মালদা, 26 অগস্ট: আরজি করের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভের বারুদে সারা রাজ্য ৷ তার মধ্যেই মাদক খাইয়ে একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়াকে ধর্ষণ ও সেই ঘটনার ভিডিয়োগ্রাফি করার অভিযোগ উঠেছে মালদায় ৷ শুধু তাই নয়, ঘটনার ভিডিয়ো ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছে ৷
পুরো ঘটনা জানিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ছাত্রীর মা ৷ কিন্তু অভিযোগ দায়েরের 15 দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করায় শেষ পর্যন্ত পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি ৷ পুলিশ সুপার পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন ৷
ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার থানার একটি গ্রামে ৷ স্থানীয় একটি স্কুলে একাদশে পড়ে নির্যাতিতা ছাত্রী ৷ বাবা দিনমজুর ৷ মা-ও মজুরি করেন ৷ পুলিশ সুপারের কাছে দায়ের করা অভিযোগপত্রে তার মা জানিয়েছেন, গত 13 জুলাই বেলা সাড়ে 12টা নাগাদ পাশের গ্রামের এক যুবক কিছু দরকারি কাজের কথা বলে তাঁর মেয়েকে তাদের বাড়িতে ডাকে ৷ তাঁর মেয়ে ওই যুবকের বাড়ি গেলে সে তাঁর মেয়েকে শরবত খাওয়ায় ৷ ওই শরবতে কোনও মাদক মেশানো ছিল ৷ মেয়ে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে ওই যুবক তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে ৷ পুরো ঘটনা নিজের মোবাইল ফোনে ভিডিয়োগ্রাফি করে রাখে ৷
অভিযোগপত্রে নির্যাতিতার মা আরও জানিয়েছেন, মেয়েকে সে হুমকি দেয়, ঘটনার কথা কাউকে বললে সে সেই ভিডিয়ো ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেবে ৷ সেই ভয়ে মেয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেনি ৷ সেই সুযোগ নিয়ে ওই যুবক একাধিকবার তাঁর মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে ৷ শেষ পর্যন্ত গত 6 অগস্ট তাঁকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে মেয়ে ৷ সেদিনই সন্ধেয় তিনি ওই যুবকের বাড়ি গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান ৷
নির্যাতিতার মায়ের দাবি, ওই যুবক ও তার পরিবারের লোকজন প্রথমে টাকাপয়সা দিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চায় ৷ তিনি রাজি না হলে তারা তাঁর মেয়েকে দুশ্চরিত্রা অভিযোগ দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় ৷ সেই রাতে মেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ৷ সৌভাগ্যক্রমে তিনি দেখে ফেলায় মেয়ে বেঁচে যায়৷ পরদিন তিনি পুরো ঘটনা জানিয়ে ইংরেজবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷
তাঁর অভিযোগ, পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করলেও 21 অগস্ট পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ করেনি ৷ এদিকে অভিযুক্ত যুবক ও তার পরিবারের লোকজন বারবার তাঁকে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে ৷ অভিযোগ না তুললে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে ৷ বাধ্য হয়ে তিনি পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হলেন ৷
নির্যাতিতা ছাত্রীর বক্তব্য, “ছেলেটি প্রথমদিন আমাকে তার বাড়িতে ডাকে ৷ আমাকে বিয়ে করবে বলে ৷ তারপর পাশের একটা আমবাগানে নিয়ে গিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে ৷ তার ভিডিয়ো নিজের মোবাইলে তুলে রাখে ৷ ওই ভিডিয়োকে অস্ত্র করে সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে ৷ ওই ভিডিয়ো ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে দিনের পর দিন আমাকে ধর্ষণ করেছে ৷’’
সে আরও বলেন, ‘‘এই নিয়ে ইংরেজবাজার থানায় 7 তারিখ অভিযোগ দায়ের করা হয় ৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করা হয়নি ৷ শেষ পর্যন্ত আমরা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি ৷ তাতেই কাজ হয়েছে ৷ গতকাল পুলিশ গ্রামে এসেছিল ৷ আমি ছেলেটির কঠোর শাস্তি চাই ৷”
পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ৷ তবে অভিযুক্ত যুবক পলাতক ৷ তার খোঁজে তল্লাশি চলছে ৷”