কলকাতা, 8 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডে রাজ্য সরকার, বিশেষত কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন তোলা হাতে গোনা কয়েকজনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার ৷ সেই জহর সরকার আজ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন ৷ সঙ্গে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি ৷ আরজি কর-কাণ্ডে এটাই তাঁর 'প্রতিবাদ' বলে জানিয়েছেন জহর সরকার ৷ তবে, শাসকশিবিরে থেকে এমন প্রতিবাদ করতে গেলে শিরদাঁড়া সোজা রাখতে হয়, এমনই মত বিরোধী বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের ৷ তারা সবাই কুর্নিশ করছে জহর সরকারকে ৷
এনিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, "আমার সুখেন্দুশেখর রায়, জহর সরকারদের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করতে ইচ্ছে করছে ৷ কারণ, একটা দলের মধ্যে থেকে তাঁদের এই প্রতিবাদ, বাংলার মা-বোনেদের দাবিকে সম্মান জানানো, অত সহজ নয় ৷ কিন্তু, তাঁদের এই প্রতিবাদ রাজ্যের শাসকদলকে প্রভাবিত করবে বলে আমার মনে হয় না ৷ গণ্ডারের চামড়ার মতো তৃণমূলের শরীর ৷ তাই এই প্রতিবাদ তাদের চামড়া ভেদ করবে না ৷"
জহর সরকারের প্রশংসা করলেন সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও ৷ তাঁর কথায়, "সঙ্গত কারণেই পদত্যাগ করেছেন জহর সরকার ৷ রাজ্যে যা চলছে, তা সহ্য করতে পারছেন না, অসম্মানিত হচ্ছেন ৷ কুঁকড়ে যাচ্ছেন লজ্জায় ৷ ডাক্তার-সহ সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন ৷ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও এর নিন্দা চলছে ৷ বাংলা কখনও এর আগে এতটা লজ্জিত হয়নি ৷ যা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হচ্ছে ৷ অনুব্রত মণ্ডল, জেসিবি, সন্দীপ ঘোষ কিংবা শাহজাহানদের রাজত্ব চলছে ৷ এরাই রাজ্য, স্বাস্থ্য পরিচালনা করে ৷ এরাই শিক্ষা পরিচালনা করে ৷ তাই যে কোনও সংবেদনশীল মানুষ এর প্রতিবাদ করবে ৷ জহর সরকারও একজন সংবেদনশীল ব্যক্তি ৷ তাই তিনি প্রতিবাদ করলেন সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে ৷"
বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের পাশাপাশি বিজেপির নেতারাও জহর সরকারের প্রতিবাদ এবং মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা প্রতিবাদী চিঠির প্রশংসা করেছেন ৷ এ নিয়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, "জহর সরকার যে পদক্ষেপ করেছেন, তা অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ এবং সমাজের সামনে দৃষ্টান্ত বলে আমি মনে করি ৷ যাঁর মনুষ্যত্ব আছে, তিনি এই পরিস্থিতিতে চুপ থাকতে পারেন না ৷ জহর সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে ৷ তাঁর শিক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে ৷ তাঁর এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই ৷ এই পদক্ষেপ সুদূর প্রসারী হবে বলেই আমি মনে করি ৷"