কলকাতা, 10 অগস্ট: তাঁকে ঘিরে তোলপাড় হচ্ছে রাজ রাজনীতি ৷ আরজি কর কাণ্ডের সেই অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের মানসিক সমস্যা আছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ ৷ ধরা পড়ার পরও সে বেপরোয়া ৷ পুলিশ কর্মীদের বলছে, "ফাঁসি দিয়ে দিন" । পাশাপাশি তার গুণকীর্তন শুনে অবাক হয়েছেন খোদ লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা ।
সঞ্জয় কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার হলেও নাকি নিজেকে কলকাতা পুলিশেরই স্বশস্ত্র বাহিনীর এএসআই বলে পরিচয় দিত । জানা গিয়েছে, শম্ভুনাথ পন্ডিত রোডে যেখানে সঞ্জয়ের বাড়ি সেখানেই নাকি এক ব্যক্তিকে সে সরকারি চাকরি করিয়ে দেবে বলে তাঁর কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে কিছুদিনের জন্য ফেরার হয়ে গিয়েছিল । পরে সেই টাকা ওই ব্যক্তি ফেরত দিতে বললে সঞ্জয় বলে সে কলকাতা পুলিশের উঁচু পদে রয়েছে । ফলে তার সঙ্গে ঝামেলা করে লাভ নেই । সঞ্জয়ের ওই প্রতিবেশী নাকি এখনও পর্যন্ত সেই টাকা পাননি।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, অন্য থানার মহিলা পুলিশ কর্মী থেকে শুরু করে মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারদের রীতিমতো উত্তপ্ত করত সঞ্জয় । এছাড়াও তার মোবাইল ফোন থেকে উদ্ধার হয়েছে কলকাতা পুলিশে কর্মরত বেশ কয়েকজন ফোন নম্বর । তাদের সঙ্গে কাজের বাইরে সম্পর্ক রাখত সঞ্জয় । এমনটাই দাবি লালবাজারের ।
এই ঘটনায় পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করে কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন ধৃত সঞ্জয় একজন সিভিক ভলান্টিয়ার হয়েও নিয়ম ভেঙে উল্টোডাঙায় পুলিশ ব্যারাকে থাকত । আর সেখানেই বিভিন্ন পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । এখানেই প্রশ্ন উঠেছে কীভাবে একজন সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশ কর্মীদের ব্যারাকে থাকার প্রশ্রয় পায় ? কেন কোন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের নজরে এল না বিষয়টি ?
ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে সঞ্জয়ের বন্ধু হিসেবে পরিচিত অন্য পুলিশ কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে । এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিক জানান, ব্যারাকে কে ঢুকছে না ঢুকছে তার একটি তথ্য পুলিশের কাছে থাকা উচিত । এই বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব যে পুলিশকর্মী ছিলেন তাঁর সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা । সঞ্জয় বিভিন্ন নেশায় আসক্ত বলেও জানা গিয়েছে ৷
যদিও সঞ্জয়ের মা মানতে চাইছেন না তাঁর ছেলে এই কাজ করেছে ৷ তাঁর বক্তব্য, "আমি এটা বলতে পারি না ৷ রেপ করেছে, টাকা নিয়েছে, মার্ডার করেছে ৷ বাকিরা বলতে পারে ৷ আমি তো মা, জন্ম দিয়েছি ! যে রক্ত বেঁচে নিজের স্ত্রীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে সে এ কাজ করতে পারে না ৷"
আরজি কর হাসপাতালে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই হাসপাতালের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । ইতিমধ্যেই আজ কলকাতা পুলিশের নগরপাল লালবাজারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "ওই মহিলা চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাঁর গলার হাড় ভেঙে গিয়েছিল। দেহে বস্ত্র প্রায় ছিল না বললেই চলে । এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ওই মহিলা চিকিৎসকের উপর নজর রেখেছিল অভিযুক্ত সঞ্জয় । ময়নাতদন্তের সময় সহকর্মী চিকিৎসকরা ছিলেন ৷ মা-বাবাও সাক্ষী হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন । আমরা যাবতীয় বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছি । তবে এই ঘটনার সঙ্গে আরও একাধিক ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে ।"