খানাকুল, 21 সেপ্টেম্বর: একটার পর একটা দুর্গা মূর্তি জলের তলায় তলিয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কোনও রকমে মূর্তিগুলি যদি বাঁচানো যায়। কিন্তু জলস্রোত সব চেষ্টাকে কার্যত বিফল করে দিচ্ছে। এমন অবস্থায় মৃৎশিল্পীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। অনেক আগে থেকেই দুর্গা, লক্ষ্মী এবং কালী প্রতীমা তাৈরির যে সমস্ত অর্ডার পেয়েছিলেন মৃৎশিল্পীরা, সেই মূর্তিগুলি এখন অধিকাংশই জলের তলায়। আপ্রাণ চেষ্টাতেও বিফল হয়েছে শিল্পীদের পরিশ্রম। মূর্তির করুণ দশায় চোখে জল প্রত্যেকের।
খানাকুল এখনও বন্যায় বিপর্যস্ত। একাধিক জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। করুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ আর গবাদি পশু একই সঙ্গে ত্রাণ শিবিরে বাস করছে। খানাকুলের মারোখানা পঞ্চায়েতের সুন্দরপুর গ্রামের বাবলু গায়েন এ বছর 6টি দুর্গা প্রতিমা এবং 25-30টি লক্ষ্মী ও কালী প্রতিমা তৈরি করছিলেন। বন্যায় সব মূর্তিগুলিই জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে। গোডাউনের বাইরে ভাসছে মূর্তির বিভিন্ন অংশ। চোখের জল বাঁধ মানছে না বাবলু গায়েনের। একই অবস্থা রাজহাটির কালীমাতা শিল্পায়নের মালিক বাবলু গায়েনেরও। খানাকুলের অধিকাংশ মূর্তি জলের তলায় তলিয়ে গিয়েছে।
বাবলু জানান, ঋণ নিয়ে তিনি মূর্তি তৈরি করেছিলেন। পুজোর সময়টাই একটু লাভের মুখ দেখেন তাঁরা। সব মিলিয়ে 30-35 টি মূর্তি বিক্রি হয়। প্রত্যেকের কাছ থেকেই কিছু টাকা অগ্রীম নেওয়া আছে। কিন্তু সব মূর্তি জলের তোড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কবে জল নামবে তার কিছুই জানা নেই তাঁদের।
বন্যার কারণে পুজো বন্ধ না হলেও জল কমলে নতুনভাবে মূর্তি কতগুলি তৈরি করতে পারবেন কি না, জানেন না তাঁরা। কীভাবে দেনা শোধ হবে তাও জানেন না। অন্যদিকে পুজো উদ্যোক্তাদেরও মাথায় হাত। হাতে আর সময়ও নেই। মূর্তির অভাবে অনেক পুজোই বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবার ৷ অপর এক মৃৎশিল্পী জগন্নাথ অধিকারী বলেন, "মূর্তি বাঁচানোর জন্য আমরা সমবেত হয়ে লড়াই চালাচ্ছি। কিন্তু প্রকৃতির কাছে সবাই অসহায়। প্রায় চার মাসের পরিশ্রম জলের তলায় চলে গিয়েছে। স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়েছি এখন কী হবে জানি না।" সরকার কি আদৌ তাঁদের পাশে দাঁড়াবে কি না, তাও জানেন না মৃৎশিল্পীরা ৷ আরও দাবি, সরকার ক্লাবকে অনুদান দেওয়ার আগে তাঁদের আর্থিক সাহায্য করুক।