সোদপুর, 23 সেপ্টেম্বর: আরজি কর-কাণ্ডে পরতে পরতে লুকিয়ে রহস্য ৷ তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই যেন নিত্য নতুন তথ্য উঠে আসছে এই ঘটনাকে ঘিরে। এরই মধ্যে রবিবার সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে নির্যাতিতার ময়নাতদন্ত নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন আরজি করের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাস।
সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি দাবি করেন, "ঘটনার দিন মেয়েটির কাকা পরিচয় দিয়ে একজন হুঁশিয়ারির সুরে আমাদের বলে দ্রুত ময়নাতদন্ত করতে হবে। না হলে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হবে ৷" ওই ব্যাক্তি নিজেকে প্রাক্তন কাউন্সিলর হিসাবেও পরিচয় দেন বলেও জানান অপূর্ব বিশ্বাস। নথি দেরিতে আসার কারণেই সেদিন ময়নাতদন্ত শুরু হতে দেরি হয় বলেও দাবি করেছেন ওই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাস যে 'কাকা' কিংবা প্রাক্তন কাউন্সিলরের বিষয়টি এখানে উল্লেখ করেছেন আদতে তিনি সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। পানিহাটি পুরসভার 34 নম্বর ওয়ার্ডের একসময়ে সিপিএমের কাউন্সিলর ছিলেন। বর্তমানে অবশ্য সঞ্জীব শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। যদিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাসের দাবি খারিজ করে এর পিছনে 'চক্রান্ত' দেখছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়। এনিয়ে ইটিভি ভারতের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের অভিযোগ খারিজ করে সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় একের পর এক প্রশ্নের সোজাসাপটা জবাব দিয়েছেন।
'ময়নাতদন্ত দ্রুত না হলে রক্তাগঙ্গা বইয়ে দেওয়া হবে।' নির্যাতিতার 'কাকু' পরিচয় দিয়ে আপনি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অপূর্ব বিশ্বাসকে হুমকি দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগের ইঙ্গিত ছিল আপনার দিকেই।
এরকম কোনও কথা আমার সঙ্গে হয়নি ৷ আর আমি এই ধরণের কথা বলবই বা কেন! সিস্টেমের মধ্যে কাজ চলছে। ময়নাতদন্তের দিন যেখানে পুলিশ প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা উপস্থিত। ছাত্ররা আন্দোলন করছেন। সেখানে এরকম মতামত আমি দিতে যাব কেন ? তাহলে কী এরকম কোনও প্ল্যান ছিল, যে ময়নাতদন্ত হবে না ? যদি ময়নাতদন্ত না করার চিন্তাভাবনা হয়ে থাকে, তাহলে আমি এমন কে, যে আমার বলার পর সমস্ত আইন-কানুন মেনে ময়নাতদন্ত হয়ে গেল ?
তাহলে কী ছাত্রদের সব দাবিদাওয়া মানা হয়েছিল ? তাঁরা যে-কটা দাবি রেখেছিলেন সেসময় ?
ছাত্ররা যে-কটা দাবি রেখেছিলেন, সেই দাবি দাওয়ার উপর নির্ভর করেই সবটা হয়েছিল। তাঁদের কতজন প্রতিনিধি থাকবে, কতজন চিকিৎসক থাকবেন ময়নাতদন্তে, সেটা মেনেই তো ময়নাতদন্ত হয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, যখন মৃতদেহ উপর থেকে নীচে নামিয়ে পোস্টমর্টেম ঘরে নিয়ে যাওয়া হল, তখন আমি নির্যাতিতার বাবাকে বলি, আমি কাটাছেঁড়া দেখে সহ্য করতে পারব না। এর চেয়ে বরং আমি ও আপনি (নির্যাতিতার বাবা) টালা থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করে আসি। তাহলে যেখানে হাসপাতালের বাউন্ডারির মধ্যেই থাকলাম না সেখানে কীভাবে আমার নাম আসছে ? এর আগেও আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, আমি নাকি পরিবারকে সাদা কাগজে সই করিয়েছি। এফআইআর করার সময় টালা থানায় নির্যাতিতার বাবা, তাঁর এক বিশেষ বন্ধু এবং পরিচিত কয়েকজন গিয়েছিলেন আমার সঙ্গে।
তাহলে কী কারণে আপনার নাম উঠছে?
কে, কী কারণে এসব বলছে সেটা আমি বলতে পারব না। যে বলছে সেটা তাঁর দায়িত্ব ৷ কী উদ্দেশে বলছে, সেটা তাঁরাই জানে। তবে, একথা শুনে আমি অবাক। ওঁকে (চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস) আমি চিনি না। আমাকে উনি কী করে চিনলেন তা জানি না। এত গুছিয়ে বলছেন সবকিছু। আমি প্রাক্তন কাউন্সিলর ৷ আমি কাউন্সিলর থাকাকালীন কখনও নিজেকে কাউন্সিলর হিসেবে পরিচয় দিতাম না। তারপরও উনি যেভাবে গুছিয়ে বলছেন সেটা উনিই ভালো জানেন। আর তদন্তকারী সংস্থা বলতে পারবে।
পুরো বিষয়টি কী সিবিআইকে জানাবেন ?
অবশ্যই ৷ আমি কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে রয়েছি। এই ধরণের কথা জানতে পেরেই আমি বাড়ি ফিরে আসছি। আমার বাড়ির পাশেই থাকে নির্যাতিতার পরিবার। বাড়ি ফিরে ওঁদের সঙ্গে কথা বলব। বাবা-মাকে বলব, আপনারা তদন্তের স্বার্থে, সিবিআইকে বলুন আমাকে ডাকতে। আর ওই চিকিৎসককে সামনাসামনি বসাতে। আমি নিজে ভীষণভাবে রাজি। সিবিআইয়ের মুখোমুখি হওয়ার সময় ওর বাবা-মা থাকলে ভালো হয়। কারণ, আমার কাছে বিষয়টি ভীষণভাবে স্বচ্ছ। আমি সেদিন যতটুকু করেছিলাম, সেটা আন্তরিকভাবেই। নির্যাতিতা মেয়েটি আমার কন্যাসম। আমার মেয়ের সঙ্গে ওর বয়সের বিশেষ হেরফের নেই। তাই সন্তানসম মেয়েটির মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমি যথেষ্ট ব্যথিত। সেসময় যতটুকু মাথা কাজ করেছে, ততটুকু কাজ করেছি। এর মধ্যে কোনও ফাইল ছিল না। ফাইল কেউ বের করতে পারবে না। কুৎসা করতে পারে। কিন্তু, সত্য আজও থাকবে, কালও থাকবে ৷ সিবিআই ডাকলেও থাকবে।
আপনি নাকি বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন, এরকম একটা অভিযোগ উঠছে !
স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই জানে আমি কাজের সূত্রে মাসে অন্তত 10 দিন বাইরে থাকি। এটা নতুন কিছু নয়। যে অপপ্রচার করা হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে সেটা 'ফেস' করার জন্যই কাজ ফেলে আমাকে ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে। পালিয়ে যাব কেন ? কাজের সূত্রেই বাইরে রয়েছি। সেটা আমার পরিবার, প্রতিবেশী কারও অজানা নয়। তৃণমূলে যোগ দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু, সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে পারছি না, একটাই কারণ, কাজের ব্যস্ততা।