শেওড়াফুলি, 21 সেপ্টেম্বর: নেই মৃন্ময়ী মূর্তি, না-আছে আড়ম্বর, আছে শুধুই আভিজাত্য। সেভাবেই চলে আসছে শেওড়াফুলি রাজবাড়ির মাতৃ আরাধনা। রাজত্ব না-থাকলেও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করে আসছেন এই রাজ পরিবার। ইটিভি ভারত তুলে ধরল সেই প্রাচীন রাজ পরিবারের পুজোর ইতিহাস ৷
রাজ পরিবারের পুজোর আদিকথা-
- কথিত রয়েছে, বর্ধমানের পাটুলির রাজা মনোহর রায় মা সর্বমঙ্গলার স্বপ্নাদেশ পান ৷ দেবী স্বপ্নে তাঁকে বলেন পুষ্করিণী খনন করে তাঁকে তুলে আনতে ৷ সেইমতো তিনি পরদিন সকালে দুর্গারূপী মাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন ৷ 1734 সালে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে মন্দির করে স্থাপন করেন দেবীকে ৷ দেবী কাত্যায়নী রূপে মা পূজিত হন এখানে। অষ্টধাতুর অদ্ভুত মূর্তি। সেই থেকে বাংলার প্রাচীণ মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তি রূপে রাজ পরিবারের পুজো হয়ে আসছে ৷
- শেওড়াফুলি রাজবংশ মুঘল সম্রাটদের দ্বারা সম্মানিত। শ্রীরামপুরে ডেনিস উপনিবেশ থাকাকালীন শেওড়াফুলি রাজাদের ডেনিশরা 1601 টাকা বার্ষিক খাজনা দিত। শ্রীরামপুর কোর্টের জমি সর্বমঙ্গলা দেবীর নামে দেবত্ব সম্পত্তি। সেই কারণে ইংরেজ আমলে এই রাজ পরিবারকে 50 টাকা কর দিতে হত তাদের। মায়ের নামের সমস্ত রাজত্ব চলত।
দেবীর বিশেষত্ব-
- এই মূর্তি দেখতে দশভূজারূপে সিংবাহিনী। এখানে সিংহের মুখ ঘোড়ার মতো। দশ হাতের দুর্গা ত্রিশূল নিয়ে মহিষাসুরকে বধ করছেন। দুর্গাপুজো ছাড়াও নিত্যদিন পুজো হয় দেবীর। এ বছর 25 সেপ্টেম্বর কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে বোধনের ঘট বসে পুজো শুরু হবে। নিত্যদিন চলে চণ্ডীপাঠ। মায়ের কাত্যায়নী রূপ, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী এখানে পূজিত হন না। দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীতে নবপত্রিকার কলা বউয়ের পুজো হয়। সমস্ত নিয়ম মেনে মা দুর্গার আরাধনা হয় ৷
- আগে এখানে মোষবলি হত ৷ বর্তমানে হয় ছাগবলি ৷ কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে এই রাজ পরিবারে ৷ ষাটের দশকের শেষে মন্দিরের দরজা ভেঙে মা সর্বমঙ্গলাকে চুরি করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্ত এই অষ্টধাতুর মূর্তি অত্যধিক ওজনের কারণে চোররা মাকে যেতে পারেনি। মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। চালের নৈবেদ্য ও লুচিভোগের প্রচলন রয়েছে।
পরিবারের সদস্যরা কী বলছেন?
- শেওড়াফুলি রাজ বাড়ির বর্তমান উত্তরাধিকার বাসবী পাল বলেন, "বর্ধমানের পাটুলিতে আসল রাজপ্রাসাদ ছিল। কিন্তু গঙ্গাভাঙনে দু'টি প্রাসাদ তলিয়ে যায়। এরপর থেকে শেওড়াফুলিতেই পাকাপাকি বাস শুরু হয় রাজাদের। এবছর 291তম বর্ষে পদার্পণ আমাদের পুজোর ৷"
- রাজবাড়ির আরও এক সদস্য সৌরদীপ ঘোষ বর্মন বলেন, "প্রাচীন বাংলার দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী রূপেই মা পূজিত হতেন। শেওড়াফুলির এই মা সর্বমঙ্গলার নামেই রাজ্যের পাঁচটি জেলায় দেব সম্পত্তি রয়েছে। তবে বর্তমানে তা সবই সরকারের অধীনে।"