মালদা, 26 এপ্রিল: আম-মাখনার ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেল রেশম ৷ লোকসভা ভোটের আগে প্রথমবার মালদায় এসে এই জেলার আম ও মাখনার জন্য ফুড ইন্ডাস্ট্রি তৈরির আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ কিন্তু তাঁর মুখে শোনা যায়নি মুঘল আমল থেকে বিখ্যাত এই জেলার রেশমের কথা ৷ শুধুমাত্র সরকারি উদাসীনতার জন্যই রেশমের সেই সোনালি যুগ আজ অতীত ৷ দেশের রেশম বাজার দখল করেছে চিন ৷ মোদির বক্তব্য শোনার পর জেলার রেশম চাষি, রিলার-সহ ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, তবে কি এই ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার বিষয়ে কিছু ভাবছে না কেন্দ্র ? মালদার ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙনের কথা এখনও কি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছোয়নি ?
শুক্রবার মালদা উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী যথাক্রমে খগেন মুর্মু ও শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরির সমর্থনে জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নিত্যানন্দপুরে তাঁর সভার আয়োজন করা হয় ৷ সকাল থেকেই দলে দলে মানুষ সভাস্থলের দিকে রওনা দেন ৷ ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় সভাস্থলের চারদিকে করা বাঁশের কাঠামো ৷
বক্তব্য শুরু করতেই মোদি নামে কেঁপে ওঠে পুরো সভাস্থল ৷ তা শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের এত ভালোবাসা দেখে মনে হচ্ছে পূর্বজন্মে আমি বাংলায় জন্মেছিলাম অথবা পরজন্মে এই রাজ্যে জন্মাব ৷” এরপরেই তিনি বলে ওঠেন, “মালদার আম ও মালদার মাখনা বিশ্ব বিখ্যাত ৷ আম ও মাখনা উৎপাদনকারী কৃষকদের বেশি উপার্জনের জন্য এখানে ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি করা হবে ৷ কিন্তু তৃণমূল বলছে, এই কাজেও তাদের কাটমানি দিতে হবে । মা-মাটি-মানুষের নাম করে ক্ষমতায় আসা এই তৃণমূল সরকার সবচেয়ে বেশি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাংলার মহিলার সঙ্গে । মালদাতেও মহিলাদের ওপর অত্যাচার হয়েছে ।”
মালদার আমের সঙ্গে পরিচিত সবাই৷ এই জেলায় 31 হাজার 600 হেক্টর জমিতে আমচাষ হয় ৷ মালদার আমের প্রসিদ্ধি রয়েছে দেশ জুড়ে ৷ বিদেশেও এই জেলার আমের বেশ চাহিদা রয়েছে ৷ কিন্তু মাখনা সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই ৷ জাপান ও রাশিয়ার মানুষ অনেক আগেই মাখনার গুণ জেনেছে । ওই দুই দেশে জিরো কোলেস্টরল, লো ফ্যাট, জিরো গ্লুটেন, ভরপুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, খুব কম পরিমাণে সোডিয়াম, অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং অনেক কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকা এই মাখনা ফক্স নাট নামে পরিচিত ।
মূলত উত্তর মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর 1 ও 2, চাঁচল 1 ও 2, রতুয়া 1 ও 2 ব্লকে মাখনা চাষ হয়ে থাকে । তবে অন্যান্য ব্লকেও এখন এই চাষ হচ্ছে । বর্তমানে জেলায় 2800 হেক্টর জমিতে মাখনার চাষ হয় ৷ প্রতি বছর 100 কোটি টাকার ব্যবসাও হয় ৷ কিন্তু প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামোর অভাবে জেলার কৃষকরা এই চাষে সেভাবে লাভ করতে পারে না ।
মোদির মুখে আম-মাখনা প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের আশ্বাস শুনে উল্লসিত ওই দুই ফসলের কৃষকরা ৷ তবে মন খারাপ রেশম চাষিদের ৷ তাঁরা বলছেন, একটু সরকারি সহায়তা পেলেও এই জেলার রেশম শিল্পের সেই স্বর্ণযুগ ফিরে আসতে পারে ৷ কিন্তু এই চাষ বা শিল্প নিয়ে সরকার উদাসীন ৷ তাঁদের আশা ছিল, এদিন মোদির মুখ থেকে তাঁরা কিছু আশ্বাস পাবেন ৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি ৷ হতাশ হয়েছেন ভাঙন দুর্গতরাও ৷ কারণ, মোদি তাঁদের সমস্যা সমাধানেরও কোনও বার্তা দেননি ৷
আরও পড়ুন: