কলকাতা, 23 অক্টোবর: মেডিক্যালের ছাত্রীরা রাতভর পার্টি না-করলেই পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেকের নাম করে মেডিক্যালের নবাগত ছাত্রদের থেকে তোলাবাজি ৷ আরজি করের নির্যাতিতার ধর্ষণ ও খুনে সঞ্জয় রায়কেই একমাত্র দোষী হিসেবে তুলে ধরতে ছাত্রদের ব্রেনওয়াশ ৷ এসএসকেএম-এর পিজিটি ছাত্র অভীক দে-র বিরুদ্ধে এমনই বিস্ফোরক সব অভিযোগ এনে স্বাস্থ্যভবনে রিপোর্ট পেশ করল তদন্ত কমিটি ৷ অভীক দে যে সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে ৷
আরজি কর-কাণ্ডের পর যে চিতিৎসক ছাত্রদের নামে নানা অভিযোগ উঠেছিল, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অভীক দে ৷ অভিযোগ ওঠে, তিনিই মেডিক্যাল কলেজগুলিতে থ্রেট কালচারের অন্যতম মাথা ৷ তাঁকে সাসপেন্ডও করে স্বাস্থ্যভবন ৷ গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি ৷ সেই তদন্ত কমিটিই চলতি মাসে 15 পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছে স্বাস্থ্যভবনে ৷ সেখানে অভীক দে-র বিরুদ্ধে 32টি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে ৷ সেই রিপোর্টে অভীক দে-র যে 'কীর্তি'র কথা তুলে ধরা হয়েছে, তা দেখলে আতঙ্কে শিউড়ে উঠতে হয় ৷ রিপোর্টের একটি কপি এসেছে ইটিভি ভারতের হাতে ৷
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে বারবার উঠে এসেছে চিকিৎসক অভীক দে-র নাম । তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের পিজিটি । কিন্তু 9 অগস্ট আরজি করের সেমিনার ঘরের ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে । তদন্ত কমিটির রিপোর্টের 2 নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, অভীক দে যে সার্জারি বিভাগে এমএস করছিলেন, তা একদমই নিয়ম বহির্ভূত । কারণ তিনি থিসিস পেপার জমাই করেননি । এমনকি নিজের আইকার্ডও গ্রহণ করেননি । আট অগস্ট থেকে এসএসকেএম হাসপাতালেও তাঁকে দেখা যায়নি ।
আবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে মৃতদেহ উত্তরাখণ্ডে পাচারের কাজেও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই পিজিটির বিরুদ্ধে । এমনকি আরজি করের নির্যাতিতার ঘটনা নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ইউজি-র পড়ুয়াদের 'ব্রেন ওয়াশ'ও করেছিলেন এই অভীক দে । তিনি 11 অগস্ট সবাইকে বুঝিয়েছিলেন, সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ই এই ঘটনায় একমাত্র দোষী ।
তবে এখানেই শেষ নয়, রিপোর্ট বলছে, মহিলাঘটিত বিষয়েও জড়িয়ে আছেন অভীক দে । রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীদের জোর করে রাতভর পার্টি করতে বাধ্য করতেন তিনি । যদি সেই পার্টিতে কোনও ছাত্রী না যেতেন, তাহলে তাঁকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিতেন অভীক । তবে তাঁকে এই কাজে আরও অনেকেই সাহায্য করতেন । অভীক দে যে আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সে কথাও স্পষ্ট করা আছে এই 15 পাতার রিপোর্টে । তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ভয়ানক সব থ্রেট কালচারের সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন এই অভীক দে । তার সঙ্গে রয়েছে আর্থিক তছরুপের কর্মকাণ্ডও ।
তদন্ত কমিটি তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের দার্জিলিং ক্যাম্পাসে অভীক দে-র বেআইনি উপস্থিতির কথা । সেই ক্যাম্পাসে মাঝেমধ্যেই নবাগত পড়ুয়াদের কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে টাকা তোলারও অভিযোগ রয়েছে অভীকের বিরুদ্ধে । এমনকি মেডিক্যাল কলেজের সরকারি জিনিস ব্যবহার ও সরকারি হলে কারও অনুমতি না-নিয়ে নিজের জন্মদিনও পালন করতেন তিনি । এই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংগৃহীত প্রমাণ এবং সে বিষয়ে অভীক দে-র বয়ানও রিপোর্টের সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি ৷ তারা অভীকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যভবনের কাছে ৷