নয়াদিল্লি, 4 ফেব্রুয়ারি: ‘‘আপনারা কোনও শুভ মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন ?’’ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভৎর্সনার মুখে পড়ল অসম সরকার ৷ বিদেশি ঘোষিত ব্যক্তিদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক কেন্দ্রে রাখার এবং তাদের মুক্তি না-দেওয়ার জন্য হিমন্ত-সরকারকে তুলোধনা করল দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় ।
বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অসম সরকার তথ্য গোপন করছে ৷ শুনানিতে বেঞ্চ জানিয়েছে, একবার আটক ব্যক্তিদের বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত করা হলে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত । অসম সরকারকে বেঞ্চ বলে, ‘‘আপনারা মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছেন কারণ তাদের ঠিকানা জানা নেই । কেন এটি আমাদের উদ্বেগের বিষয় হবে ? আপনি কি কোনও মুহূর্তের (শুভ সময়ের) জন্য অপেক্ষা করছেন ?’’
উত্তরে অসম সরকার জানায়, আটক বিদেশিদের ঠিকানা অজানা থাকায় তারা জাতীয়তা যাচাই ফর্ম বিদেশ মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছে না । পালটা সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘‘একবার কোনও ব্যক্তিকে বিদেশি ঘোষণা করলে, আপনাকে পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে । আপনি তাদের অনন্তকাল ধরে আটকে রাখতে পারবেন না । সংবিধানের 21 অনুচ্ছেদে আছে । অসমে অনেক বিদেশি আটক কেন্দ্র রয়েছে । আপনি কতজনকে ছেড়েছেন ?’’
এদিনের শুনানিতে শীর্ষ আদালত অসম সরকারকে 63 জন ঘোষিত বিদেশি নাগরিককে (যাদের পরিচয় জানা) মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে দু’সপ্তাহের মধ্যে একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে । নির্দেশনামায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ‘‘আমরা রাজ্যকে এই আদেশে সম্মতি জানিয়ে একটি যথাযথ হলফনামা দাখিল করার নির্দেশ দিচ্ছি । যদি রাজ্য সরকার দেখতে পায় যে জাতীয়তা যাচাইকরণ ফর্ম দু’মাস আগে পাঠানো হয়েছে, তাহলে রাজ্য অবিলম্বে বিদেশ মন্ত্রককে একটি স্মারক জারি করবে । মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই স্মারক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয়তা যাচাইকরণের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় কর্তৃক কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷’’
শুনানিতে অসমের মুখ্য সচিব ডঃ রবি কোটাকে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ বেঞ্চ মুখ্যসচিবকে বলে, ‘‘ঠিকানা ছাড়াই আপনি তাদের মুক্তি দিতে পারেন । আপনি তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না ৷ আপনি তাদের দেশের রাজধানীতে নির্বাসন দেন । ধরুন ব্যক্তিটি পাকিস্তানের, আপনি পাকিস্তানের রাজধানী শহর জানেন ? আপনি কীভাবে তাদের এখানে আটকে রাখতে পারেন এই বলে যে তাদের নির্দিষ্ট ঠিকানা-পরিচয় জানা নেই ?’’
শুধু তাই নয়, বিদেশিদের আটক রেখে দেশের কোষাগার থেকে প্রচুর খরচ হচ্ছে ৷ তা নিয়ে সরকার কেন কিছু ভাবছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ বেঞ্চকে অসম সরকারের আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস বলেন, ‘‘বাংলাদেশ আটক ব্যক্তিদের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে । ভারত বলেছে তারা ভারতীয় নয় । বাংলাদেশ বলেছে তারা বাংলাদেশি নয় । ফলে তারা কার্যত রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছে । আটক কেন্দ্রে তারা 10 বছরেরও বেশি সময় ধরে আটক রয়েছে । বাংলাদেশ বলেছে যে তারা বহু বছর ধরে ভারতে বসবাসকারী কাউকে গ্রহণ করবে না ৷’’
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, 25 ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি হবে । 22 জানুয়ারি শীর্ষ আদালত মাতিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে 270 জন বিদেশিকে আটকের স্পষ্ট কারণ না-দেওয়ার জন্য অসম সরকারকে তিরস্কার করে । তারপরেই সুপ্রিম কোর্ট অসম রাজ্য আইন পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে মাতিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে আকস্মিক পরিদর্শন করার নির্দেশ দেয় ৷ যাতে তারা সেখানকার স্বাস্থ্যবিধি এবং খাবারের মান পরীক্ষা করতে পারে । শুধু তাই নয়, অসম সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য নির্বাসনের প্রমাণ না-দেখা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল বিদেশি ঘোষিত কোনও ব্যক্তিকে আটক করতে পারবে না ।