জলপাইগুড়ি, 8 মে: খামখেয়ালি আবহাওয়ায় ক্ষতির মুখে উত্তরবঙ্গের চা শিল্প ৷ বিগত 7 মাস ধরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই । সেইসঙ্গে আছে পোকামাকড়ের উৎপাত ৷ এই সবকিছুর প্রভাব পড়ছে উত্তরবঙ্গের চা বলয়ে ৷ বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন চা বাগানের মালিকরা ৷
গ্রীষ্মের প্রখর তেজে ঝলসে যাচ্ছে চা পাতা ৷ অন্যদিকে, স্বল্পবৃষ্টির কারণে পোকামাকড়ের সংক্রমণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে ৷ ফলে কমে যাচ্ছে চা উৎপাদনের পরিমাণ ৷ এই বছরের মার্চ মাসের হিসাব বলছে, সারা ভারতে চায়ের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে ৷ 2023 সালে গোটা দেশে মোট চায়ের উৎপাদন পরিমাণ ছিল 79.61 মিলিয়ন কেজি ৷ 2024 সালে এখনও পর্যন্ত 62.52 মিলিয়ন কেজি উৎপাদিত হয়েছে ৷ অর্থাৎ, গত বছরের তুলনায় এবছর 17.09 মিলিয়ন কেজি কমেছে চা উৎপাদনের পরিমাণ ৷ 2023 সালের তুলনায় প্রায় 22 শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে এই বছর ।
চলতি বছর মার্চ মাসের উৎপাদনে ক্ষুদ্র চা বাগানগুলির অবদান ছিল 38.25 মিলিয়ন কেজি ৷ অন্যদিকে বড় বাগানগুলির উৎপাদনের পরিমাণ 24.27 মিলিয়ন কেজি ৷ এবছর বাংলার চা বাগানগুলি থেকে চা উৎপাদন হয়েছে 24.05 মিলিয়ন কেজি । 2023 সালে যা ছিল 30 মিলিয়ন কেজি । অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এই বছর প্রায় 6 মিলিয়ন কেজি চা কম উৎপাদন হয়েছে ।
চা উৎপাদন কম হওয়ার পিছনে মূলত আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা । সেই সঙ্গে পোকামাকড়ের উপস্থিতি এই উৎপাদন কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ৷ চা বাগান মালিক সংগঠন 'ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন'এর মুখ্য উপদেষ্টা অমৃতাংশু চক্রবর্তী বলেন, "গত বছরের তুলনায় এই বছর বৃষ্টির অনুপাত অনেক কম রয়েছে । 9-10 ইঞ্চি বৃষ্টি কম রয়েছে এই বছর । ফলে যে পরিমান উৎপাদন আমরা আশা করেছিলাম, তা ব্যহত হয়েছে বৃষ্টির কারণে ।"
সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের কারণে চা পাতা ঝলসে যাচ্ছে । সেইসঙ্গে পোকামাকড়ের সংক্রমণ তো রয়েছে ৷ স্প্রে করে পোকামাকড় তাড়ানো ব্যয় সাপেক্ষ ব্যপার । কোনও জায়গায় সবুজ চা পাতা দেখা যাচ্ছে না । আমাদের উৎপাদন প্রায় 40 শতাংশ কমে গিয়েছে ৷ একমাত্র ভালো বৃষ্টি হলেই গাছ বাঁচানো যাবে ।"
জলপাইগুড়ির চা চাষী সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, "গত কয়েক বছর থেকে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার জন্য চা পাতা উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে । এই বছর প্রায় সাড়ে সাত মাস বৃষ্টি নেই । এই মুহূর্তে জল সেচ করে গাছ বাঁচানো যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু উৎপাদন আসছে না । মার্চ মাসে যে পরিমান চা পাতা উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি । ভারতবর্ষে এবার 22 শতাংশ চা উৎপাদন কম হয়েছে । পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে সবার পক্ষে কৃত্রিম উপায়ে জল সেচ দেওয়া সম্ভব হয় । চা একটি প্রকৃতি নির্ভর শিল্প ৷ সুতরাং বৃষ্টি না হলে উৎপাদন আরও উৎপাদন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।" সেইসঙ্গে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে তিনি বলেন, "আমরা বাংলার চা শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের জন্য ফসল বিমা যোজনা ও সেচের জন্য সরকারের কাছে সাহায্যের দাবি করেছি ৷ সরকারের তরফে এই সাহায্য পাওয়া গেলে উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষের সঙ্গে যুক্ত প্রায় দশ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে উপকৃত হবেন ।"
আরও পড়ুন: