ETV Bharat / state

মিশুকে ছিলেন ইয়েচুরি, রাজনৈতিক শত্রুকেও বন্ধু করে নিতেন; স্মৃতিচারণায় মহম্মদ সেলিম - SITARAM YECHURY - SITARAM YECHURY

Md Salim on Sitaram Yechury: মিশুকে ছিলেন ইয়েচুরি, রাজনৈতিক শত্রুকেও সহজেই বন্ধু করে ফেলতেন দেশের বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এভাবেই স্মৃতিচারণা করলেন মহম্মদ সেলিম ৷

Sitaram Yechury Demise
স্মৃতিচারণায় মহম্মদ সেলিম (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 12, 2024, 11:04 PM IST

কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর: সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বৃহস্পতিবার জীবনাবসান হয়েছে। ফুসফুসে গুরুতর সংক্রমণের জন্য নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল 72।

সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি পার্টির এই অসাধারণ নেতার জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। সিপিএম, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক তথা ইয়েচুরির দীর্ঘদিনের সহকর্মী মহম্মদ সেলিম স্মৃতিচারণায় একাধিক তথ্য সামনে এনেছেন ৷ একসঙ্গে সিনেমা দেখা, কবিতার আসরে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা কথাও তুলে ধরেন। যা আগামীতে ভাবাবে বলে দাবি করেছেন সেলিম।

বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে ইয়েচুরির স্মৃতিচারণায় সেলিম বলেন, "ছাত্র জীবন থেকে ইয়েচুরির সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। 1980-তে SFI-র মুম্বই কনফারেন্সে প্রথম আলাপ হয় ইয়েচুরির সঙ্গে। তারপর প্রায় 45 বছর তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা। ছাত্র সংগ্রাম এবং যুব আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন তিনি। আমাদের জেনারেশানে তিনি দার্শনিক ছিলেন। বন্ধু ছিলেন, পথপ্রদর্শক ছিলেন, সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি যে কাউকে সহজে বন্ধু করে নিতে পারতেন। এমনকী ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হলেও। গণতান্ত্রিক এবং সামাজিক আন্দোলনে নিয়ে ইয়েচুরির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইমারজেন্সি পিরিয়ডে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকেও পদত্যাগ পত্র নিজে হাতে দিয়েছিলেন ইয়েচুরি। সহজে গ্রহণ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি।"

সীতারাম ইয়েচুরি যেমন সিপিএম-র সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন, তেমনই দেশের বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। মতাদর্শগতভাবে সমৃদ্ধ সীতারাম ইয়েচুরি কঠিন পরিস্থিতিতে পার্টির মতাদর্শগত অবস্থান নির্ণয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সীতারাম ইয়েচুরি ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আজীবন ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা, সাধারণতন্ত্রের মূল্যবোধ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং বহুত্ববাদী সমাজ গঠনের লড়াইয়ে অন্যতম সেনাপতির ভূমিকা পালন করেছেন। বাম, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সমবেত করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি একটানা ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছেও তিনি সম্ভ্রমের আসনে ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের পার্টি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ইয়েচুরির সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গে তিনি ভূমিকা পালন করেছেন। এ রাজ্যের পার্টি বারবার তাঁর পরামর্শে উপকৃত হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বারবার তিনি বলতেন, "বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন পুনরায় শক্তি অর্জন করতে না পারলে সারা ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন কখনওই এগতে পারবে না।" পশ্চিমবঙ্গ থেকেই 2005 থেকে 2017 পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। সাংসদ হিসাবেও তাঁর ভূমিকা গোটা দেশের নজর কেড়েছে। ইয়েচুরি বাংলা ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন। যখন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে, সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধকে রক্ষার সংগ্রাম চলছে তখন ইয়েচুরির জীবনাবসান একটি বড় আঘাত। সমগ্র পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে, দৃঢ়তার সঙ্গে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে হবে।

প্রতিভাবান ছাত্র সীতারাম ইয়েচুরি অর্থনীতির স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানেই তিনি ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। জরুরী অবস্থার সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জেএনইউ ছাত্র সংসদে তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন 1984 থেকে 1986 পর্যন্ত। 1975 সালে তিনি সিপিএম-র সদস্যপদ অর্জন করেন। 1985 সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। 1992 সালে তিনি পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। 2015 সালে পার্টির 21-তম কংগ্রেস থেকে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কলকাতা, 12 সেপ্টেম্বর: সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বৃহস্পতিবার জীবনাবসান হয়েছে। ফুসফুসে গুরুতর সংক্রমণের জন্য নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। সেখানেই বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল 72।

সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি পার্টির এই অসাধারণ নেতার জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। সিপিএম, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক তথা ইয়েচুরির দীর্ঘদিনের সহকর্মী মহম্মদ সেলিম স্মৃতিচারণায় একাধিক তথ্য সামনে এনেছেন ৷ একসঙ্গে সিনেমা দেখা, কবিতার আসরে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা কথাও তুলে ধরেন। যা আগামীতে ভাবাবে বলে দাবি করেছেন সেলিম।

বৃহস্পতিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে ইয়েচুরির স্মৃতিচারণায় সেলিম বলেন, "ছাত্র জীবন থেকে ইয়েচুরির সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। 1980-তে SFI-র মুম্বই কনফারেন্সে প্রথম আলাপ হয় ইয়েচুরির সঙ্গে। তারপর প্রায় 45 বছর তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা। ছাত্র সংগ্রাম এবং যুব আন্দোলনের নেতৃত্বে দিয়েছিলেন তিনি। আমাদের জেনারেশানে তিনি দার্শনিক ছিলেন। বন্ধু ছিলেন, পথপ্রদর্শক ছিলেন, সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি যে কাউকে সহজে বন্ধু করে নিতে পারতেন। এমনকী ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের হলেও। গণতান্ত্রিক এবং সামাজিক আন্দোলনে নিয়ে ইয়েচুরির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইমারজেন্সি পিরিয়ডে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন চ্যান্সেলর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকেও পদত্যাগ পত্র নিজে হাতে দিয়েছিলেন ইয়েচুরি। সহজে গ্রহণ করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি।"

সীতারাম ইয়েচুরি যেমন সিপিএম-র সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন, তেমনই দেশের বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। মতাদর্শগতভাবে সমৃদ্ধ সীতারাম ইয়েচুরি কঠিন পরিস্থিতিতে পার্টির মতাদর্শগত অবস্থান নির্ণয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সীতারাম ইয়েচুরি ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আজীবন ভূমিকা পালনের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা, সাধারণতন্ত্রের মূল্যবোধ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং বহুত্ববাদী সমাজ গঠনের লড়াইয়ে অন্যতম সেনাপতির ভূমিকা পালন করেছেন। বাম, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সমবেত করে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি একটানা ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছেও তিনি সম্ভ্রমের আসনে ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের পার্টি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে ইয়েচুরির সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গে তিনি ভূমিকা পালন করেছেন। এ রাজ্যের পার্টি বারবার তাঁর পরামর্শে উপকৃত হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে বারবার তিনি বলতেন, "বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন পুনরায় শক্তি অর্জন করতে না পারলে সারা ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন কখনওই এগতে পারবে না।" পশ্চিমবঙ্গ থেকেই 2005 থেকে 2017 পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। সাংসদ হিসাবেও তাঁর ভূমিকা গোটা দেশের নজর কেড়েছে। ইয়েচুরি বাংলা ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন। যখন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে, সংবিধানের মৌলিক মূল্যবোধকে রক্ষার সংগ্রাম চলছে তখন ইয়েচুরির জীবনাবসান একটি বড় আঘাত। সমগ্র পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে, দৃঢ়তার সঙ্গে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে হবে।

প্রতিভাবান ছাত্র সীতারাম ইয়েচুরি অর্থনীতির স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানেই তিনি ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। জরুরী অবস্থার সময়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জেএনইউ ছাত্র সংসদে তিনবার সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন 1984 থেকে 1986 পর্যন্ত। 1975 সালে তিনি সিপিএম-র সদস্যপদ অর্জন করেন। 1985 সালে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচিত হন। 1992 সালে তিনি পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। 2015 সালে পার্টির 21-তম কংগ্রেস থেকে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.