বোলপুর, 19 ফেব্রুয়ারি: এবার আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনে হচ্ছে না মাতৃভাষা দিবস উদযাপন । এমনকী বাতিল করা হয়েছে সন্ধ্যানুষ্ঠান ৷ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওপার বাংলার পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷
এই প্রসঙ্গে অবশ্য বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অতিগ ঘোষ বলেন, "বাংলাদেশ ভবন সংস্কার হচ্ছে ৷ তাই ওখানে অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয় ৷ এই কারণে অন্যত্র অনুষ্ঠান করা হচ্ছে ৷" তাই স্থান পরিবর্তন করে 21 ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হবে ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় সংহতি কেন্দ্রের ভবনে ৷

2017 সালে শান্তিনিকেতনে পূর্বপল্লীর পিছনের মাঠে 1 লক্ষ 40 হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গাজুড়ে তৈরি হয়েছিল আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবন ৷ বাংলাদেশ সরকারের 40 কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল এই ভবন ৷ দুই বাংলার সংহতির প্রতীক এই ভবনের নকশা নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৷ পরের বছর অর্থাৎ 2018 সালের 25 মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন ৷ উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷
এই ভবনে রয়েছে দুই বাংলার ইতিহাসের মূল্যবান নথি, মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি-সহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার একাধিক স্মৃতি, ভাস্কর্য, বই প্রভৃতি ৷ রয়েছে একটি গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা, গবেষণাগার, প্রেক্ষাগৃহ ৷ এই বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের পর থেকেই 21 ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এখানেই উদযাপিত হয়ে আসছে ৷
তার আগে যদিও, বিশ্বভারতীর বিভিন্ন জায়গায় মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান হত ৷ এই অনুষ্ঠানে মূলত ওপার বাংলার পড়ুয়ারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন ৷ তাঁদের তত্ত্বাবধানে সকালের অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যার অনুষ্ঠান হয় ৷ কিন্তু, এবার ওপার বাংলার অবস্থা অন্যরকম ৷ গত বছরের 5 অগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে ৷ প্রতিবেশী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও বদলেছে ৷ সেই সব দিক ভেবে আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনে হচ্ছে না মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান ৷
গত বছরের জুলাই মাস থেকে চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণের দাবিতে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশ ৷ বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর ভাঙচুর করা মুজিবুর রহমানের মূর্তি, ভাস্কর্য ৷ বর্তমানে সেখানে নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধানে চলছে অন্তবর্তী সরকার ৷
ওপার বাংলায় হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই এপার বাংলায় আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনের সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ এখনও বন্ধ এই সংগ্রহশালা ৷ যদিও, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে বাংলাদেশ ভবন সংস্কার হচ্ছে তাই মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান অন্যত্র করা হচ্ছে ৷ রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোনও ঝুঁকি নিতেই নারাজ ৷ বিশ্বভারতীতে এই মুহূর্তে প্রায় 35 জন বাংলাদেশি পড়ুয়া আছেন ৷ প্রতি বছরই 40-50 জন বাংলাদেশি পড়ুয়া বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ভবনে ভর্তি হয়ে থাকেন ৷