ETV Bharat / state

বিহার পারলে বাংলা পারবে না কেন ? প্রশ্ন গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দাদের - Ganges Erosion in Malda - GANGES EROSION IN MALDA

Ganges Erosion in Malda: প্রতিবেশী রাজ্য বিহারে গঙ্গা ভাঙন রোধ করতে বোল্ডার ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ৷ তাহলে বাংলার সরকার কেন পারছে না ? এই প্রশ্নই তুললেন, গঙ্গাপাড়ের ভুক্তভোগীরা ৷

Ganges Erosion in Malda
এভাবেই গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে গিয়েছে বাড়িঘর, জমিজমা ৷ (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 6, 2024, 10:57 PM IST

মালদা, 6 অগস্ট: রাজা কখনও ফকির হয়ে যায়, জমিদার কখনও পরিণত হন শ্রমিকে ৷ চার দশকের বেশি সময় ধরে এসবই দেখে আসছে মালদার মানুষ ৷ বিশেষ করে গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা ৷ একসময় যার জমির চাল খেয়ে শেষ করা যেত না, যার জমিতে দু’বেলা মানুষ খাটত, এখন দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য তাঁকেই পাড়ি দিতে হচ্ছে ভিনরাজ্যে ৷ শ্রমিকের কাজ করে ভরছে পেট ৷ মন খালি হয়ে যাচ্ছে আরও ৷ কিন্তু, কেন কেন্দ্র বা রাজ্য তাঁদের রক্ষা করতে সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা ৷

মালদায় গঙ্গা ভাঙন (ইটিভি ভারত)

তাঁদের আরও প্রশ্ন, পাশেই বিহারে গঙ্গাকে বাঁধার কাজ করে ফেলেছে সেখানকার রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু এ’রাজ্যে তার কোনও নামগন্ধ নেই ৷ নির্বাচন আসলে এই ইস্যুতে সুর চড়ায় সব রাজনৈতিক দল ৷ ভোট মিটে গেলে তাদের আর দেখা যায় না ৷ তাই এখন আর রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না তাঁদের ৷ তবে, এখনও ভরসা করে রয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের উপর ৷

উত্তরবঙ্গে পাহাড় ও সংলগ্ন জেলাগুলি ছাড়া গোটা রাজ্যেই এবার বর্ষা দেরিতে ঢুকেছে ৷ ঝাড়খণ্ডে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরে মালদা জেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বর্ষার বৃষ্টি ৷ জেলার নদীগুলির জলস্তরও এখন অনেকটা কম ৷ কিন্তু, বিজ্ঞান বলছে, জলস্তর কম থাকলে নদীর ভাঙন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ৷ ঠিক সেটাই হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের রশিদাবাদ এবং রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি অঞ্চলে ৷ গত বছরের গঙ্গা ভাঙনে মহানন্দটোলার শ্রীকান্তটোলা মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে ৷ এবার মুছে যাওয়ার মুখে পাশের কান্তটোলা গ্রাম ৷ 50 শতাংশের বেশি মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন ৷ বাড়িঘর ভেঙে অন্য কোনও জায়গায় চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আরও অনেকে ৷

বৃহস্পতিবার দুপুরে কান্তটোলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল একঝলক পশ্চিমা হাওয়া ৷ নিম্নচাপের প্রভাব৷ তাতেই এক ঝটকায় বেশ কিছুটা জায়গা কেটে নিয়েছে গঙ্গা ৷ গ্রামবাসীরা বলছেন, সবে তো শুরু ৷ খেলা চলবে সেই অক্টোবর পর্যন্ত৷ উন্মত্ত গঙ্গা যে কতবার পাড়ে আছড়ে পড়বে, তার ইয়ত্তা নেই৷ যতবার পাগলি নদী উন্মত্ত হবে, ততবার ধসে যাবে জমি ৷ বাড়িঘর থেকে মন্দির-মসজিদ পর্যন্ত৷ গঙ্গা কাউকে রেয়াত করে না ৷ সে চলে নিজের খেয়ালে ৷ একমাত্র নদীর ভিতর থেকে পাড় পর্যন্ত পাথরের বোল্ডার দিয়ে মুড়ে ফেলা হলে মানুষ বাঁচবে৷ ঘরবাড়ি, জমি-বাগানও বাঁচবে ৷ যেমনটা ব্যবস্থা করেছে পাশের বিহার সরকার ৷

গঙ্গাপাড়ের কান্তটোলার মানুষের মন বোঝার চেষ্টা করেছিল ইটিভি ভারত ৷ কথা হচ্ছিল সূর্যনারায়ণ মণ্ডলের সঙ্গে ৷ একসময় এলাকার প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ এখন বৃদ্ধ হয়েছেন ৷ জানালেন, “একবার ভাঙন শুরু হলে নদী কোনও সময় দেয় না ৷ প্রথমে মাটি ফেটে যায় ৷ খানিক বাদেই সেখান থেকে গোটা অংশটা নদীতে ধসে যায় ৷ এবার মাসখানেক ধরে ভাঙন চলছে ৷ একটা সময় গঙ্গা সাহেবগঞ্জের কাছে ছিল ৷ 20 কিমিরও বেশি দূরে 2011 সাল থেকে নদী আমাদের গ্রামের দিকে এগোতে শুরু করে ৷ এখন বাড়ির দুয়ারে ধাক্কা মারছে ৷ একমাত্র পাথর দিয়ে পাড় বাঁধাই করা হলেই ভাঙন আটকানো সম্ভব ৷ যেমনটা করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না ৷ প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, তিনি কি গঙ্গার তীরে কাউকে বাস করতে বলেছেন ? যারা সমস্যায় পড়ছে, তাদের বাইরে চলে যেতে বলেন তিনি৷ কিন্তু তার জন্য পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করেননি তিনি ৷”

সূর্যনারায়ণ মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হয়, গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজে বিহার সরকারকে কেন্দ্র টাকা দিয়েছে ৷ বাংলাকে একটি পয়সাও দেয়নি ৷ তাহলে বাংলার সরকার এই কাজ করবে কীভাবে ? বৃদ্ধের উত্তর, “আমরা শুনেছি, মমতা কেন্দ্রের কাছে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন ৷ মোদি বলেছেন, তুমি আগের হিসাব পরিষ্কার কর ৷ নতুন করে যত টাকা লাগবে নিয়ে যাও ৷ কিন্তু, মমতা হিসাব পরিষ্কার করছেন না ৷ টাকাও পাচ্ছেন না ৷ রাজ্য সরকারের গাফিলতির জন্যই বাংলায় ভাঙন রোধের কাজের টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না ৷ মমতার উচিত, পুরনো ঋণের হিসাব পরিষ্কার করে নতুন করে টাকা নিয়ে আসা ৷”

ক্ষিতীশ মণ্ডলের বক্তব্য, “গঙ্গার রোষ থেকে বাঁচার জন্য ছুটছি ৷ ছুটেই যাচ্ছি ৷ ছুটতে ছুটতে এখন ক্লান্ত ৷ আমাদের দশা এখন ভিখারির থেকেও খারাপ ৷ লোকে এখন আমাদের আর ভিক্ষেও দিতে চায় না ৷ নিজেদের লোকজনও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ এখান থেকে সামান্য দূরে বিহার ৷ সেখানে গঙ্গা বাঁধার কাজ খুব ভালোভাবে হচ্ছে৷ আর এখানে টাকা আসলে সব টাকা চুষে খেয়ে নিচ্ছে ৷ আমাদের কোনও সরকার মদত করে না ৷ কেন্দ্র বাংলাকে ভাঙন রোধের একটা টাকাও দেয়নি ৷ এখানকার সাংসদ বিজেপির ৷ তাঁকে অনেকবার বলেছি ৷ পুনর্বাসন হিসাবে আমাদের দু’কাঠা করে জায়গা দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও দেয়নি ৷”

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের বহু কাজ করতে হয়৷ তারপরেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় নিয়ম করে গঙ্গাপাড়ে আসতে হয় এনারবতী মণ্ডলকে৷ নদীর মতিগতি বোঝার জন্য৷ তিনি জানালেন, “জমি-জায়গা আগেই নদীতে চলে গিয়েছিল৷ ক’দিন আগে ঘরটাও চলে গেল৷ যেদিন ঘর গেল, সেদিন ঘরে থাকা ছাতু খেয়ে ফেলছিল ছাগল৷ ছাতু বাঁচাতে গিয়ে কপাল ফাটিয়েছি৷ কিন্তু গঙ্গা আমার কপাল পুরোটাই কেড়ে নিয়েছে৷ এই এলাকাকে বাঁচানোর দুটো উপায় আছে৷ প্রথমত, বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধাই করা৷ আর দ্বিতীয়ত, গঙ্গায় ক্যানাল খুঁড়ে নদীর মূল স্রোতকে পুরোনো খাতে নিয়ে যাওয়া৷ কিন্তু সরকার কোনওটাই করে না৷ ক্যানাল খোঁড়া হলে শুধু গ্রামই যে বাঁচবে তা নয়, নদীতে তলিয়ে যাওয়া আমাদের জমি-জায়গা ফের উঠে আসবে৷ কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনা না৷ কখন যে গঙ্গা পাগল হয়ে ওঠে, তার জন্য সারা রাত জেগে থাকতে হয়৷”

কথা বলতে বলতে যেন ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠলেন শ্রীমতী মণ্ডল৷ বলে উঠলেন, “বিহারে কাজ হচ্ছে, বাংলায় হচ্ছে না৷ এখানে সব সরকার খেয়ে নিয়েছে৷ ওরা শুধু বিহারকেই দিচ্ছে৷ মমতা আগেই সরে গিয়েছেন৷ এখন মোদিও সেই পথে পা বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ কেউ কিছু দেননি৷ নদী ভাঙাতে কেউ কোনও সাহায্য করল না৷ হয় এখানে নদীকে বাঁধ, তা না হলে আমাদের ঘর করার জায়গা দিক৷ আমরা চাই, নদীকে বাঁধা হোক৷”

রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো জানিয়েছেন, "চলতি মরশুমে কান্তটোলা গ্রাম একাধিকবার গঙ্গার ভাঙনের মুখে পড়েছে। ক'দিন আগে সেখানে নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের অস্থায়ী কাজ করা হয়েছিল। তবে, এখন গঙ্গায় অনেক জল। সেচ দফতর জানিয়ে দিয়েছে, জল না কমলে নতুন করে কাজ করা যাবে না। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। সেচ দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।"

মালদা, 6 অগস্ট: রাজা কখনও ফকির হয়ে যায়, জমিদার কখনও পরিণত হন শ্রমিকে ৷ চার দশকের বেশি সময় ধরে এসবই দেখে আসছে মালদার মানুষ ৷ বিশেষ করে গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা ৷ একসময় যার জমির চাল খেয়ে শেষ করা যেত না, যার জমিতে দু’বেলা মানুষ খাটত, এখন দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জন্য তাঁকেই পাড়ি দিতে হচ্ছে ভিনরাজ্যে ৷ শ্রমিকের কাজ করে ভরছে পেট ৷ মন খালি হয়ে যাচ্ছে আরও ৷ কিন্তু, কেন কেন্দ্র বা রাজ্য তাঁদের রক্ষা করতে সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা ৷

মালদায় গঙ্গা ভাঙন (ইটিভি ভারত)

তাঁদের আরও প্রশ্ন, পাশেই বিহারে গঙ্গাকে বাঁধার কাজ করে ফেলেছে সেখানকার রাজ্য সরকার ৷ কিন্তু এ’রাজ্যে তার কোনও নামগন্ধ নেই ৷ নির্বাচন আসলে এই ইস্যুতে সুর চড়ায় সব রাজনৈতিক দল ৷ ভোট মিটে গেলে তাদের আর দেখা যায় না ৷ তাই এখন আর রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের কাছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না তাঁদের ৷ তবে, এখনও ভরসা করে রয়েছেন কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের উপর ৷

উত্তরবঙ্গে পাহাড় ও সংলগ্ন জেলাগুলি ছাড়া গোটা রাজ্যেই এবার বর্ষা দেরিতে ঢুকেছে ৷ ঝাড়খণ্ডে তৈরি হওয়া ঘূর্ণাবর্তের হাত ধরে মালদা জেলায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে বর্ষার বৃষ্টি ৷ জেলার নদীগুলির জলস্তরও এখন অনেকটা কম ৷ কিন্তু, বিজ্ঞান বলছে, জলস্তর কম থাকলে নদীর ভাঙন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ৷ ঠিক সেটাই হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের রশিদাবাদ এবং রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি অঞ্চলে ৷ গত বছরের গঙ্গা ভাঙনে মহানন্দটোলার শ্রীকান্তটোলা মানচিত্র থেকে মুছে গিয়েছে ৷ এবার মুছে যাওয়ার মুখে পাশের কান্তটোলা গ্রাম ৷ 50 শতাংশের বেশি মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছেন ৷ বাড়িঘর ভেঙে অন্য কোনও জায়গায় চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আরও অনেকে ৷

বৃহস্পতিবার দুপুরে কান্তটোলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল একঝলক পশ্চিমা হাওয়া ৷ নিম্নচাপের প্রভাব৷ তাতেই এক ঝটকায় বেশ কিছুটা জায়গা কেটে নিয়েছে গঙ্গা ৷ গ্রামবাসীরা বলছেন, সবে তো শুরু ৷ খেলা চলবে সেই অক্টোবর পর্যন্ত৷ উন্মত্ত গঙ্গা যে কতবার পাড়ে আছড়ে পড়বে, তার ইয়ত্তা নেই৷ যতবার পাগলি নদী উন্মত্ত হবে, ততবার ধসে যাবে জমি ৷ বাড়িঘর থেকে মন্দির-মসজিদ পর্যন্ত৷ গঙ্গা কাউকে রেয়াত করে না ৷ সে চলে নিজের খেয়ালে ৷ একমাত্র নদীর ভিতর থেকে পাড় পর্যন্ত পাথরের বোল্ডার দিয়ে মুড়ে ফেলা হলে মানুষ বাঁচবে৷ ঘরবাড়ি, জমি-বাগানও বাঁচবে ৷ যেমনটা ব্যবস্থা করেছে পাশের বিহার সরকার ৷

গঙ্গাপাড়ের কান্তটোলার মানুষের মন বোঝার চেষ্টা করেছিল ইটিভি ভারত ৷ কথা হচ্ছিল সূর্যনারায়ণ মণ্ডলের সঙ্গে ৷ একসময় এলাকার প্রভাবশালী হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ এখন বৃদ্ধ হয়েছেন ৷ জানালেন, “একবার ভাঙন শুরু হলে নদী কোনও সময় দেয় না ৷ প্রথমে মাটি ফেটে যায় ৷ খানিক বাদেই সেখান থেকে গোটা অংশটা নদীতে ধসে যায় ৷ এবার মাসখানেক ধরে ভাঙন চলছে ৷ একটা সময় গঙ্গা সাহেবগঞ্জের কাছে ছিল ৷ 20 কিমিরও বেশি দূরে 2011 সাল থেকে নদী আমাদের গ্রামের দিকে এগোতে শুরু করে ৷ এখন বাড়ির দুয়ারে ধাক্কা মারছে ৷ একমাত্র পাথর দিয়ে পাড় বাঁধাই করা হলেই ভাঙন আটকানো সম্ভব ৷ যেমনটা করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার ৷ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা এসব নিয়ে মাথা ঘামান না ৷ প্রশ্ন করলে উত্তর দেন, তিনি কি গঙ্গার তীরে কাউকে বাস করতে বলেছেন ? যারা সমস্যায় পড়ছে, তাদের বাইরে চলে যেতে বলেন তিনি৷ কিন্তু তার জন্য পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থা করেননি তিনি ৷”

সূর্যনারায়ণ মণ্ডলকে প্রশ্ন করা হয়, গঙ্গা ভাঙন রোধের কাজে বিহার সরকারকে কেন্দ্র টাকা দিয়েছে ৷ বাংলাকে একটি পয়সাও দেয়নি ৷ তাহলে বাংলার সরকার এই কাজ করবে কীভাবে ? বৃদ্ধের উত্তর, “আমরা শুনেছি, মমতা কেন্দ্রের কাছে অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন ৷ মোদি বলেছেন, তুমি আগের হিসাব পরিষ্কার কর ৷ নতুন করে যত টাকা লাগবে নিয়ে যাও ৷ কিন্তু, মমতা হিসাব পরিষ্কার করছেন না ৷ টাকাও পাচ্ছেন না ৷ রাজ্য সরকারের গাফিলতির জন্যই বাংলায় ভাঙন রোধের কাজের টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না ৷ মমতার উচিত, পুরনো ঋণের হিসাব পরিষ্কার করে নতুন করে টাকা নিয়ে আসা ৷”

ক্ষিতীশ মণ্ডলের বক্তব্য, “গঙ্গার রোষ থেকে বাঁচার জন্য ছুটছি ৷ ছুটেই যাচ্ছি ৷ ছুটতে ছুটতে এখন ক্লান্ত ৷ আমাদের দশা এখন ভিখারির থেকেও খারাপ ৷ লোকে এখন আমাদের আর ভিক্ষেও দিতে চায় না ৷ নিজেদের লোকজনও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ এখান থেকে সামান্য দূরে বিহার ৷ সেখানে গঙ্গা বাঁধার কাজ খুব ভালোভাবে হচ্ছে৷ আর এখানে টাকা আসলে সব টাকা চুষে খেয়ে নিচ্ছে ৷ আমাদের কোনও সরকার মদত করে না ৷ কেন্দ্র বাংলাকে ভাঙন রোধের একটা টাকাও দেয়নি ৷ এখানকার সাংসদ বিজেপির ৷ তাঁকে অনেকবার বলেছি ৷ পুনর্বাসন হিসাবে আমাদের দু’কাঠা করে জায়গা দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও দেয়নি ৷”

ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সংসারের বহু কাজ করতে হয়৷ তারপরেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় নিয়ম করে গঙ্গাপাড়ে আসতে হয় এনারবতী মণ্ডলকে৷ নদীর মতিগতি বোঝার জন্য৷ তিনি জানালেন, “জমি-জায়গা আগেই নদীতে চলে গিয়েছিল৷ ক’দিন আগে ঘরটাও চলে গেল৷ যেদিন ঘর গেল, সেদিন ঘরে থাকা ছাতু খেয়ে ফেলছিল ছাগল৷ ছাতু বাঁচাতে গিয়ে কপাল ফাটিয়েছি৷ কিন্তু গঙ্গা আমার কপাল পুরোটাই কেড়ে নিয়েছে৷ এই এলাকাকে বাঁচানোর দুটো উপায় আছে৷ প্রথমত, বোল্ডার দিয়ে পাড় বাঁধাই করা৷ আর দ্বিতীয়ত, গঙ্গায় ক্যানাল খুঁড়ে নদীর মূল স্রোতকে পুরোনো খাতে নিয়ে যাওয়া৷ কিন্তু সরকার কোনওটাই করে না৷ ক্যানাল খোঁড়া হলে শুধু গ্রামই যে বাঁচবে তা নয়, নদীতে তলিয়ে যাওয়া আমাদের জমি-জায়গা ফের উঠে আসবে৷ কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনা না৷ কখন যে গঙ্গা পাগল হয়ে ওঠে, তার জন্য সারা রাত জেগে থাকতে হয়৷”

কথা বলতে বলতে যেন ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠলেন শ্রীমতী মণ্ডল৷ বলে উঠলেন, “বিহারে কাজ হচ্ছে, বাংলায় হচ্ছে না৷ এখানে সব সরকার খেয়ে নিয়েছে৷ ওরা শুধু বিহারকেই দিচ্ছে৷ মমতা আগেই সরে গিয়েছেন৷ এখন মোদিও সেই পথে পা বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ কেউ কিছু দেননি৷ নদী ভাঙাতে কেউ কোনও সাহায্য করল না৷ হয় এখানে নদীকে বাঁধ, তা না হলে আমাদের ঘর করার জায়গা দিক৷ আমরা চাই, নদীকে বাঁধা হোক৷”

রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের বিডিও রাকেশ টোপ্পো জানিয়েছেন, "চলতি মরশুমে কান্তটোলা গ্রাম একাধিকবার গঙ্গার ভাঙনের মুখে পড়েছে। ক'দিন আগে সেখানে নদীর পাড়ে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের অস্থায়ী কাজ করা হয়েছিল। তবে, এখন গঙ্গায় অনেক জল। সেচ দফতর জানিয়ে দিয়েছে, জল না কমলে নতুন করে কাজ করা যাবে না। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছি। সেচ দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দুর্গতদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.