মালদা, 7 সেপ্টেম্বর: ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু হল মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিকের ৷ মৃত শ্রমিকের নাম মতিউর রহমান (42) ৷ শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তাঁকে মারধর করে খুন করা হয়েছে ৷ এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন মৃতের স্ত্রী ৷ গোটা ঘটনার পিছনে বাঙালি বিদ্বেষের গন্ধ পাচ্ছেন রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ ওই শ্রমিকের দেহ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ৷
মতিউরের স্ত্রী রৌশনারা খাতুন বলছেন, "আমার বিয়ের আগে থেকে ও জয়পুরে কাজ করছে ৷ মঙ্গলবার সারাদিন ওর ফোন আসেনি ৷ রাত 10টার পর আমিই ওকে ফোন করি ৷ একটা বাচ্চা ফোন ধরে ৷ সে ওকে ফোন দেয় ৷ ও বলে, ও শেষ ৷ ওকে দোকানের কর্মচারীর লোকজন বেধড়ক মারধর করেছে ৷ তখনই ওকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ৷ আজ সকালে খবর আসে, ওর মৃত্যু হয়েছে ৷ আমি এর সঠিক বিচার চাই ৷ আমার দুটো ছোট বাচ্চা ৷ দুই ছেলেকে কীভাবে মানুষ করব? খাবই বা কী? ওর রোজগারেই সংসার চলত ৷ এখন কী হবে জানি না ৷"
জানা গিয়েছে, মৃত শ্রমিকের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের মিসকিনপুর গ্রামে ৷ তিনি সোনার গয়না তৈরির কারিগর ছিলেন ৷ 20 বছর ধরে তিনি রাজস্থানের জয়পুরে একটি সোনার দোকানে কাজ করতেন ৷ পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী আর দু’টি নাবালক ছেলে ৷ পাঁচ মাস আগে শেষবারের মতো বাড়ি এসেছিলেন তিনি ৷
পরিবার সূত্রে খবর, তিনি যে দোকানে কর্মরত ছিলেন সেই দোকানের এক কর্মীর সঙ্গে তাঁর ঝামেলা ছিল ৷ অভিযোগ, এই ঝামেলার জেরে গত মঙ্গলবার তাঁকে বেধড়ক মারধর করে ওই কর্মী ও তার লোকজন ৷ সেখানে কর্মরত মালদার পরিযায়ী শ্রমিকরা তাঁকে তড়িঘড়ি স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন ৷ তাঁর অস্ত্রোপচারও হয় ৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি ৷ শনিবার সকালে মৃত্যু হয় মতির ৷
গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল আলমের কথায়, "প্রথমে মতিউরকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখান থেকে বলে দেওয়া হয়, ওর পরিস্থিতি ভালো নয় ৷ প্রচুর মারধর করা হয়েছে ৷ ভিতরে কিছু নষ্ট হয়ে গিয়েছে ৷ ওর এক ভাই মুম্বইয়ে থাকে ৷ আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করি ৷ ওর ভাই সঙ্গে সঙ্গে মুম্বই থেকে জয়পুর চলে আসে ৷ মতির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল ৷ আমরাই এখান থেকে টাকাপয়সা পাঠাই ৷ ওর দোকানের ম্যানেজারও হাসপাতালে যান ৷ তিনি বলেন, দোকানের এক কর্মীর সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়েছিল ৷"
এই খবর পেয়ে মতিউরের বাড়িতে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ তিনি বলেন, "আমরা মতির পরিবারের পাশে আছি ৷ আমাদের দিদিকেও বলব, পেটের দায়ে মতি ভিনরাজ্যে কাজ করত ৷ ওর পরিবারকে যেন সরকারি সহায়তা করা হয় ৷ কিন্তু আসল কথা, বাঙালি বিদ্বেষের কারণেই মতির মৃত্যু হয়েছে ৷ ওরা বাঙালিকে দেখতে পারছে না ৷ এর আগে ওরা সাবিরকে মেরেছে ৷ আজ মতিকে মারল ৷ বাঙালিদের ওরা ছোট নজরে দেখছে ৷ এটা সঠিক নয় ৷"