কলকাতা ২৬ জুন: কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের মেয়াদ বৃদ্ধি করল না কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বুধবার আদালতের তরফে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ ভোট পরবর্তী হিংসার জেরেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল হাইকোর্ট ৷
এ দিন এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ৷ সেখানে আদালত জানায়, রাজ্যে আদৌ কেন্দ্রীয় বাহিনী আর প্রয়োজন কি না, সেই ব্যাপারে এবার কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেবে । আপাতত রাজ্যই শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে সেই সব জায়গায়, যেখানে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা ঘটেছে । তবে কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে রাজ্য সেই দায়িত্ব পালনে কোথাও ব্যর্থ হচ্ছে, তাহলে তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা মোতায়েন করতে পারে ।
পাশাপাশি এ দিন দুই বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে একাধিক নির্দেশ দিয়েছে ৷ সেগুলি হল - দু’সপ্তাহ পরে আদালতে এই নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে হবে ৷ ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় যে সমস্ত অভিযোগ জমা পড়েছে, তার দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে ৷ অভিযোগ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে । যাঁরা এখনও ঘরছাড়া, তাঁদের অবিলম্বে ঘরে ফেরাতে হবে ।
এ দিন শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, "রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর চিঠি দিয়েছে, যাতে স্কুলের জায়গা ছেড়ে দেওয়া হয় । কেন্দ্রীয় বাহিনী অন্যত্র রাখার আর্জি জানানো হয়েছে ।" তিনি আরও বলেন, "শেষ 15 দিন ধরে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা তেমন কিছু ঘটেইনি । আমরা সংবাদপত্রেও তেমন কিছু পাইনি । ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, সেটা বিবেচনা করতে আরজি জানাচ্ছি আদালতে ।" রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখা রাজ্যের কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছে ৷ পাশাপাশি তিনি এভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ৷
আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়াল জানান, তাঁর কাছে অন্তত 29টি এমন অভিযোগ রয়েছে, যেখানে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি ।সেগুলো আদালতকে তিনি দিতে চান । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর তরফে ছিলেন আইনজীবী সৌম্য মজুমদার ৷ তিনি জানান, তাঁদের কাছে 1800 জন ঘরছাড়ার তালিকা রয়েছে ৷ তিনি সেই তালিকা আদালতে জমা দেন ৷
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর কাছে নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্ট যদি মনে করে রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য এখনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা প্রয়োজন, তাহলে তা দিতে কেন্দ্রের আপত্তি নেই ।
বিচারপতি হরিশ ট্যাণ্ডন জানতে চান, "কিন্তু এঁদের থাকার জায়াগার কী হবে ?" স্কুল খোলার দাবিতে জনস্বার্থ মামলাকারীর তরফে আইনজীবী অয়ন পোদ্দার বলেন, "আইন অনুযায়ী নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর স্কুলের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে ।"
সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ নতুন করে আর রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়নি ।তবে কেন্দ্র যদি মনে করে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিরিখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে । তাহলে তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখতে পারে বলে জানিয়েছে আদালত ।