কলকাতা, 28 এপ্রিল: চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহ ৷ আচমকাই খবরে উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সন্দেশখালি ৷ রাজনৈতিক হিংসা, হানাহানির ক্ষত গায়ে মেখে অতীতে বাংলা খবরের শিরোনামে এসেছে বহুবার ৷ 5 জানুয়ারি সন্দেশখালিতে পুরোনো একটি মামলার তদন্তে এসে এবার আক্রান্ত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি'র আধিকারিকরা ৷ যা ভারতীয় রাজনীতিতে বিরল ৷ সেই ঘটনা পরম্পরায় সম্প্রতি সন্দেশখালিতে রোবট নামিয়ে অস্ত্রাগারের তল্লাশি চালিয়েছে ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড।
এর মাঝে গত চার মাসে উত্তর 24 পরগনার গ্রামে ঘটে গিয়েছে ঘটনার ঘনঘটা ৷ কেন্দ্রবিন্দুতে একটাই নাম শেখ শাহজাহান ৷ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের অধীনে থাকা সেদিন সংশ্লিষ্ট মামলায় জড়িত ছিলেন শাহজাহান ৷ এলাকার 'বেতাজ বাদশা'কে আড়াল করতে একজোট হয়ে সেদিন ইডি আধিকারিকদের উপর হামলা চালান সন্দেশখালির মহিলাদের একাংশ ৷ ভাঙচুর করা হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার গাড়ি, আক্রান্ত হন আধিকারিকও ৷ সবমিলিয়ে ভোটের মুখে 'টক অফ দ্য টাউন' হয়ে ওঠে সন্দেশখালি ৷
সেই থেকেই লাগাতার খবরের শিরোনামে থেকেছে সন্দেশখালি ৷ কেঁচো খুড়তে বেরিয়েছে কেউটে ৷ যে সন্দেশখালির মহিলারা ঢাল হয়েছিলেন ইডি'র হাত থেকে শাহজাহানকে রুখতে, সময়ের সঙ্গে তাদেরই অভিযোগে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকলেন ঘটনার 'মাস্টারমাইন্ড' শাহজাহান ৷ অবশেষে রাজ্য পুলিশের হাতে শাহজাহান গ্রেফতার হয় পঞ্চাশেরও বেশিদিন পর ৷
মাঝের সময়ে শাহজাহান রাজ্য পুলিশের তোষামদেই ছিল বলে দাবি ওঠে বিভিন্ন মহলে ৷ গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ তাঁকে সিবিআই'য়ের হাতে তুলে দেয় ৷ ঘটনার ঘনঘটায় গ্রেফতার হয় শাহজাহানের ভাই শেখ আলমগীর ও তার শাগরেদরাও ৷ শাহজাহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জমি দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি থেকে বিদেশে আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন বিষয় সামনে আসতে থাকে ৷ সামনে আসে মাছের ভেড়ির আড়ালে শাহজাহানের কালো টাকা সাদা করার বিষয়টিও ৷ এর মাঝে ইডিও বেশ কয়েকবার সন্দেশখালিতে যায় আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার তদন্তে ৷
ইডি-সিবিআই, সমান্তরালভাবে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের মধ্যে গত 10 এপ্রিল সন্দেশখালির সব মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট ৷ অভিযোগ শুনতে সিবিআই'কে পোর্টাল বানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়, যা শুনে খোদ শাহজাহান বলে, "সিবিআই তদন্ত করলে ভালো হবে ৷" তদন্তের অংশ হিসেবে শুক্রবার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার দিন সরবেড়িয়ায় শাহজাহান-ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে সিবিআই ৷ হদিশ মেলে বিদেশি অস্ত্রেরও ৷ লুকনো অস্ত্রের সন্ধান পেতে ডাকা হয় ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ডকে ৷ নামে রোবট-ও ৷
এখন প্রশ্ন হচ্ছে সন্দেশখালি দুর্নীতির শেষ কোথায়? শাহজাহানের দুর্নীতির তল পেতে গেলে আরও কত দুর্নীতি সামনে আসবে ? যাইহোক, আঁধার পেরিয়ে আলোয় ফিরুক সন্দেশখালি, উদঘাটন হোক সব সত্যের ।
আরও পড়ুন: