মালদা, 13 ফেব্রুয়ারি: সদ্যোজাত সন্তানকে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে মাকে গ্রেফতার করল চাঁচল থানার পুলিশ ৷ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ধৃতকে মঙ্গলবার চাঁচল মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে ৷ এই খবর চাউর হতেই গোটা জেলা জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ৷
ধৃত মহিলার বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলা থানা এলাকায় ৷ তিনি পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক ৷ বেশ কয়েকবছর ধরে স্বামীর সঙ্গে দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করতেন ৷ তাঁদের আগেই তিন সন্তান ছিল ৷ চতুর্থবারের জন্য গর্ভবতী হন ওই মহিলা ৷ সম্প্রতি স্বামী তাঁকে ছেড়ে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন ৷ তারপর থেকে তিনি প্রথম স্ত্রীকে ছেড়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছেই থাকতে শুরু করেন ৷ যাওয়ার সময় তিনি একমাত্র কন্যাসন্তানকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান ৷ বাকি দুই পুত্রসন্তান মায়ের কাছেই থাকত ৷ 13 দিন আগে দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালে চতুর্থ সন্তান প্রসব করেন ওই মহিলা ৷ এবারও তাঁর পুত্রসন্তান হয় ৷ দিল্লির মতো জায়গায় একা কাজ করে কীভাবে তিন ছেলেকে মানুষ করবেন, সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠেন তিনি ৷
অবশেষে তিনি বাড়ি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন ৷ শেষ পর্যন্ত দিল্লি থেকে বাড়ির উদ্দেশে ট্রেনে রওনা দেন তিনি ৷ ওই ট্রেনেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় চাঁচলের একটি গ্রামের এক পরিযায়ী শ্রমিক দম্পতির ৷ নিজেদের মধ্যে কথাবার্তার পর মহিলা জানতে পারেন, ওই দম্পতি নিঃসন্তান ৷ তা জানতে পেরেই তিনি ওই দম্পতির কাছে তাঁর সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে তুলে দেওয়ার কথা বলেন ৷ নিঃসন্তান ওই দম্পতিও যেন হাতে আকাশের চাঁদ পান ৷ তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান ৷ শেষ পর্যন্ত ওই মহিলা ডালখোলা না গিয়ে ওই দম্পতির সঙ্গে তাঁদের চাঁচলের গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন ৷
এদিকে গ্রামে চাউর হয়ে যায়, ওই মহিলা নিজের সদ্যোজাত সন্তান বিক্রি করতেই সেই দম্পতির বাড়িতে এসেছেন ৷ গ্রামবাসীদের কাছে সেই খবর পেয়ে সোমবার রাতে ওই বাড়িতে পৌঁছয় চাঁচল থানার পুলিশ ৷ তিন সন্তান-সহ মহিলাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর মহিলাকে গ্রেফতার করা হয় ৷
সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রেজাউল হক বলেন, "আমরা শুনেছি, ওই মহিলা অভাবের তাড়নায় নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে ওই নিঃসন্তান দম্পতিকে দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ৷ এর পিছনে টাকা পয়সা সংক্রান্ত কোনও বিষয় রয়েছে কি না তা আমার জানা নেই ৷ পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে ৷"
এদিকে মঙ্গলবার চাঁচল থানার আইসি পূর্ণেন্দুকুমার কুণ্ডু বলেন, "জিজ্ঞাসাবাদে সন্তোষজনক উত্তর না মেলায় ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে সাতদিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে আজ তাঁকে চাঁচল মহকুমা আদালতে পাঠানো হয়েছে ৷ সদ্যোজাত সন্তানকে তাঁর সঙ্গেই রাখা হয়েছে ৷ বাকি দুই সন্তানকে সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে ৷ আমরা তদন্তের স্বার্থে ওই মহিলার বাড়ির সদস্যদের খবর দেওয়ার জন্য ডালখোলা থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি ৷ এক্ষেত্রে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করাও জরুরি ৷ গোটা বিষয়টি জানতে ওই মহিলাকে আরও জেরার প্রয়োজন রয়েছে ৷"
আরও পড়ুন :