বারাসত, 25 এপ্রিল: পায়ে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার ৷ চলাফেরার ক্ষমতাটুকু হারিয়েছেন ৷ তবু, অশক্ত শরীরে সুদূর দেগঙ্গা থেকে বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে এসেছিলেন মারণ ক্যানসার রোগের সুচিকিৎসার আর্জি নিয়ে ৷ কিন্তু, চিকিৎসায় সুরাহা মেলা তো দূরের কথা ! ক্যানসার আক্রান্ত মহম্মদ সুজাউদ্দিন মণ্ডলের দিকে জেলা প্রশাসন ফিরেও তাকায়নি বলে অভিযোগ ৷ কাজ হয়নি কোনও আকুতিতেও ৷
শেষ পর্যন্ত স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধরনায় বসে ছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত যুবক ৷ তারপর অবশেষে এগিয়ে এলেন স্থানীয় কাউন্সিলর তথা চিকিৎসক সুমিত সাহা ৷ বারাসত পৌরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজের উদ্যোগে মহম্মদ সুজাউদ্দিন মণ্ডলের ক্যানসারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৷
পেশায় চিকিৎসক সুমিত সাহা বলেন, "আমি এসে যেটুকু দেখেছি, তাতে আমার মনে হয়েছে ওই যুবকের সারকোমা ও পায়ের টিবিয়াতে সোয়েলিং (ফোলা) রয়েছে ৷ দীর্ঘদিন চিকিৎসা না হলে যেটা হয়, সেটাই ঘটেছে ওঁর সঙ্গে ৷ আমি নিজে একজন চিকিৎসক ৷ সেকারণেই ক্যান্সার আক্রান্তের পাশে দাঁড়াতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছি ৷ চিকিৎসার যাবতীয় বন্দোবস্ত করা হয়েছে ৷ আশা করা যায়, শীঘ্রই ওনার চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে।"
বছর 29-র সুজাউদ্দিনের বাড়ি উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার নূরনগরে ৷ স্ত্রী-দুই সন্তান ছাড়াও বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন ৷ নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে ভ্যান চালিয়ে কোনও রকমে দিন চলত ওই যুবকের ৷ সেই অভাবের সংসারেই আকাশ ভেঙে পড়ার মতো পরস্থিতি তৈরি হয় ৷ বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্যের ক্যানসার ধরা পড়ে ৷ কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে দিকবিদিক শূন্য হয়ে পরিবারের লোকজন ক্যানসার আক্রান্ত সুজাউদ্দিনকে নিয়ে ছোটেন কলকাতার সুপার স্পেশালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে ৷
সেখানকার আউটডোরেই দীর্ঘ ছ'মাস ধরে চলছিল তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা ৷ তাতেই জানা যায়, যুবকের বাঁ-পায়ে টিউমারে রয়েছে ৷ যা ক্যানসারে পরিণত হয়েছে ৷ সেখানে 10 শতাংশে বাসা বেঁধেছে ক্যানসারের জীবাণু ৷ সেকারণে অর্থপেডিক বিভাগ থেকে তাঁকে ভরতি নেওয়ার ছাড়পত্রও দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, অভিযোগ নানা অজুহাতে ভরতি না নিয়ে, ক্যানসার আক্রান্ত যুবককে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ৷
অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন আউটডোরে ঘুরেও ভরতি হতে না পেরে চলাফেরার ক্ষমতায় হারিয়ে ফেলেছেন সুজাউদ্দিন ৷ তবুও, সুচিকিৎসার আশায় বাবা মতিয়া রহমান মণ্ডল ও নিকট আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে গত বুধবার তিনি এসেছিলেন জেলার প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে ৷ ভেবেছিলেন, জেলাশাসক শরৎ কুমার দ্বিবেদীর কাছে আর্থিক দুরবস্থার কথা খুলে বললে, তিনি কোনও না কোনও সুরাহা করবেন ৷
কিন্তু, অভিযোগ জেলাশাসকের কার্যালয় থেকে জেলাশাসক স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি এই মুহূর্তে ভোটের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন ৷ তাই কোনও সহযোগিতা করা সম্ভব নয় ৷ বহু কাকুতি-মিনতি করেও জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি ৷ শেষে নিরুপায় হয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে ধরনায় বসেন ক্যানসার আক্রান্ত এবং তাঁর পরিবার ৷ বেশ কয়েক ঘণ্টা সেখানেই বসে থাকেন তাঁরা ৷ এরপর বিষয়টি জানতে পেরে ক্যানসার আক্রান্ত সুজাউদ্দিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পেশায় চিকিৎসক সুমিত সাহা ৷ তাঁর মানবিক উদ্যোগে নিউটাউনের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে সুজাউদ্দিনের ৷ যদিও, এনিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন উত্তর 24 পরগনার জেলাশাসক শরৎ কুমার দ্বিবেদী ৷ তাঁর প্রতিক্রিয়া জেলাশাসকের দফতরে গেলেও, এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি ৷
আরও পড়ুন: