কলকাতা 1 ডিসেম্বর: এমনিতেই বাজারে আগুন ৷ মাথা খারাপ করে দিচ্ছে আলু-পিঁয়াজের দর ৷ প্রাতঃরাশে ডিম-পাউরুটির স্বাদ থেকেও অনেকে আজ বঞ্চিত সম্প্রতি ডিমের লাগামছাড়া দামবৃদ্ধিতে ৷ যাঁরা ব্রেকফাস্টে শুধু বাটার-টোস্ট বা কেক-বিস্কুট খেয়ে কাজ চালাচ্ছিলেন এবার তাঁদেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে চলেছে ৷ খুব শিগগিরই রাজ্যে পাউরুটি ও কেকের দাম বাড়তে চলেছে ৷ শনিবার একথা জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক শেখ ইসমাইল হোসেন ৷
তিনি বলেন, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেল-সহ আনুসঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় খুব শীঘ্রই পাউরুটি, কেক, বিস্কুটের দাম বাড়তে চলেছে । শনিবার মিলন মেলা প্রাঙ্গণে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খুব শীঘ্রই সাংবাদিক সম্মেলন করে পাউরুটি ও কেকের দাম বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হবে ।
বেকারি শিল্পে দাম বৃদ্ধি রুখতে বিস্কুট, কেক তৈরির জন্য যে কাঁচামাল লাগে অর্থাৎ ময়দা, চিনি, ভোজ্যতেল, সরকার নিয়ন্ত্রিত দামে সরবরাহের দাবি তুলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি । তাদের দাবি, বেকারি শিল্পের প্রসার বাড়লে রাজ্যে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছোট ছোট শিল্প গড়ার আগ্রহ বাড়বে ।
এদিন সংস্থার সম্পাদক শেখ ইসমাইল হোসেন রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, বেকারিজাত দ্রব্যের গুনগত মান জানার জন্য একটি উন্নতমানের পরীক্ষাগার তৈরি করা প্রয়োজন । খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের উদ্যোগে বেকারি মালিক ও শ্রমিকদের জন্য একটি আধুনিক প্রশিক্ষণাগার তৈরি করা দরকার । তিনি আরও বলেন, বেকারি শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্যের আধুনিকীকরণে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা প্রয়োজন । বেকারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও করা দরকার । ইসমাইল হোসেনের কথায়, "মিড-ডে মিল প্রকল্পে রাজ্যের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রত্যেকটি স্কুলে রান্না করা খাবারের পরিবর্তে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বেকারিতে তৈরি পাউরুটি বিতরণ ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন ।"
এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা দফতরের কমিশনার তপনকান্তি রুদ্র বলেন, "বেকারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা সমাজের বন্ধু । তাই তাঁরা সমাজে গুনগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে খাবার সরবরাহ করেন ।এখন আমাদের জমিতে যে সমস্ত ফসল উৎপাদন হয় সবটাই বিষ প্রয়োগ করে । জমির উর্বরতা হারিয়ে যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক ব্যবহার করার জন্য । আর প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহার করায় উৎপাদিত শস্যে প্রবেশ করছে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ । আর শুধুমাত্র এর জন্য 10 শতাংশ মানুষ বিভিন্ন মারণ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ।"
তিনি রাজ্য সরকারের খাদ্য সুরক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, "সারা রাজ্যে 28টি ইউনিট তৈরি হয়েছে । এই ইউনিটগুলি খাদ্য সুরক্ষায় কাজ করছে 23টি জেলায় । অত্যধিক রাসায়নিক ও কীটনাশন প্রয়োগ করে ফলানো ফসল থেকে ফুড অ্যালার্জি এবং নানা মারণ রোগ হচ্ছে । এখন গ্রামঞ্চলে তৈরি হয়ে গিয়েছে মোবাইল ল্যাবরেটরি । জেলার সদরে যোগাযোগ করলে বাড়ির কাছে পৌঁছে যাবে খাদ্য সুরক্ষার দিকটি পরীক্ষা করার জন্য গাড়ি ।"
ওয়েস্ট বেঙ্গল বেকার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সদস্য সুকল্যাণ বিশ্বাস এদিন ওজন ও পরিমাপ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎপল রায় চৌধুরী বলেন, "প্রতিদিন সকালে উঠেই আমাদের খাদ্য তালিকায় থাকে যে সমস্ত খাবার, তার মধ্যে পাউরুটি অন্যতম । কাজেই প্রত্যেক কারখানা মালিককে খাদ্য সুরক্ষার উপর জোর দিতে হবে ।"
এছাড়াও এদিন বক্তব্য রাখেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে গবেষণারত ড. বিধান দাস ও ড. প্রশান্ত বিশ্বাস, সংস্থার সভাপতি দিয়ানাত আলি খান, সংগঠনের চেয়ারম্যান প্রত্যুষ জানা-সহ প্রমুখ । বিশিষ্টজনেরা শেখ ইসমাইল হোসেন সম্পর্কে বলেন, চার দশক ধরে বেকারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি । তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজও বেকারি শিল্প রাজ্যজুড়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ।