কলকাতা, 30 জুলাই: প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দু’টি মামলার শুনানিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ সেই কারণে মঙ্গলবার ওই দু’টি মামলার শুনানি আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ৷ পরবর্তী শুনানির জন্য তিনি আগামী 17 সেপ্টেম্বরের দিনটিকে বরাদ্দ করেছেন ৷ ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ উঠে গেলে ফের এই মামলার শুনানি হবে তখন ৷ না হলে তা আবার পিছিয়ে যাবে ৷
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত রমেশ মালিক ও সৌমেন নন্দী মামলা দু’টির উপরই গত 15 জুলাই স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস ওক ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসির বেঞ্চ ৷ কিন্তু এই নিয়ে তদন্তে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি শীর্ষ আদালত ৷ তার পরও আইনজীবীদের একাংশের আশঙ্কা, এর ফলে তদন্তেও প্রভাব পড়বে ৷ আদালতে শুনানি স্থগিত থাকলে তদন্তের গতি মন্থর হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে ৷
এই মামলা দু’টির তদন্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের বিষয়টি ৷ এই দু’টি মামলার সূত্র ধরেই বিচারপতি সিনহা ওই সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিকে দুর্নীতির সংযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৷ এই সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জড়িয়ে রয়েছে ৷ এই নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, "কিন্তু সিবিআই-ইডি তদন্তে কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত ।"
উল্লেখ্য, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত রমেশ মালিক ও সৌমেন নন্দী মামলা দু’টিতে অভিযোগ করা হয় যে 2014 সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে 2016 সালে প্রায় ৪৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল । বর্তমানে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করছেন তাঁরা । কিন্তু ওই শিক্ষকদের নিয়োগে একাধিক গলদ রয়েছে । পরীক্ষায় ওএমআর কারচুপি-সহ র্যাঙ্ক জাম্পিং-এর মতো একাধিক ঘটনা ঘটানো হয়েছে ৷ চাকরি হয়েছে অর্থের বিনিময়ে ৷
মামলাকারীদের আরও অভিযোগ, প্রায় 900 জনকে সুপার নিউমোরারি পোস্ট তৈরি করে নিয়োগ করা হয়েছিল ৷ এই সমস্ত বিষয়ে তদন্ত করছে সিবিআই । সিবিআই প্রাথমিক ভাবে 100 জনের মতো প্রার্থীর নথিতে গলদ পেয়েছে বলে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে রিপোর্ট দিয়ে জানিয়েছিল । সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিচারপতি সিনহার নির্দেশে 94 জনের চাকরি বাতিল করেছিল ।
তবে হাইকোর্টের নির্দেশে যে 94 জনের চাকরি গিয়েছিল তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত । সেই ব্যাপারে মামলাকারীর আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত মঙ্গলবার বলেন, ‘‘যে 94 জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, তাদের ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কোনও তথ্য সুপ্রিম কোর্টকে দেয়নি । ফলে সুপ্রিম কোর্ট আপাতত ওদেরকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার নির্দেশ দিয়েছে ।’’
অন্যদিকে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া কুন্তল ঘোষের চিঠির সূত্রে বিচারপতি সিনহা ইডিকে নির্দেশ দেন নিয়োগ দুর্নীতির টাকা কোনোভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোম্পানি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে বিনিয়োগ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ৷ অভিষেকের কোম্পানির আয়ের উৎস কি এই মামলার সূত্রে একাধিকবার জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি সিনহা ।
এখন প্রশ্ন হল সুপ্রিম কোর্ট যদি শুনানিতে স্থগিতাদেশ না তোলে, তাহলে কি সেই তদন্তে প্রভাব পড়বে ?