কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: কলকাতা মেট্রো রেলের স্টেশনগুলিতে পরিষেবা পরিচালনার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে থাকে, তাঁরা হলেন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট বা সুপারভাইজার ৷ তাঁদের উপর পড়ছে বাড়তি কাজের চাপ ৷ কারণ, এবার দু’টি করে স্টেশন সামাল দেওয়ার দায়িত্ব পড়ছে সুপারভাইজারদের উপর ৷ আর সামনেই দুর্গাপুজো ৷ তারপর কালীপুজো এবং বছর শেষের উৎসব ৷ এই সময় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে মেট্রোতে ৷ তাই স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে দু’টি স্টেশন সামাল দিতে সুপারভাইজারদের হিমশিম খেতে হতে পারে ৷ এর ফলে যাত্রী পরিষেবা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ৷
কলকাতা মেট্রোর শুরুরদিন থেকেই নিয়ম ছিল যে, একটি স্টেশনের দায়িত্বে থাকবেন একজন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট বা সুপারভাইজার ৷ স্টেশন সুপারভাইজারের নিচে থাকেন শিফট ইনচার্জ বা স্টেশন মাস্টার ৷ এরপর রয়েছে কমার্শিয়াল সেকশন ৷ যার মধ্যে পড়ছে বুকিং কাউন্টার ও অন্যান্য পরিষেবা ৷ তবে, কর্মী সংকটের ফলে দু’টি স্টেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন স্টেশন সুপারভাইজারকে ৷ এর ফলে যেমন একজনের উপর বাড়তি কাজের বোঝা চাপছে ৷ তেমনই কর্মীদের মধ্যে মেট্রো কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভও বাড়ছে ৷
মেট্রো কর্মীরা জানাচ্ছেন, বিষয়টি মেট্রোর অভ্যন্তরীণ হলেও, এর সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত রয়েছে যাত্রী পরিষেবা এবং সুরক্ষার বিষয়টি ৷ কারণ, হঠাৎ করে যদি কোনও বিপত্তি ঘটে যায় কিংবা ট্রেন চলাচলে কোনও সমস্যা দেখা দেয় বা ট্র্যাক ফেলিওরের ফলে সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেন আটকে যায় ৷ সিগন্যাল বিভ্রাট দেখা দেয় অথবা যদি কোনও যাত্রী আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন, সেই ক্ষেত্রে সুপারকেই প্রথমে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে হয় ৷ সেই সময় যদি সুপারভাইজার অন্য কোনও স্টেশনে থাকেন, তাহলে সেখান থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে তাঁর অনেকটা সময় লেগে যাবে ৷ এতে বিলম্বিত হতে পারে পরিষেবা ৷ এমনকি যাত্রীদের নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হতে পারে ৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মেট্রো কর্মী জানান যে যাত্রী নিরাপত্তা মানে যে শুধুমাত্র দুর্ঘটনা এড়ানো তাই নয় বরং ট্রেন যাতে ঠিক সময় নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে সেটাও দেখা। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত জানান, যে প্রথম থেকে যেই নিয়ম চলে আসছিল এতদিন পরে এই নিয়ম বদল করা হল ৷ তাহলে কি মেট্রোয় কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে ? তিনি জানাচ্ছে, আসল বিষয়টি হল মেট্রোয় বিপুল সংখ্যায় শূন্য পদ তৈরি হয়েছে ৷ সেখানে কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়াও বন্ধ ৷
তাই বর্তমানে যে ক’জন স্টেশন সুপারভাইজার রয়েছেন, তাঁদের দিয়েই কাজ চালাচ্ছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ৷ এছাড়াও সুপারভাইজারদের মাসিক টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৷ অভিযোগ, এতটাই কাজের চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যে সম্প্রতি একজন স্টেশন সুপারভাইজার হৃদরোগে আক্রান্ত হন ৷ নয়া এই নিয়ম ব্লু লাইন ছাড়াও বাকি করিডোরের ক্ষেত্রেও চালু করা হয়েছে ৷ তবে যেহেতু ব্লু লাইনেই যাত্রী ভিড় সবচেয়ে বেশি থাকে, তাই এখানে অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্টেশন সুপারভাইজারদের ৷
এছাড়াও সামনেই দুর্গা পুজো ৷ তার আগে থেকেই ব্লু লাইনে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায় ৷ আর পুজোর দিনগুলিতেও আরও বাড়ে যাত্রীদের সংখ্যা ৷ এছাড়াও, বড়দিনে কিংবা শহরে কোনও রাজনৈতিক সমাবেশ থাকলে, তখনও বারে যাত্রী সংখ্যা ৷ সেই সব পরিস্থিতিতে একজন সুপারভাইজার এর পক্ষে দু’টি স্টেশন সামাল দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ওই নেতা ৷