বারাসত, 23 জানুয়ারি: নেতাজির স্বপ্নপূরণ করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ! সেই মতো সংঘের সেবকরা কাজও করে চলেছেন। নেতাজির 128তম জন্মজয়ন্তীর এক অনুষ্ঠানে উত্তর 24 পরগনার বারাসতে এসে এমনই মন্তব্য করেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।
তাঁর কথায়, "নেতাজি যে আধুনিক ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন কোথাও না কোথাও অধরা রয়ে গিয়েছে। নেতাজি মনে প্রাণে চাইতেন, ভারতবর্ষ একদিন উন্নত দেশ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলবে। তাঁর সেই মতের সঙ্গে মিল রয়েছে আরএসএস-এর। আমরা নেতাজির আধুনিক ভারত গড়ে তুলবই"।
মঙ্গলবার সুভাষচন্দ্র বসুর 128তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বারাসতের সত্যভারতী স্কুল মাঠে আরএসএসের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত। অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠেই তিনি প্রথমে নেতাজির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর একে একে সংগঠনের বিভিন্ন কার্যপ্রণালী আয়োজিত হয় সেখানে। যা সেই অনুষ্ঠানকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
এরপরই অনুষ্ঠান মঞ্চে দাঁড়িয়ে আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত দেশপ্রেমিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ এবং লড়াই সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন সঙ্ঘের সেবকদের সামনে। তিনি বলেন, "আমরা জানি নেতাজির স্বপ্ন অধরা রয়ে গিয়েছে।কিন্তু সেই স্বপ্ন কে পূরণ করবে? উনি জানতেন তাঁর স্বপ্ন একার পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। নেতাজির সেই অধরা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগোচ্ছি আমরা"। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান বেশকিছু উপমাও টেনে এনেছেন।
মোহন ভাগবতের মতে, "স্বাধীনতা পাওয়ার পরও আমাদের মনে এখনও অহংকার, স্বার্থপরতা রয়েছে। যা আগেও ছিল। সেই কারণে নেতাজির মতো আদর্শ ব্যক্তির মহানুভবতা মেনে চলা উচিত নতুন প্রজন্মকে। বিশেষ করে আজকের মতো মহান এই দিনে। নেতাজি দেশের জন্য যা যা করেছেন সেই গৌরবের বর্ণনা করব আমরা। দেশকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতাজি যে তপস্যা করেছিলেন সেই তপস্যা এবং আদর্শ স্মরণ করা উচিত সকলের"। শুধু তাই নয়, দেশ স্বাধীন করার ক্ষেত্রে নেতাজির আত্মত্যাগের কথাও এদিন উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবতের কথাতে।
তিনি জানান, যতদিন লক্ষ্যে পৌঁছব না, দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হবে না ততদিন প্রত্যেকের লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য এগিয়ে যেতে হবে। সেখানে ভোগ, বাসনা এসব কিছুই রাখলে চলবে না। নেতাজি যদি সম্পত্তি এবং সুখের কথা চিন্তা করতেন তাহলে তাঁর ভবিষ্যৎ ছিল উজ্জ্বল। অথচ তিনি সমস্তটাই ত্যাগ করেছিলেন শুধুমাত্র দেশের স্বার্থে। পাশাপাশি, জাতীয় কংগ্রেসে নেতাজির ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে আরএসএস প্রধান বলেন, "জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনের বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।"
তিনি আরও বলেন, "তাঁর জয়লাভের পর সেই সময় মহাত্মা গান্ধি বলেছিলেন, আমি জাতীয় কংগ্রেসের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করব। সেই পরিস্থিতিতে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে যাওয়ার মতো উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু মহাত্মা গান্ধির সামনে দাঁড়ানোর মতো সমস্ত যোগ্যতাই ছিল নেতাজির। তা সত্ত্বেও নেতাজি চিন্তা করলেন, এই পদত্যাগও কাজ করবে দেশের স্বার্থে। তাই দেরি না করে তিনি জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি পদের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন গান্ধিজির কাছে"। অন্যদিকে, রাজ্যের সাধারণ মানুষকে এদিন নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত।
আরও পড়ুন:
1. নেতাজির জন্মজয়ন্তীতে রাজ্য জুড়ে 'দেশপ্রেম দিবস' পালন বামেদের
2. নেতাজি-রহস্য উদঘাটন থেকে জাতীয় ছুটি, কেন্দ্রকে আক্রমণ মমতার
3. নববধূকে উপহার দিয়েছিলেন গরদের শাড়ি, বিশ্বাসদের বিশ্বাসে আজও 'জীবিত' নেতাজি