ব্যারাকপুর, 16 নভেম্বর: দিনের পর দিন ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে ৷ সেই মানসিক চাপ সহ্য করতে না-পেরে আত্মঘাতী উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ?
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে । মৃতের আত্মীয়দের দাবি, ওই চিঠিতে এক মহিলা ও তাঁর স্বামীর নাম রয়েছে ৷ তাঁরাই সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী ৷ এই 'সুইসাইড নোট' ঘিরে ঘনীভূত হয়েছে রহস্য ৷
উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের এক আত্মীয় বলেন, "দাদার দেহের পাশে একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে ৷ তাতে সব লেখা আছে ৷ দাদা চিঠিতে এক মহিলা ও তাঁর স্বামীর নাম লিখে গিয়েছেন ৷ দাদার কাছে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্ল্যাকমেল করে নিয়েছে ৷ দাদার মৃত্যুর জন্য এক মহিলা ও তাঁর স্বামী দায়ী ৷ ন'মাস ধরে দাদাকে ভুয়ো ভিডিয়ো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করেছে তাঁরা ৷ আমরা ওই মহিলার শাস্তি চাই ৷"
একদিন নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে শনিবার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের । শনিবার সকালে ভাড়া বাড়ির ছাদের পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে তাঁর দেহটি উদ্ধার হয় । এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন । তারপর আর বাড়ি ফেরেননি । দলীয় কার্যালয় বা অন্যান্য পরিচিতদের বাড়িতেও তাঁর খোঁজ মেলেনি । এ দিন রাত ন'টার পর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন সুইচড অফ হয়ে যায় । পরিচিতরা তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন । কিন্তু, ফোন বন্ধ থাকায় সত্যজিতের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি তারা ।
কোথাও তাঁর হদিশ না-মেলায় শেষে পরিবারের লোকেরা রাতে নোয়াপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । শনিবার সকাল 10টা নাগাদ বাড়ির ছাদে পরিত্যক্ত একটি ঘরে নিখোঁজ সত্যজিতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় । তাঁর দেহ দেখতে পরিবারের লোকজন খবর দেয় নোয়াপাড়া থানায় । এরপর পুলিশ এসে তাঁর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় ।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার 8 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন । 1984 সাল থেকে তিনি টানা নির্বাচিত হয়েছেন । প্রথমে কংগ্রেস করলেও 1998 সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠিত হওয়ার পর থেকে তিনিও দলত্যাগ করে ঘাসফুল শিবিরে নাম লেখান । 2022 সালের পুরসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর দল তাঁকে উপ-পুরপ্রধানের দায়িত্ব দেয় ।
সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর ব্যারাকপুরের আনন্দমঠ বি-ব্লকে বাস করতেন । সম্প্রতি তাঁর বাড়ির সংস্কারের কাজ চলছে । তাই, পাশের একটি বাড়িতে তিনি পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন । বাড়িতে তাঁর মা, স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে । তিন ভাইয়ের মধ্যে সত্যজিৎ ছিলেন সবথেকে বড় ।
এই বিষয়ে উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান মলয় ঘোষ বলেন, "বৃহস্পতিবার বিকেলেও পুরসভায় সত্যজিতের সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ কথা হয়েছে । তাঁর কথাবার্তা ও আচরণের মধ্যে আমি কোনও অস্বাভাবিকতা পাইনি । গতকাল পরিবারের লোকেরা আমাকে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন । আজ সকালে তাঁর দেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি । ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, পুলিশ তা তদন্ত করছে ।"
এদিকে, এই রহস্যমৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করতে নিহত তৃণমূল নেতার বাড়িতে পৌঁছন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস । তিনি বলেন, "তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হচ্ছে । বাড়ির ছাদ থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে । সেটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে ।"