মালদা, 20 জুলাই: মালদায় জাল দলিলচক্র রমরমা কারবারের সম্প্রতি প্রমাণ মিলেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে ৷ খোদ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এই চক্রের এক সদস্যকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন ৷ কিন্তু এই চক্রের শিকড় কি শুধুই ভূমি দফতরে ? অভিযোগ, এই চক্রের শিকড় রেজিস্ট্রি দফতরের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে ৷
সরকারি কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ ৷ এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ার খবরও মিলেছে ৷ জেলাশাসকের হুঁশিয়ারি, দুর্নীতি প্রমাণিত হলে যত বড় আধিকারিকই হোন না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে ৷ সম্প্রতি হরিশ্চন্দ্রপুর দুই নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জমি রেকর্ড করাতে গিয়ে পাঁচটি জাল দলিল-সহ এক যুবককে ধরে ফেলেন বিএলআরও সুরজিৎ দাস ৷ ওই যুবককে তিনি পুলিশের হাতে তুলে দেন ৷ ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি ৷
পাঁচটি জাল দলিল খতিয়ে দেখা যায়, সেখানে তুলসিহাটা রেজিস্ট্রি অফিসের সিল রয়েছে ৷ স্বাক্ষর রয়েছে সহকারী রেজিস্ট্রার (এডিএসআর) রমজান আলির ৷ জাল দলিলে তাঁর স্বাক্ষর এল কীভাবে ? দফতরের সিলই বা লাগাল কে ? সব বিষয়ে জানতে ইতিমধ্যে প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ সাধারণ মানুষ জানাচ্ছেন, জেলার কোনও রেজিস্ট্রি অফিসেই দালাল ছাড়া কাজ হয় না ৷ বিভিন্ন সময়ে নানা আছিলায় অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে ৷ অপ্রয়োজনে লেট ফি নেওয়া হচ্ছে ৷ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসবের রিসিপ্ট দেওয়া হচ্ছে না ৷ দালাল ধরলে মৃত ব্যক্তির নামেও দলিল হয়ে যাচ্ছে ৷ একজনের জমির দলিল অন্যজনের নামে বদলে যাচ্ছে ৷ রেজিস্ট্রি দফতরের কর্মী-আধিকারিকরা সব জানেন ৷ তাঁরাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছেন ৷ যদিও এসব নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন কেউ ৷ মুখ বন্ধ রমজান আলিরও ৷
তুলসিহাটা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, অফিসের হেড ক্লার্ক সফিকুল ইসলাম প্রায় আট বছর ধরে একই জায়গায় কাজ করছেন ৷ আরও অনেক কর্মী দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় কর্মরত ৷ জেলার অন্যান্য রেজিস্ট্রি অফিসগুলিতেও একই ছবি ৷ ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে ৷ শুক্রবার তুলসিহাটা রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় জালালপুর গ্রামের আবদুল রহমানকে ৷ তিনি বলেন, "জমি রেজিস্ট্রি করতে এসেছিলাম ৷ সকাল 11টায় এসেছি ৷ 12টার সময় দলিল জমা দিয়েছি ৷ এখন বলা হচ্ছে, কাজ হতে দেরি হবে ৷ আমি নিজে কাজ করাচ্ছি বলে দেরি হচ্ছে ৷ এখানে দালাল ছাড়া কোনও কাজ হয় না ৷ এখানে মুহুরিরাও ভীষণ ভুল করছে ৷"
যদিও মানুষের কোনও অভিযোগই মানতে রাজি নন ওই রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি ইউনিয়নের সম্পাদক মহম্মদ নাজিমুল ইসলাম ৷ তিনি বলেন, “পাঁচটি জাল দলিল ধরা পড়ার খবর পেয়েছি ৷ কে কীভাবে সেসব জাল করল, কীভাবে রেজিস্ট্রি হল তা আমাদের জানার কথা নয় ৷ তবে এমন ঘটনা খুব খারাপ ৷ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে ৷ এমনও হতে পারে, রেজিস্ট্রি অফিসের সিল আর অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে জাল দলিল বের করেছে ৷ তবে এসব ঘটনা যে ঘটছে তা অস্বীকার করা যাবে না ৷ এর বিরুদ্ধে আমরা মালদা জেলা সহ রাজ্যেও আন্দোলনে নেমেছি ৷”