নৈহাটি, 5 ফেব্রুয়ারি: সংসারে নিত্য অশান্তি লেগেই থাকত ৷ স্বামী মদ খেয়ে অত্যাচার করতেন বলে অভিযোগ । তার জেরে অভিমানে পুত্রসন্তানকে 'মেরে' ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধে । পরে আত্মঘাতী হলেন তিনি নিজেও । পুলিশ জানিয়েছে, নিহত বিশ্বমিত্র ওরফে প্রিয়াঙ্কা অধিকারী এবং তাঁর চার বছরের সন্তান সৌমিকের নিথর দেহ বাড়ির ভিতর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে । ঘটনা ঘিরে রবিবার রাতে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে উত্তর 24 পরগনার নৈহাটি পৌরসভার 21 নম্বর ওয়ার্ডে ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এটিকে আত্মহত্যার ঘটনা মনে করলেও এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । ঘটনার পরেই মৃত বিশ্বমিত্রর স্বামী শুভঙ্কর অধিকারীকে পুলিশ আটক করেছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
জানা গিয়েছে, নৈহাটির অরবিন্দ পল্লিতে টালির একচিলতে বাড়িতে স্ত্রী ও পুত্রসন্তান নিয়ে বসবাস শুভঙ্করের । পাশেই তাঁর আত্মীয়-স্বজনরা থাকেন । অভিযোগ, সংসারের কোনও দায়িত্ব সেভাবে পালন করতেন না তিনি । ঠিকমতো টাকাও দিতেন না । উলটে প্রায়ই নেশা করে রাতে বাড়ি ফিরতেন শুভঙ্কর । এ নিয়ে দম্পতির মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেই থাকত । প্রতিবাদ করলেই তিনি তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে মারধর করতেন বলেও অভিযোগ ।
স্থানীয়দের তরফে জানা গিয়েছে, বহুবার স্বামী-স্ত্রীর এই অশান্তি মেটানোর চেষ্টা করেছিলেন পাড়ার লোকজন । কিন্ত তাতে কোনও সুরাহা হয়নি । বরং পারিবারিক 'কলহ' বেড়েই চলে । স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাতেও পারিবারিক অশান্তি চরমে উঠেছিল । অভিযোগ, এ দিন মদ খেয়ে স্ত্রীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান স্বামী । এর কিছুক্ষণ পরেই ঘটে এই অঘটন ।
স্থানীয় সূত্রে আরও খবর, এ দিন রাতে প্রতিবেশী এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তাঁর সাইকেল নিতে আসেন শুভঙ্করদের বাড়িতে । ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না মেলায় তিনি খবর দেন প্রতিবেশীদের । এরপরই ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলে ওই দু'জনের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়া যায় । খবর পেয়ে নৈহাটি থানার পুলিশ এসে ঘরের সিলিং থেকে ঝুলন্ত দেহ দুটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় । পরে নিথর দেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ।
এ দিকে, এই ঘটনা সামনে আসতেই সোমবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় নৈহাটির অরবিন্দপল্লি এলাকায় । ঘটনার কথা শুনে স্তম্ভিত পাড়ার লোকজন । রয়েছে থমথমে পরিবেশ । তবে মর্মান্তিক এই ঘটনার জন্য স্থানীয়দের একাংশ দুষেছেন প্রিয়াঙ্কার স্বামীকেই । কারণ তাঁর বদমেজাজি আচরণ এবং স্ত্রীকে নিয়মিত অত্যাচার কেউই পছন্দ করতেন না ।
এই বিষয়ে দেবাশিস অধিকারী নামে মৃত প্রিয়াঙ্কার এক আত্মীয় বলেন, "ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না । পরে জানতে পারি । প্রত্যেক সংসারেই কিছু না কিছু ঝগড়া অশান্তি লেগে রয়েছে । শুভঙ্করের সংসারেও সেরকম ছিল । তার জেরে এই ঘটনা কি না বলতে পারব না । সেটা পুলিশের তদন্তের ব্যাপার । ঘটনাটি শুনে অবাকই হয়েছি আমরা ৷"
অন্যদিকে, শুভঙ্কর যে নেশা করে প্রায়ই বাড়িতে অশান্তি করতেন, তা একপ্রকার মেনে নিয়েছেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও ।
আরও পড়ুন: