কলকাতা, 27 জানুয়ারি: কেন্দ্রের পদ্ম পুরস্কারের প্রকাশিত তালিকায় ছিল তাঁর নাম। তিনি হলেন কলকাতার নামজাদা মৃৎশিল্পী সনাতন রুদ্র পাল। বাবা ছিলেন মোহনবাঁশি রুদ্র পাল ৷ দুই প্রজন্মই নামজাদা শিল্পী। সাবেকি থেকে থিমের প্রতিমা তৈরি সবেতেই স্বচ্ছন্দ সনাতন রুদ্র পাল। তাঁকে সাবেকি প্রতিমার জাদুকর বলা হয়। পুজোর সঙ্গে যুক্ত লোকজনের মধ্যে প্রচলিত আছে মৃন্ময়ী প্রতিমায় সনাতন রুদ্র পাল যেন চিন্ময়ী রূপ দান করেন। এই কাজ করে দেশের সরকার তাঁকে এত বড় সম্মান দেবে তা জীবনেও ভাবেননি তিনি। পদ্মশ্রী প্রাপক তালিকায় তাঁর নাম আসায় স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত সনাতন রুদ্র পাল। ইটিভি ভারতের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় ভাগ করে নিলেন নিজের উচ্ছ্বাস, আবেগ ও আক্ষেপ।
সনাতন রুদ্র পালের কথায়, "এই পুরস্কার পেয়ে আমি আপ্লুত। এর ভার আমি একা বহন করতে পারব না। সব মৃৎশিল্পী, সহকর্মীদের সঙ্গেই এই আনন্দ, সম্মান ভাগ করে নিতে চাই।" কেন্দ্রের তরফে এই সম্মান পাওয়ায় আবেগাপ্লুত শিল্পী বলেন, "আমাদের কাছের লোকের যদি সহযোগিতা পাই তাহলে দূরের লোক তো সহযোগিতা করবেই। আমি এটুকু মনে করি যে, আমার ঘরের দিদি যদি আমায় কোনও পুরস্কার দেন তাহলে আমি সব থেকে বেশি আনন্দ পাব। তাঁকে সবসময় দেখি। সবসময় কাছে পাই। তিনি যদি মাথায় হাত বুলিয়ে দেন তাহলে তার আদরটা আলাদা। দূর থেকে কেউ হাত দেখালে সেটা আলাদা। তবু কেন্দ্রীয় সরকার আমাকে পুরস্কার দিয়েছে। আমি ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।"
বছর 50 ধরে এই কাজ তিনি করে চলেছেন। একসময় মৃৎশিল্পীদের সরকারের তরফে পুরস্কার দেওয়া হত। সেটা বহুকাল বন্ধ। তবে কসবা সুনীল নগরের পুজোর জন্য তিনি একটি মূর্তি গড়েন। সেই মূর্তিকে একটি বেসরকারি সংস্থা সেরার সম্মান দেয়। সেটাই তাঁর জীবনের প্রথম সব থেকে বড় পাওনা বলে জানান। তাঁর আক্ষেপ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বহু মানুষজনকে পুরস্কৃত করে। সেই তালিকায় মৃৎশিল্পদের তেমন স্থান হয়নি।
সনাতন রুদ্র পালের কথায়, তাঁর এই পুষ্কর প্রাপ্তি মৃৎশিল্পের আগামী প্রজন্মকে উৎসাহিত করবে। প্রতিটা শিল্পী চাইবে ভালো কাজ করতে। থিম শিল্পের রমরমার জেরেই সবেকিয়ানা ফের জেগে উঠেছে, তিনি মনে করেন কাজের ক্ষেত্রে এমন লড়াই থাকা ভালো। ইউনেসকোর দেওয়া স্বীকৃতি একটা বড় প্রাপ্তি। সেই স্বীকৃতি পাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী উৎযাপন করলেও পুরস্কার প্রাপ্তির তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশের পরেও রাজ্যের তরফে শুভেচ্ছাবার্তাটুকু আসেনি বলে তেমন আক্ষেপ নেই। অভিমানের সুরে তিনি জানান, কেন্দ্র রাজ্য দুই সরকারের আমাদের দিকে নজর একটু কম। কুমোরটুলি শিল্পীদের সরকারি সহায়তার জন্য সরব হন। তাতে শিল্প কাজ আরো উন্নতি হবে বলেই আশা তাদের।
আরও পড়ুন
প্রজাতন্ত্র দিবসে ছুটল নেতাজির ছবিতে সুসজ্জিত লোকাল ট্রেন, মহিলা কামরায় প্যানিক বটন
পাখোয়াজ বাদ্যে অসামান্য কীর্তি স্থাপন, রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কারে সম্মানিত শিলিগুড়ির অরিজিৎ
'সিয়ারাম নেই, সীতা নেই ! ভয়ঙ্কর ফ্যাসিবাদ', রাম মন্দির প্রসঙ্গে মন্তব্য কৌশিক সেনের