হাবরা, 26 জানুয়ারি: মাত্র চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ঢাকে হাতেখড়ি । কাঁধে ঢাক নিয়ে দেশ-বিদেশের বহু মঞ্চে শ্রোতাদের মন মাতিয়েছেন । গড়েছেন দেশের প্রথম মহিলা ঢাকির দল । ঢাকের বোল তুলে অবশেষে পেলেন শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান । গ্রামবাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ঢাকবাদক গোকুলচন্দ্র দাস পাচ্ছেন পদ্মশ্রী পুরস্কার ।
উত্তর 24 পরগনার হাবরার মছলন্দপুরের বাসিন্দা গোকুলচন্দ্র দাস । চলতি বছর পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় তাঁর নাম ঘোষিত হয়েছে । শনিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে ফোন করে গোকুলচন্দ্রকে জানানো হয়েছে, আগামী মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যে তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে ডেকে 'পদ্মশ্রী' সম্মান দেওয়া হবে ।
হাবরা শহর থেকে 11 কিলোমিটার দূরে অখ্যাত জনপদ মছলন্দপুরে বাড়ি গোকুলচন্দ্রের । বাবা মতিলালচন্দ্র দাস ছিলেন বাংলার প্রখ্যাত ঢাকবাদক ।বাবার কাছ থেকে মাত্র চার বছর বয়সে গোকুল ঢাক বাজানোর তালিম নিয়েছেন । প্রথম থেকেই সকলে বলতেন, গোকুলের হাতে ঢাক যেন কথা বলে । বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ঢাক বাজানোর খ্যাতি আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে ।
কপাল ফেরে 2004 সালে একটি বেসরকারি সংস্থার আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে । সেই প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বসু । সেবার তিনিই গোকুলের হাতে ঢাকি সম্রাটে'র খেতাব তুলে দিয়েছিলেন । এরপর গোকুল তন্ময়বাবুর ওয়ার্ল্ড ক্ল্যাসিকাল মিউজিক্যাল ব্যান্ডে ঢাক বাজিয়েছিলেন । তারপর থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি । দেশের সীমারেখা ছাড়িয়ে গোকুল আমেরিকা, লন্ডন, নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়ায় ঢাক বাজিয়েছেন । গোকুলের ঢাকের বোল শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন ।
নাম-যশ অনেক হয়েছে । গোকুলের মাথায় ঘুরতে থাকে নতুন ভাবনা । পাড়ার প্রান্তিক মহিলাদের নিয়ে তিনি গড়ে তুললেন মহিলা ঢাকির দল ।গোকুলের সেই মহিলা ঢাকির দলে বর্তমানে 90 জন সদস্য রয়েছেন । তাঁরাও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন । স্বনির্ভর হচ্ছেন ।সঙ্গে কম-বেশি 200 জন পুরুষ ঢাকিও গোকুলের অধীনে কাজ করেন ৷
শনিবার সন্ধ্যায় সাধারণতন্দ্র দিবসের প্রাক্কালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মশ্রী প্রাপকদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে নাম রয়েছে গোকুলচন্দ্র দাসের । প্রথমে তিনি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেননি । পরে এই বিষয়ে ইটিভি ভারতে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে পদ্মশ্রী প্রাপক গোকুলচন্দ্র বলেন, "স্বপ্নের মতো লাগছে । কোনওদিন ভাবতেই পারেনি পদ্মশ্রী সম্মানে সন্মানিত হতে পারব । কেন্দ্রীয় সরকার আমার নাম ঘোষণা করায় আমি আপ্লুত ও আনন্দিত । এজন্য ধন্যবাদ ভারত সরকারকে ।"
তিনি আরও বলেন, "পণ্ডিত তন্ময় বসুর হাত ধরে আমার উঠে আসা । বাবার পরে তিনিই আমার শিক্ষাগুরু । আমার পদ্মশ্রী পুরস্কার তন্ময় বসুকে উৎসর্গ করতে চাই । গ্রামবাংলার প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র ঢাককে যেভাবে ভারত সরকার মনে রেখেছে, তাঁদের সেই ভাবনাকে সাধুবাদ জানাই ।"
অন্যদিকে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্ব এবং অবদানের জন্য বাংলার যে ন'জন গুণী ব্যক্তি পদ্মশ্রী পেতে চলেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার । এনিয়ে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টও করেছেন তিনি ।