সন্দেশখালি, 9 ফেব্রুয়ারি: এবার জনরোষের তত্ত্বই কি বুমেরাং হয়ে ফিরল তৃণমূলের দিকে ? এই প্রশ্ন ওঠার নেপথ্যে রয়েছে শাসকদলের সেই পুরনো জনরোষের তত্ত্ব ! একমাস আগে সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে ইডি আধিকারিকদের আক্রান্ত হওয়ার পর শাসকদলের একের পর এক নেতার মুখে উঠে এসেছিল 'জনরোষের তত্ত্ব' । সেই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সংযোগ নেই বলেও দাবি করেছিলেন স্থানীয় নেতারা । উলটে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির সক্রিয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা । সেই ঘটনার একমাস পর সন্দেশখালিতে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আগুন যেভাবে জ্বলতে শুরু করেছে, তাতে শাসকের সেই জনরোষের তত্ত্বই মনে করিয়ে দিয়েছে অনেককে ।
তবে স্থানীয়দের একাংশের দাবি, তৃণমূলের 'বাহুবলী' নেতা শেখ শাহজাহান এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের এই ক্ষোভ একদিনের নয় ! তাঁদের দীর্ঘদিনের ‘অন্যায়-অত্যাচার’ সহ্য করতে করতে আজ গ্রামবাসীদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে । তাই, গণজাগরণ শুরু হয়েছে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীদের মধ্যে । বাঁশ, লাঠিসোঁটা, দা, কুড়ুল হাতে নিয়ে গ্রামের আদিবাসী মহিলারা বেরিয়ে এসেছেন ঘর থেকে ।
শুধু তাই নয়, লাগাতার তিনদিন যাবৎ একটানা বিক্ষোভ, থানা ঘেরাও কর্মসূচি করে শাহজাহান এবং তাঁর দলবলের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় মহিলারা । শুক্রবারও উত্তর 24 পরগনা জেলা পরিষদের দুই তৃণমূল সদস্য শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারের বিরুদ্ধে বড়সড় আন্দোলন হয় ৷ সেই আন্দোলন ঠেকাতে সন্দেশখালি থানা চত্বরে 144 ধারা জারি করে প্রশাসন । তাতে আদৌও কোনও কাজ হয়নি ৷ বরং শেখ শাহজাহান এবং তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সরদারের গ্রেফতারের দাবিতে গ্রামবাসীরা যে এককাট্টা, তা তাঁদের আন্দোলন থেকেই স্পষ্ট । স্থানীয় বাসিন্দা সাবিত্রী সরদার, মহারানি সরদাররা ওই তিন তৃণমূল নেতার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ৷
স্থানীয় সূত্রের খবর, যে সমস্ত গ্রামবাসী পথে নেমে শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন । তাঁদের অধিকাংশই তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত । অভিযোগ, দলের নাম ভাঙিয়ে গ্রামবাসীদের শোষণ করতেন শাহজাহান, শিবু, উত্তম ও তাঁদের সহযোগীরা । সেই নেতাদের শোষণরাজ খতম করতেই পালটা গ্রামের তৃণমূল সমর্থক মহিলারা পথে নেমে সোচ্চার হয়েছেন তাঁদের অনৈতিক কাজকর্মের প্রতিবাদ জানাতে । যা টানা তিনদিন অব্যাহত রয়েছে সন্দেশখালিতে ।
এদিকে, সন্দেশখালিতে বিক্ষোভ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে । এর মধ্যে তিনজন গ্রামবাসীও রয়েছেন । পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতা শিবুপ্রসাদ হাজরার পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরানোর ঘটনায় ওই তিন গ্রামবাসীকে পাকড়াও করা হয়েছে । এই নিয়ে শিবপ্রসাদ হাজরা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সন্দেশখালি থানায় । গ্রামবাসীদের আরও একটি অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দুই তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে । যদিও, যাঁদের গ্রেফতারের দাবিতে সন্দেশখালি জ্বলছে, সেই শাহজাহান, শিবু ও উত্তম কারোরই এখনও পর্যন্ত ধরতে পারেনি পুলিশ । ফলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশই ওই তিন তৃণমূল নেতাকে নিরাপত্তা দিয়ে 'সেফ' জায়গায় রেখে দিয়েছে । যাতে তাঁদের কোনও সমস্যার মুখে না পড়তে হয় !
অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা যে 117 জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন সন্দেশখালি থানাতে, সেই অভিযোগপত্রের প্রথমেই নাম রয়েছে সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সরদারের । তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে মানুষ অভিযোগ জানাতে গিয়ে সুরাহা পায়নি ৷ উলটে উত্তম সরকারের হুমকির মুখে পড়তে হয় ৷ সেই কারণেই মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বিক্ষোভ করছেন ৷ আর বিজেপি নেতা রাজেন্দ্র সাহার দাবি, এই ধরনের জনরোষ এবার সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়বে ৷
শুক্রবার সকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ সন্দেশখালি । বড়সড় গন্ডগোলের আশঙ্কায় এ দিন সকাল থেকে এলাকার বিভিন্ন দোকানপাট বন্ধ করে রাখা হয় আগে থেকেই । শুধু ব্যবসায়ীরাই নয় ! লাগাতার অশান্তির জেরে প্রভাব এসে পড়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জীবনেও । তাঁরাও চাইছেন, সন্দেশখালিতে আবারও শান্তি ফিরে আসুক !
আরও পড়ুন: