করা হয়েছে ৷ এরপরেই সেই দোকানগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।" দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের সুপার ডা: রনজিত মণ্ডল বলেন, "দোকানগুলো ঝাঁ চকচকে হলেও খাবারে ক্ষতিকর জিনিস ব্যবহার করা হচ্ছিল ৷ কোনওরকম স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছিল না ৷ ফলে এই সব দোকানের খাবার খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন ৷"
জানা গিয়েছে, দিনহাটা শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো তৈরি হয়েছে বিরিয়ানির দোকান। ঝাঁ চকচকে দোকানগুলোয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানা ধরনের বিরিয়ানি বিক্রি হয়। তবে যেভাবে বিরিয়ানি তৈরি হয় তা অস্বাস্থ্যকর। অভিযোগ, সেই বিরিয়ানি খেয়ে নাকি অনেকেই অসুস্থ হয়েছেন ৷ এরপর এদিন অভিযান চালানো হয় পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ৷ হাসপাতাল মোড়, গোধূলীবাজার, পুরানো বাসস্ট্যান্ড, শহীদ কর্নার এবং শীতলাবাড়ি মোড় এলাকার বিভিন্ন দোকানে অভিযান চলে।
শহীদ কর্নার এলাকার এক বিরিয়ানির দোকান থেকে পচা মাংস উদ্ধারের ঘটনায় ওই দোকানটি বন্ধ করেও দেওয়া হয়। গোপালনগর এলাকার এক বিরিয়ানির দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সেপটিক ট্যাঙ্কের পাশেই খাবার তৈরি হচ্ছে। সেই কারখানাও বন্ধ করে দেন প্রশাসনের কর্তারা।