সিঙ্গুর ও চন্দ্রকোনা, 22 জুলাই: হিমঘর বোঝাই আলু থাকলেও আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতির ডাকে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যে । পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর অ্যাসোসিয়েশন অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছে ৷ ফলে উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের হিমঘরগুলিতে বন্ধ কাজ ৷
এর ফলেই আলুর বাজারে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা সাধারণ মানুষের । এমনিতেই খুচরো বাজারে আলুর দাম 30 টাকা থেকে বেড়ে 38 টাকা (কেজি প্রতি) হয়েছে । এর উপর হিমঘর থেকে আলু বাজারে না এলে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হবে আলুর দাম । আর আখেরে ভোগান্তির মুখে পড়বে সাধারণ মানুষ ।
আলু ব্যবসায়ী সমিতির অভিযোগ, ভিনরাজ্যে আলু রফতানি করতে গেলে পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা । আটকে দেওয়া হচ্ছে আলুর লরি । এতে আলু নষ্ট হচ্ছে৷ ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা । তাঁদের দাবি, যতদিন না এর সুরাহা হচ্ছে, ততদিন অনির্দিষ্টকালের জন্য আলুর ব্যবসা বন্ধ রাখবে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি ।
প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমরা যে বাজারে আলু সরবরাহের কাজ করি, সেটা আজ থেকে বন্ধ আছে কর্মবিরতির কারণে । সারা রাজ্য প্রায় 80 হাজার ব্যবসায়ী এই কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছে । ভিনরাজ্যে আলু পাঠাতে নিষেধ না করলেও আমাদের গাড়ি পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছে । সেটা যাতে বন্ধ হয়, মুখ্যমন্ত্রী যাতে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, সেই বিষয়ে আমরা আশাবাদী । মাননীয় কৃষি বিপণন মন্ত্রীকে আমরা জানিয়েছি । কোনও উপায় না দেখেই এই কর্মবিরতি করা হয়েছে ।’’
এই বিষয়ে চাষিদের দাবি, সরকার আলু ব্যবসায়ী সমিতির মধ্যে টানাপোড়েনে এই কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়তে হবে তাঁদের । কারণ, হিমঘর থেকে আলু নামিয়ে তা বিক্রি করা না গেলে আর্থিকভাবে সমস্যা দেখা দেবে বর্ষায় চাষের কাজে ।তাই দ্রুত সমস্যা মিটুক চাইছেন চাষিরাও ।
দু’দিন আগেই রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী) বেচারাম মান্না জানিয়েছিলেন, যে হারে আলু দাম বাড়ছে, তাতে সমস্যা হচ্ছে । তাই আলু ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করেই সমাধান মিটে যাবে । এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আলু ব্যবসায়ীদের তরফে সরকারকে লিখিত ভাবে সমস্যার কথা জানানো হয়নি । যদি ওঁরা বলেন জানিয়েছেন, সেটা মিথ্যা কথা । রাজ্য সরকার সমস্ত রকম পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছে । সুফল বাংলায় আলু বিক্রি তো হচ্ছে ৷ এছাড়াও ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’’
যদিও প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির কর্মবিরতির ডাক মানেননি সিঙ্গুরের আলু ব্যবসায়ীরা । তাঁদের মতে, কর্মবিরতিকে সমর্থন করছেন তাঁরা । কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে ব্যবসা খুলে রাখার এই চিন্তা ভাবনা । সিঙ্গুরের রতনপুর আলু ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক প্রহ্লাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি যে ইস্যুতে কর্মবিরতি ডেকেছে, আমরা সেটাকে সমর্থন করি । কিন্তু সাধারণ মানুষের কথা ভেবে আমরা বাজার খোলা রেখেছি ৷ না হলে আলুর দাম আগুন হয়ে যাবে । সরকারের উচিত বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করা ও যে ট্রাকগুলি আটকে আছে, সেগুলিকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা ।’’
অন্যদিকে হাসনাবাদ থেকে আলু কিনতে আসা এক পাইকারি ক্রেতা মনসুর আলি সরদারের দাবি, ‘‘বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখলাম । আলু অল্প পাচ্ছি । এই ভাবে চললে বাজারে যোগান হবে না । ফলে দাম বেড়ে যাবে । এখনই এর সমাধান চাই আমরা ।’’